অসমে পঞ্চায়েন নির্বাচনে অসম মজুরি শ্রমিক ইউনিয়নের মেনিফেস্টো
Posted by Labels: পঞ্চায়েত নির্বাচন, বরাক উপত্যকা
সুধী নাগরিকবৃন্দ,
আমরা সামাজিক সংগঠন হয়েও নির্বাচনে
অংশগ্রহণ করছি। কেন? কারণ আমরা চাই পঞ্চায়েত হয়ে উঠুক গ্রামীণ মানুষের অধিকার
প্রতিষ্ঠার হাতিয়ার। তথাকথিত রাজনৈতিক দলগুলি চায় পঞ্চায়েতকে দালাল তৈরির কারখানা
হিসেবে ব্যবহার করতে। আমরা চাই নতুন সামাজিক রাজনীতি যেখানে নির্বাচিত প্রার্থী
ভোটারদের মতামত মেনে চলবে, ওরা চায় নির্বাচনের পর মুষ্টিমেয় প্রভাব-প্রতিপত্তিশালী
লোকের কাছে সাধারণ ভোটাররা যেন পদানত থাকে। আমরা চাই পঞ্চায়েতের হাতে অধিক ক্ষমতা –
শক্তিশালী গ্রামসভা, ওরা চায় ডিআরডিএ-ব্লক ইত্যাদি মারফত মন্ত্রী-আমলাদের ক্ষমতার
মাধ্যমে পঞ্চায়েতকে, ব্যবহার করে হরির লুঠ চালিয়ে যেতে। তাই আইনানুগ গেজেট নোটিফিকেশন
হওয়া সত্ত্বেও ২৯টি বিভাগের ক্ষমতা পঞ্চায়েতের হাতে বাস্তবে দেওয়া হয় না –
গ্রামসভাকে সুকৌশলে বানচাল করে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। ইউনিয়ন তথাকথিত রাজনৈতিক নেতা ও কতিপয় আমলাদের এই জনবিরোধী ভূমিকার বিরুদ্ধে বিগত বছরগুলিতে লাগাতার সংগ্রাম চালিয়ে আসছে এবং অনেকক্ষেত্রে সফলতাও লাভ করেছে। এই আন্দোলনকে আরও জোরদার করতে এই পঞ্চায়েত নির্বাচনে আমরা অংশগ্রহণ করছি।
বন্ধুগণ, এবারের পঞ্চায়েত
নির্বাচন এমন একটা সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে যখন আসাম তথা ভারতবর্ষে এক অস্থির
পরিস্থিতি বিরাজ করছে। কৃষক-শ্রমিক-মহিলা-নিপীড়িত-বঞ্চিত
জনগোষ্ঠী এমনকী মধ্যবিত্ত সহ বিভিন্ন স্তরের মানুষ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে
বিক্ষোভে ফেটে পড়ছেন, ঠিক তেমনি আসামের জাতি-নির্মূলীকরণের ঘৃণ্য রাজনীতির বলি
হচ্ছেন লাখ লাখ ধর্মীয়-ভাষিক সংখ্যালঘু মানুষ। এই অস্থির পরিস্থিতির জন্য দায়ী
রঙ-বেরঙের শাসক দলগুলির নীতি ও চক্রান্ত। কারণ, সরকারী জনবিরোধী নীতির ফলেই ধনী ও
দরিদ্রের ব্যবধান দিন দিন বেড়েই চলেছে। বিগত কংগ্রেস-বিজেপির শাসনকালে আমাদের
দেশের আরবপতির (একশত শতকোটি টাকার মালিক) সংখ্যা যেখানে জাপান-চীনের মত দেশের
সংখ্যাকেও ছাড়িয়ে গেছে, সেখানে প্রতি ১০০ জনের মধ্যে প্রায় ৮০ জনের দৈনিক ব্যয় গড়ে
মাত্র ২০ টাকা অর্থাৎ তাদের দুবেলা দুমুঠো খাবার জোটাতে মাথার ঘাম পায়ে ফেলতে হয়। নিম্ন
আসামের মত ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের উদবাস্তু শিবিরে আশ্রয় নেওয়া উচ্ছেদ হওয়া
মানুষের দুরবস্থার ও হাজার হাজার কৃষকের আত্মহত্যার করুণ কাহিনী আমাদেরকে পীড়া
দেয়। এরকম দুর্বিষহ পরিস্থিতিতেও সরকার নিত্য-প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে
চলেছে। তাই মানুষ আজ দিকে দিকে এই অপশাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করছে। এই সব বিদ্রোহকে এক নতুন দিশা দেখাতে, গ্রামীণ মানুষ-শ্রমিক-কৃষক-নিপীড়িত জনগোষ্ঠী-ছাত্র-যুব ও মহিলাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এক নতুন সামাজিক রাজনীতির জন্ম দিতেই অসম মজুরি শ্রমিক ইউনিয়ন এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে।
