Posted by স্বাভিমান



(১) মেহরোত্রা কমিশনের রিপোর্ট প্রকাশ, শহিদের স্বীকৃতির নিদর্শন স্বরূপ 'ভাষা শহিদ স্টেশন - শিলচর' নামাকরণ (২) রঙনাথ মিশ্র কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী (ক) মাতৃভাষায় পঠন-পাঠনের ব্যবস্থা করা, (খ) কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের সব প্রতিষ্ঠানে যথাক্রমে দেশ ও রাজ্যের সংখ্যালঘু ও অন্যান্য জনগোষ্ঠীর জনসংখ্যা অনুপাতে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা (গ) মুসলিম মৎস্যজীবীদের তপসিলিকরণের দাবির বাস্তবায়ন। (৩) দেশের অন্যান্য প্রান্তের মত আসামের ঝাড়খণ্ডী-আদিবাসীদের তপসিলি জাতি/জনজাতির স্বীকৃতি প্রদান (৪) ভোজপুরী ভাষাকে অস্টম তপসিলিভুক্ত করা ও এই ভাষায় আসাম তথা বরাক উপত্যকায় পঠন-পাঠনের ব্যবস্থা করা ইত্যাদি দাবিতে ভাষিক-ধর্মীয় সংখ্যালঘু গনতান্ত্রিক সংগ্রামী মঞ্চ ও মজুরি শ্রমিক ইউনিয়ন ১৯শে মে ভাষা শহিদ দিবসে মিছিল করে গান্ধীবাগে যায় ও শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ অর্পণ করে।

উনিশের ঐতিহ্য ও বরাকের বুদ্ধিজীবী সমাজ

Posted by স্বাভিমান



উনিশের ঐতিহ্য ও বরাকের বুদ্ধিজীবী সমাজ
(আমাদের সমকালের জন্য)
অরূপ বৈশ্য
রবীন্দ্র সার্ধশতবর্ষ পূর্তির আবেশের মধ্যেই উনিশের আগমনী। সেদিন আমার এক বন্ধুর মোটরবাইকের পিঠে চেপে যাচ্ছিলাম – হঠাৎ বন্ধুটি বলে উঠল, রবীন্দ্রনাথ নিয়ে যে আদিখ্যেতা হচ্ছে তাতে ‘বাঙালি এলিটিজম’ বাড়বে এবং বন্ধুটি যে মেটাফর দিয়ে মধ্যবিত্ত মানুষের চরিত্র বর্ণণা করল তা অত্যন্ত জুতসই হওয়া সত্বেও ‘ভদ্দরলোক শিষ্টাচারের’ নিয়ম মেনে এখানে উল্লেখ করা থেকে বিরত থাকলাম। আমার বন্ধুটি সাধারণ বাস্তব জ্ঞানের উপর ভিত্তি করে যে মন্তব্যটি করেছে, পরিশীলিতভাবে প্রায় অনুরূপ মন্তব্য সম্প্রতি অর্থনীতিবিদ ও বামপন্থী বুদ্ধিজীবী অশোক মিত্র করেছেন আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে। আটপৌরে জ্ঞান ও বুদ্ধিদীপ্ত জ্ঞানের পর্যবেক্ষণ এক্ষেত্রে প্রায় একই। উনিশে মে দিবস পালনের নির্ঘন্টও কী ‘বাঙালি এলিটিজমের’ গণ্ডি পেরুতে পারছে? উনিশে মে’র মহান ঐতিহ্যের আবেশে মোহাচ্ছন্ন করার প্রয়াসের বাইরে গিয়ে কেঊ কি এই প্রশ্ন উত্থাপন করেছে যে স্বাধীনতার মাত্র তের বছরের মাথায় দেশীয় শাসকের জহ্লাদ বাহিনীর বুলেট কেন আমাদের উপর বর্ষিত হয়? কেউ কি এই প্রশ্ন করেছে যে কোন ঐতিহ্য ১৯শে মে-কে ১৯শে জুনের সাম্প্রদায়িক বিভাজনে কালিমালিপ্ত করে নতজানু হয়ে শাসকের বুলেটের ক্ষমতার