মন্ত্রমুগ্ধ
(আমাদের সমকালের জন্য অনীক লস্করের লেখা
ধারাবাহিক গল্পের এটি হচ্ছে ষষ্ঠ পর্ব। পঞ্চম পর্বের শেষে মাথায় আঘাত লেগে কুলেন্দ্র অচেতন, তারপর .........)
জ্বরের ঘোরে কুলেন্দ্র বিড় বিড় করে। ‘ওই উঠ, ফেয়ারওয়েল
ফাংশনঅ জাইতে নায় নি’ – রণেনের ডাকে কুলেন্দ্র সাড়া দেয় না। শিলচরের বহুতল ফ্ল্যাট
বাড়ির একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়েছে তারা চার বন্ধু। ফ্ল্যাটের মালিকনি থাকেন ওই
বাড়িরই আরেকটি ফ্ল্যাটে। রণেন সহ তাদের তিনজনের আগের থেকেই পরিচয় ছিল। তারা
চারবন্ধু মিলেই প্রথমে ভাড়া নিতে চেয়েছিল, কিন্তু তাদের মধ্যে একজন মুসলিম বন্ধুকে
বাড়ির মালিকনির আপত্তিতে মধুরবন্দের কোন এক বাড়িতে ভাড়া নিতে হয়। ‘আমার কোন আপত্তি
নাই, কিন্তু সমবায় সমিতির অন্য সদস্যরা পরে ক্যাচাল করতে পারে, তোমরা আর কেউরে
জোগাড় কইর্যা নেও’ – মালিকনির এই কথা সরাসরি তাদের বন্ধুকে তারা জানায়নি। ওই
বন্ধুটি শহরতলির মধুরবন্দে নিজে থেকেই ঘর খুঁজে নিয়েছে, হয়ত এই নিয়ম সে আগে থেকেই
আঁচ করতে পেরেছে। অগত্যা আরেকজন সাথীর জন্য তাদের অপেক্ষা করতে হয়। হপ্তাদিনের
মধ্যেই ঘর খুঁজতে আসা তাদের সমবয়সী একজন জুটে যায়। ওই নতুন বন্ধুটির মা ছোটভাইকে
নিয়ে লক্ষীপুরের গঞ্জ-শহরে থাকেন। তার বাবা দাদুর একমাত্র সন্তান। দিদা তার জন্মের
আগেই মারা গেছেন। তার দাদু বরাক নদির ওপারে কয়েক কিয়ার ক্ষেতের জমি বাগি দিতেন,
তাতে বছরের পরিবারের চালের সংকুলান তো হতোই, কিছু বিক্রিও করতেন। এছাড়া লক্ষিপুর
বাজারে ছিল একটি স্টেশনারী দোকান যা তিনি নিজে দেখাশোনা করতেন। তার বাবা বিএ পাশ
করার আগেই প্রেম করে বিয়ে করে ফেলেন। তার কয়েকবছর পর তার দাদুও মারা যান। জমি ও দোকান থেকে আয়ও কমতে
থাকে। এছাড়া দোকানকে আরও বড় করার জন্য ব্যাঙ্ক থেকে কিছু ধার নিয়েছিলেন তার দাদু।
দাদু অকস্মাৎ মারা যাওয়ায় পরিবারে খানিকটা আর্থিক সংকটও দেখা দেয়। কিন্তু দাদুর
মৃত্যুর কয়েক বছরের মধ্যেই তার বাবা এসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে যান। জমি ও দোকান
বিক্রি করে লক্ষীপুরেই ভাল সরকারি পদে চাকরিও জুটিয়ে নেন। সে তখন নেহেরু কলেজে
উচ্চ-মাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। একবছরের মধ্যেই তার বাবা তারজন্য মোটর সাইকেল