বন্ধুগণ, অনেকেই আশা
করেছিলেন যে অন্ততঃ ভাষিক-ধর্মীয় অধিকারের প্রশ্নে এআইইউডিএফ দল এক সামাজিক
রাজনীতির জন্ম দেবে। কিন্তু অনেকেই এখন আশাহত হতে শুরু করেছেন। অনেকেই জানেন যে নিম্ন
আসামের ধুবড়ি জেলার ভাসান চরের মৌলানা আব্দুল হামিদ খান ভাষিক-ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও
শ্রমিক-কৃষকের এক ব্যতিক্রমী নেতা হিসেবে ‘মৌলানা ভাসানি’ নামে জনপ্রিয় ছিলেন।
কৃষক-মেহনতি মানুষ-ভাষিক-ধর্মীয় সংখ্যালঘু দরদি নেতা ও নিপীড়িত মানুষের চোখের মণি
মৌলানা ভাসানির বিধানসভার ভেতরে ও বাইরে আপসহীন সংগ্রামী ঐতিহ্যের ধারা এআইইউডিএফের
মধ্যে অনুপস্থিত। ধর্মীয় অনুশীলনে দরিদ্র মানুষের কাছের লোক ও জুলুম-জালিমের
বিরুদ্ধে নিরলস জেহাদি মৌলানা ভাসানির গণতান্ত্রিক-ধর্মনিরপেক্ষ-মেহনতি মানুষের
পক্ষে নিরলস আপসহীন সংগ্রামের ফলেই কংগ্রেস সরকার তাকে বারবার জেলে পুড়ে ফেলে।
দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের নীতিতে আকৃষ্ট হয়ে স্বরাজ্য
পার্টির একনিষ্ঠ কর্মী হিসেবে রাজনীতি শুরু করে পরবর্তীতে মৌলানা ভাসানি নিপীড়িত
মানুষের অবিসংবাদিত নেতা হয়ে উঠেন এবং আসামে ও তৎকালীন পাকিস্তানে শাসকদের
বিরুদ্ধে এক সামাজিক-রাজনীতির জন্ম দেন। বাঙালি জাতির নিজের লড়াই নিজে লড়ার পক্ষে এবং
কৃষক আন্দোলনের পক্ষে ওকালতি করায় তাঁকে এমনকী ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী
ইন্দিরা গান্ধীরও কোপের মুখে পড়তে হয়। নিম্ন আসামে সংখ্যালঘু মানুষের অধিকারের
জন্য মৌলানা ভাসানির আপোসহীন লড়াই’র কোন বৈশিষ্ট্যই আমরা এআইইউডিএফ দলের মধ্যে
দেখতে পাচ্ছি না। ধনী-ক্ষমতাবান ও কংগ্রেসি মার্কা রাজনীতির লক্ষণ এআইইউডিএফের মধ্যে বেড়েই চলেছে। তথাপি যেসব পঞ্চায়েতে অসম মজুরি শ্রমিক ইউনিয়ন মনোনীত ও সমর্থিত প্রার্থী নেই, সেখানে কংগ্রেস-বিজেপি বিরোধী শক্তিশালী প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার জন্য আমরা আহ্বান জানাচ্ছি।
বন্ধুগণ,অসম মজুরি শ্রমিক ইউনিয়ন জনজাতীয়দের তপসিলিকরণ, মুসলিম ফিসারম্যান – কিরাণ ইত্যাদি পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য বিশেষ সুবিধা, রঙ্গনাথ মিশ্র কমিশনের সুপারিশ কার্যকরী করা ও ভাষিক – ধর্মীয় সংখ্যালঘু তথা প্রতিটি জনগোষ্ঠীর জনসংখ্যা অনুপাতে সংরক্ষণ কার্যকরী করা ইত্যাদি দাবিতে দীর্ঘদিন থেকে আন্দোলন চালিয়ে আসছে এবং এই নির্বাচনী প্রচারেও এগুলিকে প্রাধান্য দিচ্ছে। পঞ্চায়েত নির্বাচনে ইউনিয়ন প্রার্থীদের জয়যুক্ত করলে এই অন্দোলন আরও শক্তিশালী হবে।
