Violence in Panchayat election in Rural Bengal : Notes from a distant observer

Posted by স্বাভিমান



Violence in Panchayat election in Rural Bengal : Notes from a distant observer

The violence in rural West Bengal under TMC rule indicates the continuation of the functioning of an absolutist state of left front’s rule from 1990s onwards. The land reform and decentralization of power through Panchayati Raj implemented in 1970s & 1980s respectively were reversed to pursue neoliberal development model. The industrial policy was directed towards accommodating the interest of old Jotedar class and big capital. The class base of rural workers and tenant peasants for left politics was weakened. The decentralization that occurred through Panchayati Raj became dysfunctional. Despite these entire attempts for industrialization, West Bengal’s economy remained mainly dependent on agricultural production. The productivity of land and labour took a quantum jump post land reform, and Bengal till date is a leading food producing state. The productivity of land and labour is increasing with increasing out-migration of Bengal’s rural labours. The increasing number of non-agricultural non-farm workers caused due to the developmental spree of housing estates like Rajarhat complex and the dispossessed peasantry for various developmental projects are the new consumers of food commodities. After the initial phase of land reform to unleash peasant capitalism, the left front experimented a rural development model of landlord capitalism by serving the economic interest of old Jotedars and absentee landlord families who were interested to get back the control of land for capital investment on the one hand, and followed an industrialization policy by serving the interest of big capital on the other. These policy persuasions itself generated a dichotomy within, and more importantly isolated the left from the new rural working class and tenant peasants. The left front tried the coercive measure on their old left class base to establish hegemony of the party and the state at the beginning of their policy paradigm shift in 1990s, and then at the fag end of their tenure tried to woo the rural workers and peasants through doles from the state. This policy of wooing the vulnerable classes through doles was adopted by TMC in its maximalist form where the major portion gets siphoned off to the dominant classes who are at the helm of distribution.
The Panchayat democracy was made dysfunctional through the control of the left Party which accommodated the dominant classes, and the rural poor were offered doles and thus transformed the state into an absolutist state. TMC after its initial phase of addressing the jubilation of rural workers and peasants for dethroning Left front is now toeing the same political line of their predecessor. The tenant peasants and the rural working class are disgruntled and disarrayed.
The absolutist state always has a tendency to use state machinery to ensure victory in the face of slightest of challenge from contending force. Left front faced electoral challenge from TMC which, in turn, is now facing the challenge from BJP. In the Panchayat elections of 2003 under left rule, 7000 seats were won uncontested by the left, and this time 34% seats were won uncontested by TMC.
The continuation of left front’s policy by TMC has started creating political vacuum in Bengal’s rural landscape. In absence of alternative democratic and revolutionary forces, the BJP is making inroads through communal and divisive politics and instigating ugly communal violence. The disgruntled, disarrayed and unorganized working classes who are militant in their class character are prone to imbibe this communal politics of violence, and this has added a new dimension to the politics of rural Bengal.
The democratic and revolutionary forces have so far failed to set their agenda to address this complex situation of rural Bengal. The class alliance of rural workers and tenant peasantries can be achieved by building democratic movement on the issue of ensuring democratic functioning of Panchayats, wage-hike and worker’s welfare, development of rural marketing infrastructure like cold-storage through Panchayat funding, increased MSP for agricultural products and subsidized agricultural inputs for peasant capitalist’s producers and co-operative farming. All these issues must be raised within the broadest alliance of forces who are interested to fight for democracy, to combat communalism and to fight for social justice. Jangalmahal, in a limited sphere in recent Panchayat election, has shown that there is still a space for democratic mass resistance.      

Fight for democracy, Combat communalism and Fight for social justice.

আমার চেনা কমঃ ভাস্কর নন্দী এবং .........

