শাহবাগ বিদ্রোহ ও সংখ্যালঘু সুরক্ষা / বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের এক নয়া মোড় নেবে।
Posted by Labels: people's initiative, Politics, সংখ্যালঘু
(এই লেখাটি স্থানীয় পত্রিকা দৈনিক সাময়িক প্রসঙ্গ ও দৈনিক যুগশঙ্খে প্রকাশিত হয়েছে )
স্থানীয় পত্র-পত্রিকায় বাংলাদেশের শাহবাগ-চত্বরের গণ-বিক্ষোভ এবং তৎপরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে প্রকাশিত বিভিন্ন মতামতের পরিপ্রেক্ষিতে এই সংক্ষিপ্ত লেখা। মূল প্রসঙ্গে যাওয়ার আগে যে কোন ঘটনা দেখার সমস্যা সম্পর্কে কিছু কথা বলে নেওয়া যাক। গ্রহণযোগ্যতার সুবিধার্থে অমর্ত্য সেনের দেওয়া একটি উদাহরণ দিয়ে শুরু করছি। পৃথিবী থেকে সব পর্যবেক্ষকের কাছে সূর্য ও পূর্ণ-চন্দ্রের আকার সমান মনে হয়। ‘গ্রহণ’ বোঝার জন্য এই পর্যবেক্ষণই যথেস্ট, কিন্তু দূর-গ্রহে অন্তরিক্ষযান পাঠানোর জন্য মাধ্যাকর্ষণ শক্তি নির্ধারণে আমাদের আকৃতিগত পার্থক্য খেয়াল রাখতে হয়। অর্থাৎ ভিন্ন ভিন্ন অবস্থান থেকে (মানসিক ও স্থানিক) বিভিন্ন পর্যবেক্ষক একই ঘটনাকে বিভিন্নভাবে পরিবেশন করেন। আবার সম্পূর্ণ অবস্থান নিরপেক্ষ অর্থাৎ ঘটনার স্থান-কালের একেবারে বাইরে থেকেও পর্যবেক্ষণ হতে পারে। এই মানদণ্ডে বিচার করলে বাংলাদেশ নিয়ে প্রকাশিত মন্তব্যগুলির আমরা কয়েকটি প্রকারভেদ করতে পারি। এক, হিন্দুত্ব্ববাদী পর্যবেক্ষণ যা সম্ভবত অবস্থান নিরপেক্ষ – অর্থাৎ স্থান-কালের ভিন্নতায় যেখানে যাই ঘটুক না কেন পর্যবেক্ষণের সিদ্ধান্ত পূর্ব-নির্ধারিত। এইধরনের ধর্মবাদী পর্যবেক্ষকরা সব সমস্যার সমাধান খোঁজেন কল্পিত অতীতের মাহাত্ম্য ও আইনের কঠোরতার মাধ্যমে এক শক্তিশালী নির্মম অথচ আধুনিক রাষ্ট্রের মধ্যে। দুই, পরাজিত বাম-মানসিকতার পর্যবেক্ষণ যেখানে পর্যবেক্ষকদের সমাজ-পরিবর্তনের এক সুপ্ত আকাঙ্খা রয়েছে কিন্তু এর প্রতি আস্থার অভাবে নিজেরা নিষ্ক্রিয়। ফলে এই ধরনের পর্যবেক্ষকরা নিজেদের সুপ্ত বাসনা পূর্ণ হওয়ার কোন সম্ভাবনা দেখতে পেলে একপেশে হয়ে পড়েন এবং ফলে যতই আপ্তবাক্যের আড়ালে নিজেদের মনোবাসনা ব্যক্ত করুন না কেন শেষবিচারে তারাও পরিবর্তন বিরোধী শক্তির ক্রিড়নকে পরিণত হন। তিন, এই দুই পর্যবেক্ষকদের অর্ধসত্য আক্রমণের চাপে অনেক সাধারণ পর্যবেক্ষক নিজেদেরকে উপরুক্ত দুই শিবির যে অবস্থান নেবে তার একেবারে বিপরীত অবস্থান নেওয়ার জন্য তৈরি হয়ে যান। তাহলে কী সত্য জানার কোন উপায় নেই? এটা দুর্ভাগ্যজনক যে সত্য জানার জন্য দ্বন্দ্বতত্বের মত মোক্ষম অস্ত্রটি শাণিত করার কাজ পরাজিত বাম-সৈনিকেরা ছেড়ে দিয়েছেন। অথচ সমাজ-পরিবর্তনের জন্য সভ্যতা ও বর্বরতার মধ্যেকার লড়াইয়ে আমাদের এপথে সক্রিয় অংশগ্রহণ ছাড়া অন্য আর কোন পথ খোলা আছে বলে আমার মনে হয় না। মুখবন্ধে এই কথাগুলি বলে মূল প্রসঙ্গে আসা যাক।