কিনে দেন, লক্ষীপুরের বাড়িকেও খানিকটা আধুনিক করে তোলা হয়। মাস্টার বেডরুম সংলগ্ন
টয়লেট ও বাথরুম, ছেলেদের জন্য পৃথক ঘর, গ্যাস্টরুম, সবার জন্য আরেকটি আধুনিক টয়লেট
ও বাথরুম বানানো হয়, যদিও মূল কাঠামোটা আসাম-টাইপই রেখে দেওয়া হয়। কিন্তু কিছুদিনের
মধ্যেই তারা এই পরিবেশে হাফিয়ে উঠেন। বড় মাপের অফিসার ও তার পরিবারের সদস্যরা
পরশিদের সাথে আর আগের মত খোলাখুলি মেলামেশা করতে পারেন না। সাক্ষাতে সৌজন্যমূলক
আলাপচারিতা থাকলেও, আগের মত বাড়িতে আনাগোনা একেবারেই বন্ধ। দুপক্ষেরই বাধো বাধো
ঠেকে। বাড়িতে অফিসের গাড়ি থাকে, থানার কর্তারাও তদ্বির করতে গাড়িটারি নিয়ে আসেন।
এভাবে লক্ষিপুরে থাকাটা তাদের কাছে বেশ মুস্কিল হয়ে উঠে, এছাড়া ছেলের পড়াশোনার
জন্যও শিলচরে চলে যাওয়া জরুরি। তাই শিলচরে একটি ভাল ফ্ল্যাট কেনার জন্য খোঁজখবর
করতে শুরু করেন তার বাবা। কিছুদিনের মধ্যেই শিলচর অম্বিকাপট্টিতে একটি ভাল
ফ্ল্যাটের সন্ধানও পেয়ে যান। পরিবারকে শিলচর পাঠিয়ে দিয়ে তিনি লক্ষীপুরে থাকবেন
এবং শনি-রোববারে ছুটিতে শিলচর যাবেন - এরকমই এক পরিকল্পনা মাথায় রেখে শিলচরে
ফ্ল্যাট কেনার সিদ্ধান্ত নেন তার বাবা। কিন্তু এভাবেই একদিন ফ্ল্যাট দেখে শিলচর
থেকে লক্ষিপুর ফেরার পথে এক অভাবনীয় পথ-দুর্ঘটনায় তার বাবার মৃত্যু হয়। ঘটনার এই
আকস্মিকতায় সবকিছু ওলটপালট হয়ে যায়। বাবার পরিচিতদের সহায়তায় ওই অফিসেই তার মার কেরাণির
চাকরি জোটে যায়। তাতে দুই ছেলের পড়ার খরচ ও সাংসারিক ব্যয় সংকুলান হয়, কিন্তু
সৌখীন জীবন যাপনে রাশ টানতে হয়। পড়শিদের সাথে গুমোট ভাবটাও ধীরে ধীরে কাটতে শুরু
করে। অগত্যা লক্ষীপুরেই তাদের থেকে যেতে হয়, এছাড়া তাদের গত্যন্তরও ছিল না। কলেজের
পাঠ সাঙ্গ করে বড় ছেলে বিজন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়, পাকেচক্রে কুলেন্দ্রদের সাথে
চারজনের এই মেসে সে আশ্রয় নেয়।
উল্টোদিকের ফ্ল্যাটের পলাশ স্যারকে দেখলেই কুলেন্দ্রর
পিত্তি জ্বলে যায়। সুঠাম গঠন, শিলচরের
অভিজাত কলেজের পঞ্চাশোর্ধ্ব এই অধ্যাপক সকাল-বিকেল দু’বেলা দুই ব্যাচ ছাত্র পড়ান।
বিকেলের ব্যাচ পড়ানো শেষ হলেই, কুলেন্দ্রদের মেসে এসে উপদেশ দেওয়া তাঁর রুটিন হয়ে