Posted by স্বাভিমান Labels: , ,



                  অরূপ বৈশ্য


মে, ২০১৮ জলপাইগুড়ির বাসভবনে ভাস্কর নন্দী মারা গেলেন। ভারতের কম্যুনিস্ট আন্দোলনে তাঁর ভূমিকা নিয়ে তাঁর সাথী ও গুণমুগ্ধ অনেকেই লিখেছেন। সাথী হিসেবে বা আপনজন হিসেবে কারুর স্মৃতিচারণ করার মধ্যে একধরনের বিড়ম্বনা থাকে। যাকে নিয়ে লেখা এবং যিনি লিখছেন দুয়ের মাঝে নির্মোহ পর্যবেক্ষণের বিযুক্তি ঘটানো বেশ কঠিন। অন্যের স্মৃতিচারণে নিজের কথা এড়িয়ে যাওয়া মুস্কিল, অনেক ক্ষেত্রে এটি লোভনীয় সুযোগ। শোক ও আবেগের প্রাথমিক আবহ কেটে যাওয়ার ধাপগুলি যত অতিক্রম হয় বয়ান ততই হতে থাকে স্পষ্ট। তাই স্মৃতিচারণ আমার মতে এক ধারাবাহিকতা,প্রতিবার পুরোনো বয়ানকে ঝালিয়ে নেওয়া। বারবার নতুনভাবে দেখা, বিশেষ করে সমাজ পরিবর্তনে যাদের ভবিষ্যৎ উপযোগিতা রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে।
ষাট সত্তরের দশক এক আগুনঝরা সময় কম্যুনিস্ট ভাবধারার পতাকা দিকে দিকে উড্ডীন। ১৯৫৫ সাল - আমেরিকান শিবিরে দক্ষিণ ভিয়েতনাম ও কম্যুনিস্ট শিবিরের উত্তর ভিয়েতনামের সংঘাতের শুরু। ভিয়েতনামে আমেরিকান সমরবাহিনীর উপস্থিতি বাড়তে বাড়তে ১৯৬৮ সালে ২.৭ মিলিয়ন। কম্যুনিস্ট বাহিনী ভিয়েতমিনের নেতৃত্বে ভিয়েতনামের জনগণের প্রতিরোধে প্রায় ৬০ হাজার আমেরিকান সৈন্য নিহত ও ৩ লাখেরও অধিক আহত। আমেরিকান আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আমেরিকার জনগণ প্রতিবাদে উত্তাল। ভারতের বুকেও আওয়াজ ধ্বনিত হচ্ছে – “আমার নাম তোমার নাম ভিয়েতনাম ভিয়েতনাম। আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদ পিছু হঠতে শুরু করছে, ভেয়েতনামী জনগণের প্রতিরোধ দুর্ভেদ্য। আমেরিকার পারমানবিক আক্রমণের বিরুদ্ধে হেমাঙ্গ বিশ্বাস লিখছেন – “রক্তে আদায় করি রক্তের ঋণ, আমি ভিয়েতমিন আমিই ভিয়েতমিন আমি ভিয়েতমিন
সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী প্রতিবাদে উত্তাল আমেরিকার ভূমি থেকে ১৯৬৭-এর ভারতবর্ষের নকশালবাড়ি। সত্তরের দশক মুক্তির দশক। স্বপ্নে বিভোর স্বপ্ন দেখতে শেখা সদ্য যুবকরা। ষাট-সত্তরের দশক অগ্নিযুগ। আগুনের পরশ সবার লাগে কেউ কেউ শুদ্ধ হয়। কেউ কেউ এগিয়ে যায় কেউ পিছিয়ে রয়। ভ্যানগার্ড, এভান্ত-গার্ড যারা পারে জনগণের নেতৃত্ব দিতে দিশা দিতে। এই ধারণা রাশিয়ান বিপ্লবের সময় থেকেই কম্যুনিস্টদের মধ্যে বিদ্যমান। নকশালবাড়ির বিদ্রোহে ভারতীয় বাম রাজনীতিতে