বাংলাদেশের বাম-বুদ্ধিজীবী বদরুদ্দিন উমর
সঠিকভাবে মন্তব্য করেছেন যে শাহবাগ বিক্ষোভ ছিল প্রাথমিক অবস্থায় অপশাসন ও
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে লিগ-জামাত আঁতাত ও প্রহসনের বিরুদ্ধে। কিন্তু পরবর্তীতে
এই বিক্ষোভ জন-বিচ্ছিন্ন আওয়ামী লিগের নির্বাচনী মহড়া হিসেবে রূপান্তরিত হয়। এই
রূপান্তরণ ঘটে অতি দ্রুত এবং ফলে গণতান্ত্রিক ব্যক্তি ও সংগঠন এবং গণতন্ত্রের
অন্তর্বস্তুকে সুনিশ্চিত করার প্রয়োজনীয় শক্তি ‘মেহনতি মানুষের’ অংশগ্রহণের
মাধ্যমে দাবিসনদের গণতান্ত্রিকীকরণের কোন সুযোগ ঘটেনি। ফাঁসির মত অগণতান্ত্রিক এবং
ক্যামুর ভাষায় ‘রাষ্ট্রের দ্বারা হত্যার’ দাবিকে সামনে রেখে লিগ এই বিক্ষোভকারীদের
আত্মস্থ করে ফেলে এবং ফলে পরবর্তীতে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তায় এবং সরকারী মদতে আয়োজিত
‘লজিস্টিক সাপোর্ট’ নিয়ে শাহবাগ চত্বরের জমায়েতকে বজায় রাখতে হয়। তেহরির স্কোয়ারের
সাথে তুলনা করলেই (যদিও তুলনামূলক বিচার সবক্ষেত্রে কার্যকরী পদ্ধতি নয়) এই দ্রুত
রূপান্তরণের রহস্যটা বোঝা যায়। মিশরের তেহরির স্কোয়ারে আমরা গ্রাম-গ্রামান্তর থেকে
লাখো মেহনতি মানুষকে ধীর্ঘ পথ পায়ে হেঁটে এসে অংশগ্রহণ করতে দেখেছি, তাদেরকে
রাষ্ট্রীয় বাহিনীর প্রতিরোধের সম্মুখীন হতে দেখেছি এবং তাদের মূল দাবি ছিল
রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিকীকরণ। অন্যদিকে শাহবাগে অংশগ্রহণকারীরা ছিল সাইবার-কম্যুনিটি
ও প্রফেশন্যাল ক্লাস। আজকের বিশ্বায়নের চাপে এই প্রফেশন্যাল ক্লাসের আমূল-পরিবর্তনকামী
হয়ে ওঠার যথেস্ট সম্ভাবনা থাকলেও একটি গণতান্ত্রিক কর্মসূচী ও গ্রামীণ মেহনতি
মানুষের অংশগ্রহণ ছাড়া তাদের এই পরিবর্তন সম্ভব নয়। ইউরোপীয়ান বয়ানে ‘সুশীল সমাজ’
বলতে আমরা যাদেরকে বুঝি ভারত-বাংলাদেশের
মত দেশে এই শিক্ষিত বুদ্ধিজীবী শ্রেণির স্বাধীন ভূমিকা পালনের ক্ষমতা সীমিত, কারণ
তাদের গরিষ্ঠাংশই সরকারী প্রতিষ্ঠানসমূহের ছুঁড়ে দেওয়া বিভিন্ন সুযোগ ও প্রলোভনের
উপর নির্ভরশীল। শাহবাগের যে মূল দাবি তাকে এবং সেই দাবিপূরণের হুকুম জারি করে এই
বিক্ষোভকারীদের আত্মস্থ করে নিতে শাসকীয় জোটের বিশেষ বেগ পেতে হয়নি। অন্যদিকে
বর্তমানের মাত্র দুইজন নির্বাচিত প্রতিনিধি নিয়ে জামাতে ইসলামীর দুর্বল গণভিত্তির