কাছে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য করে যার পরিণতিতে মেহরোত্রা কমিশনের রিপোর্ট প্রকাশ না করে ও দোষীদের শাস্তি না দিয়ে অনায়াসে জহ্লাদরা পার পেয়ে যায়? এই প্রশ্নগুলি না করে উনিশের ঐতিহ্য নিয়ে ‘আহ্লাদে আটখানা’ হয়ে স্বস্তিবোধ করলে আমাদেরকে ‘ভূতের রাজার’ বর পাওয়ার অপেক্ষায় কালাতিপাত করতে হবে। সুতরাং আমাদেরকে এই নিষ্ঠুর প্রশ্নগুলির উত্তর সন্ধান করতেই হবে, নাহলে আমাদের মেরুদণ্ডটি তো ইতিমধ্যে ভেঙেছে – এবার মাথায় হাঁড়ি ভেঙে অচৈতন্য হওয়ার ব্যবস্থা পাকা করা যাবে এবং হাঁড়ির দৈ যে নেপোয় খাবে এ নিশ্চিত।
ভূমিকার মেদবৃদ্ধি না করে এবার সরাসরি উপরুক্ত প্রশ্নগুলোতে আসা যাক। বরাক উপত্যকার বাসিন্দাদের মত ভারতবর্ষের বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর ভাগ্য-বিড়ম্বনা কিন্তু রচনা হয়ে যায় দেশভাগের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা প্রাপ্তির সময়। শিল্পমালিক ও মধ্যবিত্তশ্রেণির নেতৃত্বে ইউরোপ যখন আধুনিক সমাজ গড়েছে, তখন বিড়লাদের মত ‘বম্বে ক্লাবের’ সদস্যরা ভূস্বামীদের সাথে আঁতাত করে কংগ্রেস নেতৃত্বকে আপসের পথে ঠেলে দেয়। আধিপত্য প্রতিষ্ঠার এই শ্রেণি আকাঙ্খাই হিন্দু ও মুসলিম ভারতে আমাদের দেশপ্রেম বিভাজিত হয়ে যায়। অথচ পার্শ্ববর্তী চীন দেশেও জনগোষ্ঠীগত জটিলতা ছিল, কিন্তু ঐক্যবদ্ধ চীনারা আমাদের দু’বছর পর স্বাধীনতা অর্জন করে এবং শ্রমিক-কৃষক শ্রেণির প্রতিনিধিত্বকারী কম্যুনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে আধুনিক সমাজ গড়ার দিকে অনেকদূর এগিয়েও যায়। কিন্তু গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করার মাওয়ের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ায় কম্যুনিস্ট পার্টির অভীষ্ট লক্ষ্য থেকে চীনা সমাজ বিপরীত দিকে ঘুরে যায়। ভারতবর্ষে বহুদলীয় গণতন্ত্র চালু হলেও এমন এক সাংবিধানিক গণতন্ত্র জারি করা হয় যা বাহ্যত ফেডারেল, কিন্ত অন্তর্বস্তুতে এককেন্দ্রিক। স্বাধীনতা আন্দোলনের গর্ভে যে ভাষাভিত্তিক জাতিয়তাবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠে তাকে সামাল দিতে ভাষাভিত্তিক রাজ্য গঠন করা হলেও, এই ভাষিক জাতিয়তাবাদের পূর্ণ বিকাশকে রোধ করতে রাজ্যগুলির উপর কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত করা এবং রাজ্যের অভ্যন্তরে অন্যান্য ভাষিক জনগোষ্ঠীদের কোন অধিকার সাব্যস্ত না করে কেন্দ্রীয়ভাবে হিন্দি আধিপত্যবাদী শক্তি ও তাদের অধীনে রাজ্যিক স্তরে