নয়া মোড় একেবারে প্যারাডাইম শিফট। আর সংশোধন নয় সমাজের আমূল পরিবর্তন দেশের স্বাধীনতা, জাতির মুক্তি, জনগণের ক্ষমতা চাই। সময়ের টানে আমেরিকার আন্দোলনের পৃষ্ঠভূমি থেকে নকশালবাড়ি হয়ে চারু মজুমদারের নির্দেশে আসামে এলেন ভাস্কর নন্দী সেই থেকে আসামের বাম আন্দোলনের প্রতিটি বাঁক মোড়ে ভাস্কর নন্দী লড়াকু জনগণের ভ্যানগার্ড। সত্তরের দশকের ব্যাপক কৃষক আন্দোলন, প্রতিক্রিয়ার আসাম আন্দোলনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী আন্দোলন আলফার আক্রমণাত্মক উগ্রজাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে গণ-প্রতিরোধ। প্রতিটি ক্ষেত্রে অগ্রণী রূপকারের ভূমিকায় ভাস্কর নন্দী। গণ-আন্দোলন ও গণ-প্রতিরোধে এই অগ্রণী রূপকারের ভূমিকা নিতে হয়েছে নকশালবাড়ি পরবর্তী বিপ্লবী ধারার সার্বিক পরিস্থিতির অভ্যন্তরে। সেখানে ভ্যানগার্ডীয় ধারণা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে নিপীড়িত মানুষের মনে মুক্তির স্পৃহা জাগানোর উৎস হিসেবে শ্রেণি শত্রু খতমের লাইন নেওয়া হচ্ছে। আসামের মাটিতে সেই ধারার অভ্যন্তরে গণ-লাইন অনুশীলন করে ভ্যানগার্ডীয় ধারণার খণ্ডন করে চলেছেন বিপ্লবী লড়াইয়ের ভ্যানগার্ড ভাস্কর নন্দী, কঠিন সময়ে জনগণের মধ্যে আত্মগোপন করে, কখনও জনগণের সাগরে প্রকাশ্যে সাঁতার কেটে। অনুশীলনের এই ডায়ালেক্টিসের মধ্যেই গড়ে উঠছে বাম আন্দোলনের নতুন তাত্ত্বিক  দিক। পড়াশুনা ও অনুশীলন এই দুয়ের প্রতিঘাতে। গ্রামশির ট্র্যাডিশনাল বুদ্ধিজীবী ও অরগ্যানিক বুদ্ধিজীবীর দুই বিপরীত ধারা বোধহয় এভাবেই একই ভাণ্ডে অবস্থান করতে পারে বৈপরীত্যের ঐক্য হিসেবে।
ভারতবর্ষের বর্ণব্যবস্থা নিয়ে কোশাম্বির মতো ইতিহাসবিদরা আকাদেমিক তাত্ত্বিক চর্চা করেছেন।  দাঙ্গের মত কিছু বামপন্থী নেতা বাদ দিলে ভারতবর্ষে বর্ণভিত্তিক শোষণের বিরুদ্ধে যে লড়তে হবে তা প্রায় সব বামপন্থীরাই কোনো না কোনো সময়ে বলেছেন। ইএমএস নাম্বুদিরিবাদ তো ব্রাহ্মণ সন্তান হয়ে দলিত আন্দোলনের মধ্য দিয়ে কম্যুনিস্ট হওয়ার যাত্রা করেছেন, দলিত আন্দোলন যে করতে হবে সেটা লিখেও গেছেন। বিপ্লবী বামেদের বহু দলও বর্ণভিত্তিক আন্দোলন বা রাজনীতি করে নিজেদের সমর্থনের এলাকা বাড়িয়েছে। কিন্তু বামপন্থীদের মধ্যে দলিত আন্দোলন বা বর্ণভিত্তিক শোষণের বিরুদ্ধে আন্দোলন ছিল শুধুমাত্র সংগঠন বিস্তৃতির কৌশল মাত্র একটা সুবিধাবাদী রণকৌশল। বর্ণব্যবস্থার প্রশ্নটিকে বিপ্লবী আন্দোলনের