সাথে আঁতাত করেও নির্বাচনী লড়াইয়ে সুবিধে পাওয়া যায় এবং ফলে বিএনপি ও লিগ দুই
শিবিরেরই জামাত প্রশ্নে একটি রণকৌশল নিতে হয়। শাহবাগ বিক্ষোভ ও জামাতের ভূমিকাকে
মাথায় রেখে এবং আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে এই দুই শিবির রণকৌশল নির্ধারণ করতে
শুরু করে। অভ্যন্তরীণ এই টানাপোড়েনের সাথে যুক্ত হয়েছে বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগের
প্রশ্ন। বিভিন্ন দেশের বড় পুঁজিপতিরা তাদের বিনিয়োগ ও মুনাফাকে সুরক্ষিত করতে
তাদের নিজেদের রাষ্ট্রের মাধ্যমে এই টানাপোড়েনে তাদের ভূমিকা নির্ধারণ করছে যাতে নির্বাচন-উত্তর বাংলাদেশ সরকারের উপর তাদের
আধিপত্য সুনিশ্চিত করা যায়। এই গোটা খেলায় ভাষা-ধর্মের মত সাংস্কৃতিক সূচকগুলিকে
উগ্রভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে এবং এই খেলায় বাজি ধরা হয়েছে শ্রমিক-কৃষক-মেহনতি মানুষ, বিভিন্ন নিপীড়িত
জনগোষ্ঠী এবং শাহবাগের বিক্ষোভকারী সহ বাংলাদেশী আম-জনতার দুর্ভাগ্যের উপর।
তার মানে কী শাহবাগের বিদ্রোহ বিফলে গেল? সেটা নির্ভর করবে সংগঠিত গণতান্ত্রিক শক্তি কী ভূমিকা নেয় তার উপর। আমার ধারণা এই বিক্ষোভ থেকে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের এক নয়া মোড় নেবে। আমার এই আশাবাদের কী কারণ? বাংলাদেশের সব শিবিরেই ফ্যাসিস্ট মতাদর্শের লোকদের সমাগম থাকলেও বাংলাদেশের বাস্তব মাটিতে তাদের মতাদর্শ গ্রহণযোগ্য করে তোলা এতো সহজ নয়। অন্য ভাষা-ধর্মের প্রতি বিদ্বেষ বা তাদের অধিকার অস্বীকার করা এবং ধর্মীয় আচার-আচরণের প্রতি বিদ্বেষ উভয়ই ফ্যাসিস্ট মতাদর্শের লক্ষণ এবং এই মতাদর্শের বিরুদ্ধে লড়াই বহু আঁকাবাঁকা পথের মধ্য দিয়ে দীর্ঘকালব্যাপী চলবে। কিন্তু এই মতাদর্শ যদি একটি ফ্যাসিস্ট শক্তি হয়ে উঠে তাহলে লড়াইটা হবে মুখোমুখি ও আশু কর্মসূচী। সাধারণ নাগরিকদের উপর অত্যাচারের মাত্রা দিয়ে ফ্যাসিস্ট শক্তির বিচার হয় না – কারণ একাজ তথাকথিত গণতন্ত্রের আড়ালেও চলতে পারে। এটা নির্ধারিত হয় এই লক্ষণ দিয়ে যেখানে শাসকশ্রেণির একাংশ অপর অংশকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার মত ক্ষমতা অর্জন করেছে এবং রাষ্ট্র-ক্ষমতা নিরঙ্কুশ কুক্ষিগত করার জন্য সাংস্কৃতিক সূচককে ব্যবহার করে বৃহৎ জন-সমর্থনও আদায় করে নিয়েছে। বাংলাদেশে এই ফ্যাসিস্ট শক্তির উত্থান (তা ভাষা-ধর্ম ইত্যাদি যে কোন সাংস্কৃতিক সূচককে ব্যবহার করেই হোক না কেন) খুব সহজ নয়। কারণ বিশ্বায়নের আর্থিক শক্তি এখনই নির্বাচনী গণতন্ত্রকে