বন্ধুগণ, সরকার বড় বড় দেশি-বিদেশি কোম্পানী মালিকদের যখন সরকারী অর্থ ব্যয় করে বিভিন্ন ধরনের ছাড় দিচ্ছে, তখন সমস্ত ভর্তুকি উঠিয়ে দিয়ে আম-জনতার ঘাড়ে বোঝা চাপিয়ে দেওয়ার নীতি নিয়েছে। বিদেশি বহুজাতিক কোম্পানীদের সেবা করতে গিয়ে কংগ্রেসি সরকার খুচরা ব্যবসায় বিদেশি বিনিয়োগের ছাড় দিচ্ছে যাতে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরাও বিপদাপন্ন হচ্ছে, নগদ অর্থে সাবসিডি প্রদানের প্রকল্প চালু করে কংগ্রেস সরকার আসলে একদিকে দরিদ্র শ্রমজীবী মানুষের জন্য সাবসিডি’র পরিমাণ কমিয়ে দেওয়ার চক্রান্ত করছে এবং অন্যদিকে সমাজের দুর্বল অংশ বিশেষ করে মহিলাদের ও শিশুদের বঞ্চিত করে সমাজকে পঙ্গু করে দেওয়ার নীতি নিয়েছে। তাই সরকারের বিভিন্ন জনবিরোধী নীতির বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন ভাবে মানুষ বিদ্রোহ করছে। এতে শাসকরা খানিকটা ভয় পেয়েছে। তাই মানুষকে সন্তুষ্ট করতে এনরেগা, খাদ্য সুরক্ষা বিল, ইন্দিরা আবাস, আইসিডিএস, মিড ডে মিল, বিভিন্ন ধরনের ভাতার মত কিছু জনমুখী প্রকল্প মানুষের সামনে হাজির করেছে সরকার। কিন্তু প্রথমত প্রয়োজনের তুলনায় এগুলি অত্যন্ত নগণ্য, দ্বিতীয়ত এমনভাবে এগুলির নিয়ম বানানো হয়েছে যে প্রকৃত দরিদ্র মানুষকে এর থেকে বঞ্চিত করার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে এই যে পঞ্চায়েত ও গ্রামসভাকে শক্তিশালী করে যদি গ্রামীণ মানুষের ক্ষমতায়ন করা না হয়, তাহলে দালাল আমলা-রাজনীতিবিদরাই বরাদ্দকৃত অর্থ লুটেপুটে খাবে। সুতরাং এই পরিপ্রেক্ষিতে অসম মজুরি শ্রমিক ইউনিয়ন এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে উপরোক্ত বিষয় ছাড়াও যে বিষয়গুলিকে সামনে রাখছে সেগুলি হল - (১) প্রকল্প রূপায়ণে দুর্নীতি দূর করা (২) পঞ্চায়েতের হাতে অধিক ক্ষমতা ও ওয়ার্ডভিত্তিক গ্রামসভাকে শক্তিশালী করা (৩) এনরেগায় বছরে ২০০ দিনের কাজ ও ২৪০ টাকা হাজিরা প্রদান (৪) আইসিডিএস, বিভিন্ন ধরনের ভাতা, ইন্দিরা আবাস, বিপিএল তালিকায় হিতাধিকারী নির্বাচনে গ্রামসভাকে সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদান (৫) সর্বজনীন রেশনিং ব্যবস্থা চালু করা (৬) গ্রামীণ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ, পানীয় জল ও যোগাযোগের সুবন্দোবস্ত করা (৭) জমির পাট্টা ও ভূমিহীনদের ভূমি প্রদান। (৮) সাচার রিপোর্টের ভিত্তিতে সংখ্যালঘুদের জন্য এমএসডিপি’র সঠিক রূপায়ণ সুনিশ্চিত করা ও রঙ্গনাথ মিশ্র কমিশন রিপোর্ট কার্যকরী করা।
তাই আমাদের আহ্বান দুর্নীতিমুক্ত - শক্তিশালী পঞ্চায়েত ও গ্রামসভা এবং গ্রামীণ মানুষের অধিকারের জন্য
আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে অসম মজুরি শ্রমিক ইউনিয়নের মনোনীত ও সমর্থিত প্রার্থীদের ভোট দিন
আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে অসম মজুরি শ্রমিক ইউনিয়নের মনোনীত ও সমর্থিত প্রার্থীদের ভোট দিন
ইউনিয়নের পক্ষে নির্মল কুমার দাস, শিশির দে, আলতাফ খান,
পারভেজ খচরু লস্কর, দক্ষিণা মোহন দাস, ধরিত্রী শর্মা ও মানস দাস কর্তৃক
প্রচারিত ও শিলচর সানগ্রাফিকস হইতে মুদ্রিত