বা শ্রেণি সংগ্রামের দৃষ্টিতে তাত্ত্বিক ব্যাখ্যার অবতারণা হলো প্রথম বিপ্লবী আন্দোলনের এই ধারার মধ্য থেকে যাতে ভাস্কর নন্দীর ভূমিকা ছিল অগ্রণী। আমরা প্রথম তাঁর লেখা এরকম দলিল দেখলাম যেখানে বলা হলো বর্ণ বিভাজন একটি শ্রম বিভাজন মোটা দাগে উৎপাদনের মালিকানাহীন দৈহিক শ্রম, উৎপাদনের মালিকানা থাকা দৈহিক শ্রম, মানসিক শ্রমের বিভাজন - উৎপাদনের এক সামাজিক সম্পর্ক যুগপৎ কাঠামো ও উপরিকাঠামোয় বিদ্যমান উচ্চবর্ণ আধিপত্য।      
১৯৮৫ সাল কলকাতার ময়দানে বৈচিত্র্যের প্রতি বিপদনামে এক সর্বভারতীয় প্রক্রিয়ার জনসভা। এই প্রক্রিয়ায় ভারতবর্ষের বিভিন্ন রাজ্যের বহু সংগঠন, ব্যক্তি, বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী রাজ্যে রাজ্যে সম্মেলন করে চলেছেন। তখনও রাজনৈতিক মহলে ফ্যাসিবাদের বিপদ সম্পর্কে আজকের মত তেমন সুস্পষ্ট ধারণা তৈরি হয়নি। সেই সময়ে এই প্রক্রিয়া ব্যাপক সাড়া ফেলে। এই প্রক্রিয়া পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন ভাস্কর নন্দী এবং গোটা দেশ ঘুরে সবাইকে এই প্রক্রিয়ায় সামিল করার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। কলকাতার ঐ দিনের সভায় শ্রোতা হিসেবে উপস্থিত ছিলাম। বহু বিশিষ্ট বক্তার দীর্ঘ ভাষণ শুনলাম। ভাস্কর নন্দীর বক্তব্য ছিল অতি-সংক্ষিপ্ত, দুতিন মিনিটের। তিনি বললেন ভারতবর্ষের বিকৃত পুঁজিবাদী বিকাশের পথ বৈচিত্র্যের প্রতি বিপদের মূল ভিত্তি। আমি তখন ছাত্র। এটা এমন এক সময় যখন নকশালবাড়ির আবেদন আবছা হয়ে আসছে, বিশ্বায়নের প্রভাবে বামপন্থার উল্টো হাওয়া বিশ্বব্যাপী বইতে সবে শুরু করেছে। নকশালবাড়ির আবছা প্রভাবে আমদের মত কতিপয় যুবাদের মনে তখনও নাড়া দেয়। হয়ত সে কারণেই বিশাল এক বিষয়কে চূড়ান্ত বিমূর্তভাবে প্রকাশ করার ক্ষমতা আমাকে মাও সে তুঙের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। মাও যেমন চীনে সাম্রাজ্যবাদের অধীনে সামন্তবাদের রূপান্তরকে ব্যাখ্যা করেছিলেন যুগপৎ ক্ষয় হওয়া ও টিঁকে থাকাহিসেবে। তবে এতো ব্যাপক জনসমর্থন লাভ করা এই প্রক্রিয়া খুব বেশিদিন স্থায়িত্ব লাভ করেনি। কেন করেনি তার একটা ব্যাখ্যার প্রয়োজন ছিলো। সেটা লিখবেন কথা দিয়েও লিখে যাননি। অন্যান্য সাংগঠনিক ও দলিল লেখার কাজের চাপে সম্ভবত সময় হয়ে উঠেনি। এখন মনে হয় নয়া উদারবাদী অর্থনীতির ফলে পরিস্থিতির গুণগত পরিবর্তনের দিকে যাত্রা ও বাম শিবিরে তাত্ত্বিক অস্পষ্টতা সেই