বাতিল করতে চাইবে না, বাংলাদেশ লিবার্যাল ইসলামের দেশ, বাংলাদেশের ভাষা-জাতিয়তাবাদ সামগ্রিকভাবে আগ্রাসী রূপ পরিগ্রহ করেনি – বরঞ্চ একাত্তরের ত্যাগের এক ঐতিহ্য রয়েছে। বাংলাদেশের মানুষের বিক্ষোভকে সরকার আত্মস্থ করতে পেরেছে বলে মনে হয় না, কারণ ফাঁসির দাবি মেনে নেওয়ার বাইরে মানুষ আর কিছুই পায়নি। সুতরাং এই বিক্ষোভকারীদের কোন সত্যিকার গণতান্ত্রিক বিষয়ে আবার সমাবেশিত হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। তারজন্য গণতান্ত্রিক সংগঠকদের এক কঠিন প্রস্তুতি চালাতে হবে। অযথা আংশিক পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করে মানুষকে বিভ্রান্ত করার ও হওয়ার সুযোগ তৈরি করা থেকে বিরত থাকতে হবে। বাংলাদেশের মানুষ ইতিমধ্যে গণতান্ত্রিক আন্দোলন গড়ে তোলার সামূহিক ইচ্ছা ব্যক্ত করতে শুরু করেছে। শাহবাগ ব্যর্থ হলেও মানুষের ইচ্ছার প্রকাশ ঘটিয়েছে, বাংলাদেশে প্রাকৃতিক সম্পদের অধিকারের প্রশ্ন নিয়ে দেশব্যাপী ধর্মঘটের মাধ্যমে এক সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী চেতনা জাগ্রত হয়েছে, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শিল্পদ্যোগ বস্ত্রশিল্পে শ্রমিক আন্দোলনের মাধ্যমে শ্রমিক শ্রেণিও সংগ্রামের কসরত শুরু করে দিয়েছে। এমতাবস্থায় শুধুমাত্র অর্থনৈতিক উন্নয়নের সূচকের মাধ্যমে আধুনিক জাতি-রাষ্ট্রের পক্ষাবলম্বন কিংবা সংকীর্ণ অবস্থান বা অবস্থান-নিরপেক্ষতার মাধ্যমে শুধুমাত্র নিজস্ব সাংস্কৃতিক সূচককে নির্দিষ্ট করে স্বাধীন রাষ্ট্রের কল্পনা উভয়ই গ্রহণযোগ্য নয়। তাই আমাদের নতুন পথের সন্ধান করতে হবে যে পথের শুরু হবে দেশের স্বাধীনতা, জাতির মুক্তি, গণ-ক্ষমতার জন্য গণতন্ত্রের লক্ষ্যে নির্ধারিত এক কর্মসূচীকে ধৈর্য্যের সাথে জনগণের মধ্যে গ্রহণযোগ্য করে তোলার মধ্য দিয়ে। একাজটি নিশ্চিতভাবে হবে বাম দিক থেকে, কিন্তু পরাজিত বা আগ্রাসী বামেদের থেকে নিশ্চিতভাবে নয়, এটা আসলে হবে এক গণ-প্রক্রিয়া এবং একমাত্র সেই অর্থে শাহবাগের বিক্ষোভকারীদের সংগ্রামী অভিনন্দন প্রাপ্য।
(নারী মুক্তি সংস্থা ও অসম মজুরি শ্রমিক
ইউনিয়নের বক্তব্য)
ঔপনিবেশিক ঐতিহ্য থেকে প্রাপ্ত বিভাজনের
রাজনীতি আমাদের এই উপমহাদেশে সংখ্যালঘুদের সর্বদা নিরাপত্তাহীনতার ও আতঙ্কের
পরিবেশে বাস করতে বাধ্য করে আসছে। যে কোন সংকট মোচনে, যে কোন শাসক শ্রেণির
মধ্যেকার দ্বন্দ্ব নিরসনে, যে কোন গণ-বিদ্রোহকে দমন করতে সংখ্যালঘুদের আক্রমণের
লক্ষ্যবস্তু করে তোলা হয়। তাই, আমরা দেখি মণ্ডল-রাজনীতিকে পরাস্ত করতে কমণ্ডল-রাজনীতিতে