দাঁড়িয়েছে। এমনিতে সবসময়ই এক কৃত্রিম গাম্ভীর্য বজায় রাখেন। চলনে-বলনেও রয়েছে তার
গাম্ভীর্য। মেপে কথা বলেন, মেপে হাসেনও। মেসে এসে বেশিক্ষণ থাকেন না, যতক্ষণ থাকেন
ক্যারিয়ার সংক্রান্ত উপদেশ দিয়ে যান, কুলেন্দ্ররা সবসময়ই শ্রোতা। হাজার হোক
অধ্যাপক, তাঁর অভিজাত বংশবৃত্তান্ত তিনি প্রথম দিনই দিয়ে রেখেছেন। ক্যারিয়ারের
বিষয় নিয়ে কুলেন্দ্র ছাড়া বাকী তিনজনকে নিয়েই তিনি বেশি চিন্তিত। বিশেষ করে বিজনের
প্রতিই তাঁর আগ্রহটা একটু বেশি, কারণ প্রথম দিন বিজনের মা যখন এসেছিলেন এই
অধ্যাপকও সেখানে উপস্থিত। অধ্যাপক জানতে পেরে বিজনের মা বিজনের প্রতি খেয়াল রাখার
জন্য তাঁকে বিশেষ অনুরোধ করেন। সে থেকে বিজনের প্রতি তাঁর একটু বেশি নজর। তাঁর
ধারণা কুলেন্দ্রর বিশেষ চিন্তার কারণ নেই, কারণ জাতি-কোটা থাকার সুবাদে তার কিছু
একটা জুটে যাবে, নিদেনপক্ষে গ্রামে ফিরে গিয়েও রোজগারের কিছু একটা বন্দোবস্ত করতে
পারবে। কিন্তু শিলচরের এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করে বাকীদের ভবিষ্যত অনিশ্চিত।
বাকী তিন বন্ধুই উঁচু পদে সরকারি চাকুরীয়ান পরিবার থেকে আসা, সুতরাং তাদেরকে
প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। তাঁর ধারণা এসংক্রান্ত টিপস
দেওয়ার ক্ষমতা তিনি ছাড়া এঅঞ্চলে আর কোন অধ্যাপকের নেই। উপদেশের পর তিনি যখন
গাত্রোত্থান করেন, তাঁর গাম্ভীর্যপূর্ণ তাচ্ছিল্যভরা মুচকি হাসি কুলেন্দ্রর গায়ে
যেন আগুন ছিটিয়ে দেয়। বিজনও তাঁকে সহ্য করতে পারে না, কিন্তু কুলেন্দ্রর তাঁর
প্রতি প্রচণ্ড চাপা ক্রোধ নিয়ন্ত্রণে রাখতে গিয়ে মস্তিষ্কে বিস্ফোরণ ঘটে। সে
দু’হাত তুলে তাঁর গলা লক্ষ্য করে এগিয়ে যায়, মনে মনে গালি পাড়ে, ‘শালা টিচারি
দেখাইতে আইছে, চুতমারানির শাড়াশি রগ ছিড়ি লাইতাম’।
কুলেন্দ্রদের মেসের বাদিকের ফ্লেটে থাকেন সত্তর ছুঁই ছুঁই
এক বৃদ্ধ, তাঁর ছেলে, ছেলের বউ ও নাতি। এই বৃদ্ধের সাথে কুলেন্দ্রর বেশ ভাব হয়ে
যায়। কুলেন্দ্র যেদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে যায় না, সেদিন এই বৃদ্ধের সাথে গল্প করে কিছু
সময় কাটায়। চাকুরীয়ান ছেলে, ছেলের বউ ও নাতি যে যার কাজে বেরিয়ে যায়, বৃদ্ধ দিনের
বেলা একাই থাকেন। ছেলে ব্যাঙ্কে চাকুরি করে, বউ শিক্ষিকা ও নাতি পলিটেকনিক পাশ করে