প্রক্রিয়া বেশিদূর অগ্রসর হতে না পারার মৌলিক কারণ। অথচ সেই প্রক্রিয়াটি সচল থাকলে ফ্যাসিবাদী উত্থানের বিরুদ্ধে এক কার্যকরী প্রতিবন্ধক হিসেবে আজ বিবেচিত হতো। অসম বিকাশ পুঁজিবাদী বিকাশের অন্তর্নিহিত সত্য, পুঁজিবাদের পৃষ্ঠভূমি ইউরোপ আমেরিকায়ও রয়েছে সেই অসম বিকাশ, পুঁজির বিশ্বায়নের সাথে অসম বিকাশও বিশ্বায়িত। সেই অসম বিকাশ নিয়ে সাম্রাজ্যবাদী পুঁজির অধীনেই পুঁজিবাদী সামাজিক উৎপাদন সম্পর্ক বিকশিত হয়ে পিছিয়ে পড়া দেশগুলিতেও নির্ণায়ক ভূমিকায় চলে আসতে পারে। সাম্রাজ্যবাদের অধীনে পুঁজিবাদের নির্ণায়ক বিকাশকে, বিশেষ করে নয়া উদারবাদী অর্থনীতির পর্যায়ে, অস্বীকার করে বৈচিত্র্যের প্রতি বিপদকে প্রতিহত করা যায় না। বৈচিত্র্যের উপর আঘাতকে প্রতিহত করতে গেলেও তার অভ্যন্তরে শ্রমিক শ্রেণির ডায়মেনশনকে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনায় রাখতে হয়। তাই এই প্রক্রিয়া শুকিয়ে যেতে না যেতেই মণ্ডল রাজনীতিকে মোকাবিলা করতে কমণ্ডল রাজনীতির উত্থান। সাম্প্রদায়িক উত্থানকে নির্ণায়ক জায়গায় নিয়ে যেতে বাবরি মসজিদ অভিযান, সীমিত শক্তি নিয়ে অযোধ্যায় পাল্টা অভিযানের প্রস্তুতিতে ভাস্কর নন্দীর নেতৃত্বে আসাম থেকে প্রতিবাদী দলের এক বাহিনীর অযোধ্যার দিকে দীর্ঘ যাত্রা। রণনীতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে প্রতিরোধের রণকৌশলে কোনো আপস ছিল না। আপস ছিল না রণনীতিগত অবস্থানকে স্পষ্ট ও সাহসী বয়ানে বলে দেওয়ার ক্ষেত্রে। ভারতবর্ষে মুসলমানরা যে নিপীড়িত সম্প্রদায় এই নীতিগত অবস্থান থেকে মুহূর্তের জন্যও তাঁর নেতৃত্বে দলকে সরে যেতে দেখা যায়নি। অনেক বামপন্থীরাই জনভিত্তি হারানোর ভয়ে নীতির কথা লুকিয়ে বলেন, উভয় নৌকায় পা রেখে চলেন, কম্যুনিস্টরা যে সত্য বলতে ভয় পায় না সেই ধারণাকেই নস্যাৎ করে দেন বা মানসিকভাবেই সত্যকে অস্বীকার করেন।  
ষাটের দশকে উৎপাদনের পদ্ধতি (Mode of Production) বিতর্ক নামে খ্যাত কৃষি উৎপাদনী সম্পর্ক নিয়ে আলোচনার সূত্রপাত করেছিলেন আমেরিকান অর্থনীতিবিদ ড্যানিয়েল থর্নার। সত্তরের দশকের পর এই বিতর্কে নতুন কোনো বিশেষ সংযোজন হয়নি। ইদানীং এনিয়ে আবারও কিছু চর্চা হচ্ছে। ভাস্কর নন্দী সম্প্রতি এই চর্চাকে সার সংকলিত করে একটি প্রাথমিক দলিল লিখেছেন যেখানে কৃষিতে পুঁজিবাদী সম্পর্কের প্রাদুর্ভাবের কথা বলেছেন। কিন্তু এই চর্চা শুরু হতে ইতিমধ্যে অনেক দেরি হয়ে গেছে এবং সেটা এখনও প্রাথমিক