যেমন আসামে অসমীয়া আধিপত্যবাদী শক্তির এক চক্র তৈরি করা হয়। বরাকের মধ্যশ্রেণি একই আধিপত্যকামী মতাদর্শ থেকে অভ্যন্তরীণ অবৈরী দ্বন্দ্বের গণতান্ত্রিক সমাধানের পথ এড়িয়ে চলায় উনিশে মে উনিশে জুনের সাম্প্রদায়িক শঙ্কা ও সংঘাতের পরিণতি লাভ করে। স্বাধীনতা আন্দোলন ও স্বাধীনতা প্রাপ্তির প্রতিক্রিয়াশীল ধারার ঐতিহ্য থেকে মুক্ত হওয়ার প্রচেষ্টা ছাড়া ১৯ শে মে’র ‘ভাষা শহিদ দিবস’ পালনের নির্ঘন্ট এলিটিজমকেই পুষ্ট করবে – জাতীয় অবমাননা ও বঞ্চানা থেকে মুক্তির লক্ষ্য থাকবে অস্পষ্টভাবে বহুদূরে। অপ্রাপ্তির এই দীর্ঘ যাত্রা বরাকবাসীকে হতাশার জালে আবদ্ধ করে নরকযন্ত্রণাকে ভবিতব্য বলে মেনে নিতেই প্রস্তুত করবে। অথচ এর বিপরীত যাত্রা করার মত আমাদের যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। কীভাবে?
বরাকভূমি যে অঞ্চলের প্রসারিত ভূমিখণ্ড সেটা হচ্ছে – পূর্ব-বাংলা, পূর্ব-পাকিস্তান বা বর্তমান বাংলাদেশ। পূর্ব-পাকিস্তানের শাসকশ্রেণি  সবধরনের আপসের প্রতিক্রিয়াশীল মতাদর্শ বহন করা সত্বেও পশ্চিম-পাকিস্তানের আধিপত্য থেকে মুক্ত হতে বাঙালি জাতিয়তাবাদী আবেগকে ব্যবহার করে এক পৃথক রাষ্ট্র গঠন করতে পেরেছে। তার কারণ বর্তমান বাংলাদেশের ইসলাম ধর্মাবলম্বী মানুষরা বাঙালি চেতনায় সিক্ত। পূর্ব-বাংলার ইসলাম বিস্তার লাভ করেছে সভ্যতা বিকাশের মতাদর্শ      হিসেবে – স্থায়ী কৃষিতে অন্তর্ভুক্ত হয়ে বাঙালি হওয়ার ব্রাহ্মণ্যবাদের বিকল্প পথ হিসেবে। শাসকের শাসানি – শরিয়তি কিংবা সুফী প্রভাবে ধর্মান্তরিত হওয়ার প্রশ্ন নয় – এঅঞ্চলে ইসলামের বিস্তৃতি ঘটেছে এক সম্পূর্ণ ভিন্ন পথে – এঅঞ্চলের মানুষ বাঙালি হয়েছে ইসলামের মতাদর্শগত আবহে এবং এজন্যই এঅঞ্চলে বাঙালিদের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠরাই ইসলাম ধর্মাবলম্বী। আমাদের বরাক উপত্যাকাও তার ব্যতিক্রম নয়। বরাকের মুসলমানদের গ্রামীণ পিছিয়ে পড়া হিন্দু মানুষের সাথে এক স্বাভাবিক ঐক্যও রয়েছে। কারণ এঅঞ্চলে গ্রামীন নিম্নবর্ণের হিন্দুরাও ব্রাহ্মণ্যবাদী প্রভাবের বাইরে এক স্বতন্ত্র ধর্মীয় সাংস্কৃতিক পরম্পরা এখনও বজায় রেখেছে – সুজিৎ চৌধুরী যাকে বারুণী স্নান ও সিদ্ধেশ্বর কপিলাশ্রমে মন্দিরভিত্তিক অর্চনাকে নিম্নবর্ণ ও উচ্চবর্ণের ধর্মাচারের দুটি সমান্তরাল ধারার টানাপোড়েনকে সুদূর অতীতের ধর্মীয় সংঘাতের ক্ষীয়মান ধারা হিসেবে দেখাতে চেয়েছেন। বরাকের বর্ণহিন্দু বুদ্ধিজীবী সমাজ যদি হিন্দুত্ববাদী ও আধিপত্যবাদী মতাদর্শের কুটিল চক্র থেকে বেরিয়ে এসে