বাবরি মসজিদ ধ্বংসের মাধ্যমে সংখ্যালঘু বিরোধিতা, অসমীয়া ভাষিক আধিপত্যের রাজনীতি
প্রতিষ্ঠা করতে নেলি-গোহপুর-চাউলখোয়া সহ প্রতিটি জনগনণার সময় ধর্মীয় সংখ্যালঘু
নিধন যজ্ঞ, বিটিসি-গঠনের ক্ষেত্রে বিজেপি-কংগ্রেস-বিএলটি’র আধিপত্যবাদী রাজনীতির
বলি হাজার হাজার সংখ্যালঘু যাদের একাংশ এখনও গৃহহীন হয়ে আশ্রয়-শিবিরে মানবেতর জীবনযাপন
করছেন, মায়ান্মারে রাজনৈতিক পট-পরিবর্তনের সময় রোহিঙ্গিয়াদের উপর বর্বরতম আক্রমণ। আমরা
দেখেছি বাংলাদেশ মুক্তি যুদ্ধের সময় সে দেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের এই উপমহাদেশের
শাসকশ্রেণির টার্গেট হতে। এবারেও যখন শাহবাগ চত্বরে গণ-বিদ্রোহ সংগঠিত হচ্ছে, তখন
এই বিদ্রোহকে বিপথে চালিত করতে সেদেশের সংখ্যালঘুদের টার্গেট করে নিয়েছে
শাসকশ্রেণির মদতপুষ্ট অপশক্তি।
কিন্তু আমরা এই উপমহাদেশের ঘৃণ্য সাম্প্রদায়িক
রাজনীতির বিরুদ্ধে গণতন্ত্রপ্রেমী নাগরিক এবং জাগ্রত জনতার প্রতিবাদ-প্রতিরোধের
উপর সবসময়ই আস্থাশীল। সাম্প্রতিক অতীতে আমরা বাংলাদেশে তাদের ভূগর্ভস্থ প্রাকৃতিক সম্পদের উপর বিদেশি সাম্রাজ্যবাদী ও সম্প্রসারণবাদী পুঁজি-মালিকদের দখলদারীর
প্রয়াসের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী সফল ধর্মঘট হতে দেখেছি, আমরা দেখেছি বাংলাদেশের
বস্ত্রশিল্পের শ্রমিকদের অধিকারের দাবিতে বিশাল ও স্বতঃস্ফূর্ত ধর্মঘট সংগঠিত হতে।
মানুষের এই প্রতিবাদ আন্দোলন বৃথা যেতে পারে না। আমরা আশাবাদী যে শাহবাগে সমাবেশিত
জাগ্রত জনতা বাংলাদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষাকে নিজেদের আন্দোলনের সাথে
শামিল করে ‘স্বাধীনতা, মুক্তি, গণতন্ত্র ও পরিবর্তনের’ এক দেশব্যাপী আন্দোলন গড়ে
তুলবে যেখানে সেদেশের সংখ্যালঘুরাও হবে এই লড়াইয়ের সাথী। কুচক্রীদের সংখ্যালঘু
বিরোধী প্রয়াসের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই বাংলাদেশের শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ প্রতিরোধ
আন্দোলনে শামিল হয়েছেন। আমাদেরকেও নিজ দেশে ‘স্বাধীনতা, মুক্তি, গণতন্ত্র ও
পরিবর্তন’ এবং সংখ্যালঘু অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই গড়ে তোলার মাধ্যমে তাদের এই
আন্দোলনের সাথে হাত মিলাতে হবে যাতে এই উপমহাদেশে জনগণের যূথবদ্ধ শক্তির কাছে
অপশক্তি মাথা নোয়াতে বাধ্য হয়।
সংগ্রামী অভিনন্দন সহ-
নারী মুক্তি সংস্থার পক্ষে – পূর্ণিমা নন্দী,
বাসন্তী দত্ত ও স্নিগ্ধা নাথ।
অসম মজুরি শ্রমিক ইউনিয়ন – শিশির দে, টিঙ্কু
গুপ্ত ও মানস দাস।