স্তরে আছে। ফলে শ্রমিক শ্রেণির আন্দোলনে বিপ্লবীদের অংশগ্রহণ একেবারে নগণ্য হয়েই আছে এবং নয়া-উদারবাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ এখনও দুর্বল হয়েই রয়েছে। শ্রেণি বর্ণ সম্পর্ক বুঝতেও ভারতীয় বামপন্থীরা অনেক দেরী করে ফেলেছেন। বিপ্লবী পরিস্থিতি কারুর জন্য অপেক্ষা করে থাকে না, ভারতবর্ষের বিপ্লবী পরিস্থিতি আজ আবার নিষ্ক্রিয় ফ্যাসীবাদী বিপ্লবে রূপান্তরিত হচ্ছে। সক্রিয় শ্রমিক শ্রেণির বিপ্লবের জন্য সময়োপযোগী আহ্বান, পরিকল্পনা ও তার রূপায়ণ জরুরি। একে তাড়াহুড়োবাদ বলে উড়িয়ে দেওয়া যায় না, যদিও অনিশ্চয়তার সূত্র ধরে ইতিহাস নির্ধারিত পরিণতি বলে মেনে নিতে হয়।  
আসাম আন্দোলনে বা আলফার মাধ্যমে উগ্রজাতীয়তাবাদ, বড়ো উগ্রজাতীয়তাবাদ বা গোর্খাদের প্রশ্নে বাঙালি উগ্রজাতীয়তাবাদের প্রশ্নে তাঁর অবস্থান যে শুধু আপসহীন ছিল তাই নয়, বাস্তব পরিস্থিতির বাস্তব ব্যাখ্যার উপর দাঁড়িয়ে সময়োচিত প্রতিরোধের রণকৌশল নির্মাণে দক্ষতা লেনিনীয় ক্ষমতার সমতূল্য। রাশিয়ার বিপ্লবী আন্দোলনে লেনিনকে হতে হয়েছিলো একঘরে জার্মানির দালাল হিসেবে ভৎর্সিত, নক্সালবাড়ি পরবর্তী ভারতীয় বিপ্লবের ধারায় ভাস্কর নন্দীকেও সেরকম পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়েছে। পুঁজিবাদী পুনর্গঠনের কাছে শ্রমিক শ্রেণির আত্মসমর্পণ, সমাজবাদের পতন ও বাম আন্দোলনে তাত্ত্বিক বিভ্রান্তি এসব মিলিয়ে বিশ্বব্যাপী বামপন্থা যখন পিছু হঠার কঠিন সময় দিয়ে যাচ্ছিল তখন ভাস্কর নন্দী লেগেছিলেন বিপ্লবী ধারায় নিরলস প্রয়াসে মৃত্যুর আগে পর্যন্ত। এখন বিশ্বব্যাপী বামপন্থা আবারও ঘুরে দাঁড়াবার ঐতিহাসিক মুহূর্তে অবতীর্ণ, যদিও তাত্ত্বিক বিভ্রান্তি এখনও বামপন্থার পিছু ছাড়েনি। এই বিভ্রান্তি নিয়ে সমাজের বিপ্লবী রূপান্তর সম্ভব নয়। লেনিনের সময়ে তাঁর নিজের অবস্থানে কোনো বিভ্রান্তি ছিল না। রাশিয়ার ১৯১৭-এর জুলাইর অভ্যুত্থানে কেন্দ্রীয় কমিটির অধিকাংশ সদস্য যখন ক্ষমতায় অংশীদার হয়ে শ্রমিক শ্রেণির জন্য সংস্কার করার পক্ষে মত দিচ্ছেন, লেনিন তখন সোভিয়েতের হাতে সব ক্ষমতাশ্লোগান দিয়ে সশস্ত্র অভ্যুত্থানের পক্ষে মত দিচ্ছেন। এই অভ্যুত্থান বিফল হওয়ায় লেনিন একঘরে হয়ে যান, সুকৌশলে প্রচার করা হয় লেনিন ও তাঁর সাথীরা জার্মানির এজেন্ট ও জার্মানির অর্থ সাহায্যে বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে সচেষ্ট। জার্মানির