বরাকের এই স্বাভাবিক ঐক্যকে সুদৃঢ় করার উদ্যোগে ব্রতী হন, তাহলে ১৯শে মে’র ঐতিহ্যের এক গণতান্ত্রিক পুনঃনির্মাণ এবং বরাকবাসীর উন্নয়ন সুনিশ্চিত করা সম্ভব। এই ঐতিহ্যের পুনঃনির্মাণ করার শুরুয়াত হতে পারে প্রতিটি জনগোষ্ঠীর সম-মর্যাদা ও সম-অধিকারের এক বাস্তবমুখী নীতিগত কর্মসূচী রূপায়ণের মাধ্যমে। জাস্টিস সাচার ও রঙ্গনাথ মিশ্র কমিশনের রিপোর্ট প্রকাশের পরও যারা ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের সংরক্ষণের বিরোধিতা করেন, যারা তপসিলিদের সংরক্ষণের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করে নিজের আখের গোছান – তাদের বাঙালিয়ানা যে মেকী ও ভণ্ডামি তাতে কোন সন্দেহ থাকে না। বর্ণহিন্দুদের এই মানসিকতাই সুস্থ বাঙালি জাতিয়তাবাদী উন্মেষের প্রধান অন্তরায়। 

বরাক উপত্যকার ভাষা আন্দোলন ও বামপন্থা

Posted by স্বাভিমান


বরাক উপত্যকার ভাষা আন্দোলন ও বামপন্থা
(বরাক কন্ঠ, ১৯শে মে সংখ্যার জন্য)
অরূপ বৈশ্য
আজকের সময়ে প্রথমবারের মত যদি কোন পর্যবেক্ষক বরাক উপত্যকার মাটিতে পা রাখেন, তাহলে ‘বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে সংকীর্ণ রাজনীতি’, ‘জনৈক বিধায়িকার বৈবাহিক সম্পর্ক নিয়ে চর্চা’ ইত্যাদি বিষয়ের প্রাবল্য দেখে ১৯শে মে’র ঐতিহ্য নিয়ে তাঁর সংশয় দেখা দেবে। বৌদ্ধিক চর্চার ও ভাষা বিকাশের কেন্দ্র হিসেবে যে বিশ্ববিদ্যালয় ১৯শে মে’র ঐতিহ্যের প্রতীক হয়ে উঠতে পারত, বরাকের দুর্বল মধ্যশ্রেণির দিল্লি-দিসপুরের হুকুম-নির্ভর রাজনীতির তল্পিবাহক বর্ণহিন্দু বৌদ্ধিক সমাজ সেই বিশ্ববিদ্যালয়কে তাদের বুদ্ধিবৃত্তিগত চর্চার প্রতীক করার বদলে আধিপত্য বজায় রাখার ‘মহান খেলায়’ ১৯শে জুনের প্রতীক করে তুললেন। ১৯শে মে’র গুলিচালনার ঘটনার প্রতিবাদে উত্তাল হাইলাকান্দি কীভাবে এবং কেন অতর্কিতে ১৯শে জুনের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার পরিণতির দিকে পা বাড়াল তার একটা আঁচ পাওয়া যায় আজকের সময়ের উপরুল্লিখিত পরিণতির মধ্যে।
বরাকের একষট্টির ভাষা আন্দোলন নিয়ে আলোচনা করার সময় পার্শ্ববর্তী বর্তমান বাংলাদেশ বা তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তানের সেসময়কার পরিস্থিতি বিবেচনায় রাখা উচিত। একই ভাষিক-সাংস্কৃতিক অঞ্চল ছাড়াও যে মুখ্য কারণগুলো আমাদেরকে সেখানকার পরিস্থিতি বিবেচনায় রাখতে বাধ্য করে তা হলো – এক, বরাক উপত্যকার বর্তমান করিমগঞ্জ জেলা পূর্ব-পাকিস্তানের সিলেট জেলা থেকে রাজনৈতিকভাবে বিচ্ছন্ন হয়ে যাওয়ার পর খুব বেশি