এক আইটি কোম্পানীর স্থানীয় ম্যানেজার হিসেবে কাজ করে। মোবাইল টাওয়ার নির্মাণ ও
মেরামতির কাজ দেখাশুনা করা, জমি অধিগ্রহণের জন্য প্রশাসনিক দপ্তরে তদ্বির করা
এগুলো কাজ করতে গিয়ে তাকে বরাক উপত্যকার বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাঘুরি করতে হয়। তাই দশ
হাজার টাকা ফিক্সড সেলারি ছাড়া টিএ-ডিএ মেলে,
ঠিকাদারদের থেকেও কিছু উপরি পাওনা জুটে। কিন্তু ভবিষ্যত সুরক্ষিত না হওয়ায় সে অন্য
কোম্পানীতে চাকরির চেষ্টায় আছে। বৃদ্ধের নামে শিলচরেই আরেকটা বাড়ি আছে যেখানে ছোট
ছেলে তার পরিবার নিয়ে থাকে। দুই মেয়ে বিয়ে হয়ে অন্যত্র চলে গিয়েছে। ছোট ছেলে ও
ছেলের বৌ মাঝে মাঝে ঐ ফ্ল্যাট বাড়িতে আসে। ওরা যেদিনই আসে, বন্ধ কপাটের ওপাশ থেকে
চিৎকার চেঁচামেঁচির আওয়াজ শোনা যায় – বোঝা যায় কিছু একটা নিয়ে জোর তর্কাতর্কি
চলছে। কুলেন্দ্রর ঔৎসুক্য বাড়তে থাকে। বৃদ্ধের সাথে পরিচয়ের পর সে রহস্য জানতে
পারে। প্রথম দিনেই এই বৃদ্ধের প্রতি কুলেন্দ্রর এক মমত্ববোধ জাগ্রত হয়। বৃদ্ধ তাঁর
অতীত নিয়ে যখন কথা বলেন তাঁর মুখাবয়বে এক তৃপ্তির ভাব ফুটে উঠে – বলিরেখাগুলি একে
অপরের সাথে বিকর্ষিত হয়ে উজ্জ্বল ত্বকের ঝলক দিতে থাকে। সিলেটে বৃদ্ধের বাবার
জমিদারি ছিল। গ্রামের পাঠশালা ও মফঃস্বল শহরের উচ্চতর-বিদ্যালয়ে পড়ার সময়
তাঁর ছায়াসঙ্গি ও সবচাইতে অন্তরঙ্গ বন্ধু
পাশের বাড়ির আমিনূলকে নিয়ে অনেক মজাদার ঘটনার কাহিনী শোনান তিনি। দেশভাগের বলি হয়ে
ওপারে চলে আসার কথা বলতে গিয়ে তাঁর চোখেমুখে শোকের অভিব্যক্তি ফুটে উঠে, আবার
পরক্ষণেই উৎফুল্ল হয়ে বলেন, ‘অই আমিনূলের মদতেই কিছু অস্থাবর সম্পত্তি আমি ইফার
নিয়ে আইতে পারছি, কিন্তু ওখন মনে হয় ওইটাউ কাল হইছে – খালি হাতে আইলেউ বালা আছিল’।
সেই অস্থাবর সম্পত্তি বিক্রি করে শিলচরে জমি কিনে বাড়ি বানান এবং টুকটাক ব্যবসা
করে কিছু আয়েরও বন্দোবস্ত হয়। পরবর্তীতে যুদ্ধের বাজারে আর্মি-সাপ্লাই দিয়ে বেশ
কিছু অর্থ উপার্জন করেন এবং চার ছেলে মেয়ে নিয়ে ছ-জনের পরিবারে সচ্ছলতা আসে। ছোট
ছেলে পড়াশুনা সাঙ্গ করে কনস্ট্রাকশন কোম্পানী খুলতে চায়। ইদানীং বড় বড়
কোম্পানীগুলো বিভিন্ন ধরনের কনস্ট্রাকশনের কাজের বরাত নিচ্ছে এবং তারা স্থানীয়
ঠিকাদার কোম্পানীদের উপ-ঠিকা দিয়ে দেয়। একাজে এখন ভালই মুনাফা। তাছাড়া সড়ক