দালাল অভিযোগে তাঁর সহযোগী নেত্রী আলেকজান্দার কলোনতাইর জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠে। বলশেভিকদের বাইরে ট্রটস্কি, মারটভ, আন্তোলি লুনাচারেস্কি মত কতিপয় বিপ্লবী নেতা ছাড়া সবাই জার্মানি এজেন্ট অভিযোগ বিশ্বাস করতে শুরু করে। লেনিন আত্মগোপন করেন, ছত্রভঙ্গ বলশেভিক পার্টীর সংখ্যালঘু সদস্যদের বিচ্ছিন্ন নেতা হয়ে পড়েন। মাত্র কয়েক মাস পর নভেম্বর মাসে  রাশিয়ান বিপ্লব সেই লেনিনের নেতৃত্বে, পরিস্থিতি বিবেচনায় তাঁর অবস্থানের যথার্থতা প্রমাণিত করে। সেরকম সাহস, পরিস্থিতি বোঝার ও সে অনুরূপ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা যে ভাস্কর নন্দীর ছিল তার প্রমাণ আলফা ও বড়ো সন্ত্রাস বিরোধী গণপ্রতিরোধের আন্দোলনে বা এজিপি ক্ষমতায় আসার পর পরই আর্মকার নেতৃত্বে গড়ে উঠা ব্যাপক গণ-আন্দোলনে। এই আন্দোলনগুলি বিফল হয়নি, কিন্তু তার ধারাবাহিকতা কেন বজায় থাকেনি তার নির্মোহ বিশ্লেষণ নিশ্চয় জরুরি। ভাস্কর নন্দীর অবর্তমানে এই বিশ্লেষণ আরও বেশি জরুরি হয়ে উঠে।
আসামে ভাস্কর নন্দীর নেতৃত্বে দীর্ঘ গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অনুশীলন যে বিফল হয়নি তার প্রমাণ তাঁরই করা তাত্ত্বিক নির্মাণ বা পুনর্নির্মাণ। বিশ্বজোড়া বাম আন্দোলনে যে বিভ্রান্তি তা জড়িয়ে আছে গণতন্ত্র ও সমাজবাদী রাষ্ট্র নিয়ে অবস্থানের মধ্যে। গণতন্ত্রের প্রশ্নে আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার, বিচ্ছিন্ন হওয়ার অধিকার, বহুদলীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থার পক্ষে তাঁর অবস্থান ছিল আপসহীন। সমাজবাদের প্রশ্নে লিখে গেছেন সমকালীন দুনিয়ায় সমাজবাদসম্পর্কিত দীর্ঘ রচনা। ভারতের প্রথম কম্যুনিস্ট পার্টির দলিলে সমাজবাদী রাষ্ট্র যে রাষ্ট্র অথচ রাষ্ট্র নয়, সমাজবাদী রাষ্ট্রে স্থায়ী সৈন্যবাহিনী থাকবে না এসব বিষয় অন্তর্ভুক্ত ছিল। দীর্ঘ সংশোধনবাদী প্রক্রিয়ায় একে আরও বিকশিত করার বদলে সমাজবাদী রাষ্ট্রের সেসব ধারণাকেও সমূলে বিসর্জন দেওয়া হয়। সমকালীন দুনিয়ায় সমাজতন্ত্র দলিলে এই ধারণাগুলি আরও বিকশিত হলো। অন্তর্ভুক্ত হলো বহুদলীয় নির্বাচনী গণতন্ত্র, এমন এক ফেডারেল কাঠামোর বিকাশ যা সমাজবাদী রাষ্ট্র ও রাষ্ট্র নয়মডেলের সাথে মিলে যায়। বুর্জোয়া আধিপত্যাধীন রাষ্ট্র যদি বহুদলীয় শাসনের গণতন্ত্র দিতে পারে, তাহলে শ্রমিক শ্রেণির আধিপত্যাধীন রাষ্ট্র আরও বেশি গণতন্ত্র সুনিশ্চিত করতে সক্ষম হওয়া উচিত। বহুস্তরীয় স্বশাসনের এক ফেডারেল ব্যবস্থায় ক্ষমতার আমূল বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে ক্ষমতার পর্যায়-ভাগ হবে নীচ থেকে উপরে এবং শ্রমিক শ্রেণির আধিপত্যাধীন রাষ্ট্রের সর্বনিম্ন স্তরগুলি হবে সংঘবদ্ধ শ্রমিকের স্বপরিচালিত প্রতিষ্ঠান। গণতন্ত্র সম্পর্কে বাম মহলে রয়েছে এক ভ্রান্ত ধারণা। এই ধারণা হচ্ছে, সমসাময়িক যে গণতন্ত্র তা বুর্জোয়া গণতন্ত্র - তাকে নাকচ করতে হবে। প্রকৃতপক্ষে বুর্জোয়াদের কোনো গণতান্ত্রিক এজেণ্ডা নেই, যেটুকু গণতন্ত্র বুর্জোয়া শাসন প্রদান করে তা শ্রমিক শ্রেণির চাহিদার সাথে সমঝোতার পরিণতি। সুতরাং একে নাকচ করা নয়, একে বিকশিত করাই শ্রমিক শ্রেণি ও তাদের দলের দায়িত্ব। কম্যুনিস্ট পার্টির অভ্যন্তরে ও অন্যান্যদের সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে, পার্টী ও শ্রেণির সম্পর্কের ক্ষেত্রে গণতন্ত্রের রূপ ও অনুশীলন কীরূপ হবে তা এখনও বহুদূর নির্ধারণ করা বাকী, এই অনুশীলনে খামতিগুলোও দূর করা জরুরি। বিপ্লবী আন্দোলন ও ক্ষমতা দখলের অনুশীলনের মাধ্যমে শ্রমিক শ্রেণি গণতন্ত্র ও শ্রমিক শ্রেণির রাষ্ট্রের নতুন নতুন দিক আবিষ্কার করবে, যেমনি শ্রমিকদের রাষ্ট্র প্যারী কমিউন আবিষ্কার করেছিল ফরাসী বিপ্লবের শ্রমিকরা। বাম আন্দোলনের কর্মীদের সর্বদা এদিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রেখে সমাজবাদী রাষ্ট্র ও গণতন্ত্রের প্রশ্নকে বিকশিত করার কাজে ব্রতী থাকার শিক্ষা আমরা পাই ভাস্কর নন্দীর অনুশীলন ও তত্ত্বের ডায়ালেক্টিক্যাল সম্পর্ককে তাঁর জীবনে যেভাবে গুরুত্ব দিয়েছেন তার থেকে। আমার জানা মতে ভাস্কর নন্দীর বিপ্লবী জীবনের বেশিরভাগ সময়ই অতিবাহিত হয়েছে আসামে। সেই আসামে সম্প্রতি বামপন্থীদের নেতৃত্বে উগ্রজাতীয়তাবাদের যে নতুন রূপের উত্থান দেখা যাচ্ছে সেটা ভাস্কর নন্দী দেখে যেতে পারেননি। এই পরিস্থিতির যথাযথ ব্যাখ্যা ও বাস্তব পরিস্থিতির বাস্তব ব্যাখ্যার উপর দাঁড়িয়ে সময়োপযোগী রণনীতি ও রণকৌশল তৈরি এবং তা কার্যকরী করতে পূর্ণোদ্যমে সচেষ্ট হওয়া জরুরি। এই অনুশীলনের অভ্যন্তরেই ভাস্কর নন্দীর  মূল্যায়নের ধারাবাহিকতা কালের নিয়মে অব্যাহত থাকবে।    

~~~~~~~~০০০০০০০০০০০~~~~~~~~~~~~~~~~
নিচে ছবিতে পড়ুন...               




    
                                 

স্বাভিমান:SWABHIMAN Headline Animator

^ Back to Top-উপরে ফিরে আসুন