নির্মাণ, বিভিন্ন ধরনের টাওয়ার লাইন বানানো ইত্যাদি ক্ষেত্রে যদি প্রশাসন ও
গ্রামীণ দালালদের নেটওয়ার্কিং-এর কাজটা করা যায় জমি-অধিগ্রহণের ক্ষেত্রেও ভাল
কামিয়ে নেওয়া যায়। কোম্পানীর পরিকাঠামোর জন্য এক মোটা অঙ্কের অর্থ চাই। ছোট ছেলের
দাবি বাড়ির অর্ধেক জমি বিক্রি করে এই অর্থ তাকে দিতে হবে। কিন্তু বৃদ্ধ কিছুতেই
রাজি নন – সিলেটের বাড়ি ছেড়ে এসে তিলে তিলে আজকের এই আবাস গড়ে তুলেছেন যার প্রতি
তাঁর একধরনের আসক্তি জন্মে গেছে। এনিয়ে বাড়িতে প্রতিদিন অশান্তি। ছোট ছেলের অভব্য
আচরণ মাত্রা ছাড়িয়ে যায় এবং বাধ্য হয়ে বড় ছেলের পরিবারের সাথে তিনি এই ফ্ল্যাটে
চলে আসেন। এই ফ্ল্যাট কেনার সময় তিনি তাঁর ব্যাঙ্কে জমা অর্থের পুরোটাই দিয়ে দেন।
বড় ছেলে সামান্য লোন নেয় এবং ফ্ল্যাটটা তার ও তার স্ত্রীর যৌথ মালিকানায় কেনে।
বাড়ি ছেড়ে এসে তিনি ছোট ছেলের দাবি মেনে নেবেন বলে মন স্থির করে ফেলেন। যেহেতু
ব্যাঙ্কের জমা অর্থ তিনি বড় ছেলেকে দিয়ে দিয়েছেন, তাই ছোট ছেলে এখন পুরো বাড়িটাই দাবি
করতে শুরু করে। এতে দুই ভাইয়ে তুমুল বাক-বিতণ্ডা বেঁধে যায়। দুই ভাই শেষ পর্যন্ত
তাকেই দোষী সাব্যস্ত করে এবং কলহের তীর তাঁর অকর্মণ্যতাকেই আক্রমণ করে বসে। তিনিও
ধীরে ধীরে নিজেকে অকর্মণ্য ভাবতে শুরু করেন, পিতা-পুত্রের সম্পর্কের মাধ্যম যে
সর্বনাশা সম্পত্তি তার ধ্বংসের মধ্যেই মুক্তির পথ খোঁজেন। সম্পত্তিহীন কুলেন্দ্র এই
বৃদ্ধের হাত ধরে টান দেয়। দুজনে দ্রুত পায়ে হাঁটতে শুরু করে। আঁধার কালো টানেলের
মধ্য দিয়ে হাঁটছে তো হাঁটছেই, যতই এগোয় টানেল শেষে আবছা আলোর রেখা ততই দূরে চলে
যায়। হাঁটতে হাঁটতে কুলেন্দ্র হাঁফাতে থাকে, বৃদ্ধ তার গায়ে এলিয়ে পড়ে পা টেনে
টেনে চলেছেন। হঠাৎ বিকট আওয়াজে টানেলটি ফেটে যায়। ব্লাস্টিং-ব্লাস্টিং, জগদ্দল
পাথর ভাঙার ব্লাস্টিং। চোখের সামনে বৃদ্ধ ও অধ্যাপকের মৃতদেহ। কুলেন্দ্র চিৎকার
দিয়ে লাফিয়ে উঠে। ঘামের জলে পুরো বিছানা ভিজে উঠেছে। গাঁয়ের মাঠ থেকে দমকা হাওয়া
জোৎস্নার আলোর সাথে মাখামাখি করে খোলা জানালার ফাঁক দিয়ে কুলেন্দ্রর বিছানার উপর
আছড়ে পড়ে। কুলেন্দ্রর দেহের তাপ নেমে গেছে – শরীর হীম-শীতল, মন্ত্রমুগ্ধের মত
কুলেন্দ্র আবার বিছানায় নেতিয়ে পড়ে।