সময় অতিবাহিত হয়নি – বিচ্ছিন্ন হওয়ার সময়ের যুবকরা ভাষা আন্দোলনের সময়ও যুবক; দুই, করিমগঞ্জ জেলার ভূমি ব্যবস্থা, আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থা, অতীত সংগ্রামের ঐতিহ্যের সাথে মিল; তিন, তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তান থেকে ছিন্নমূল উদ্বাস্তুদের মূলত কাছাড় জেলার ও শহর শিলচরে বসতি এবং বিভিন্ন পেশায় ও সরকারি চাকুরিতে থিতু হওয়া। এছাড়া যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি আমাদের দৃষ্টি এড়িয়ে যাওয়া উচিত নয় তা হলো, বরাকের একষট্টির ভাষা আন্দোলনের সময়কালেই পূর্ব-পাকিস্তানের বাঙালি জাতিয়তাবাদের উন্মেষ।
পাকিস্তানে সামরিক শাসন জারি করার পর আয়ুব খান ১৯৫৮ সালের ২৪ অক্টোবরে ঢাকার পল্টন ময়দানে প্রথম জনসভা করেন। এই জনসভায় পূর্ব-পাকিস্তানের লাখো বাঙালির স্বতঃস্ফূর্ত সমাবেশ পশ্চিমী শাসকের প্রতি জনসমর্থনকে দেখায়। ঐ জনসভার আগেই মৌলানা ভাসানি ও ন্যাশনেল আওয়ামি পার্টির নেতাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়। পশ্চিম পাকিস্তানের কঠোর সামন্ত ব্যবস্থার কাঠামো থেকে বেরিয়ে আসা নতুন গ্রামীণ বুর্জোয়া শ্রেণি যখন আয়ুব খানের রাষ্ট্রীয় নীতির সমর্থনে এগিয়ে আসছে, তখন পূর্ব-পাকিস্তানের সামন্ত অবশেষের ধারক জোতদার-মহাজন শ্রেণির সাথে সমঝোতা করে আয়ুব খান তাঁর সমর্থন ভিত্তি তৈরি করেছেন। অর্থাৎ প্রগতিশীল ভূমিকা পালন করতে সক্ষম নব্য পুজিঁমালিক গ্রামীণ বুর্জোয়ারা যখন পশ্চিম পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় শ্রেণি, তখন পূর্ব-পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় শ্রেণি প্রতিক্রিয়াশীল প্রাক-পুঁজি বা অ-পুজিঁবাদী জোতদার-মহাজনরা যারা স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে অত্যন্ত আগ্রহী থাকে। শাসনের কোন কোন পর্যায়ে দিসপুরের শাসকও ব্রহ্মপুত্র-বরাকে এরকম বিপরীত ধরনের শ্রেণি সমঝোতা গড়ে তুলেছে কিনা তা বিচার করে দেখা যেতে পারে। সে যাই হউক, পূর্ব-পাকিস্তানের এই শ্রেণি সমঝোতাকে হাতিয়ার করে সামরিক শাসনের উপর ১৯৬০-এর ১৫ ফেব্রুয়ারীর আস্থা ভোটের পক্ষে আয়ুব খান পূর্ব-পাকিস্তানে ৯৫.৬% ভোট পান। এরকম এক পরিস্থিতিগত প্রেক্ষাপটেই পূর্ব-পাকিস্তানে কম্যুনিস্ট পার্টি স্বাধীন পূর্ব-পাকিস্তানের পক্ষে মত পোষণ করে। কিন্তু কেন এবং কীভাবে কম্যুনিস্ট পার্টি বাঙালি জাতিয়তাবাদের নেতৃত্ব দিতে ব্যর্থ হয় তার একটা যুক্তিগ্রাহ্য ব্যাখ্যা তুলে ধরেছেন বদরুদ্দিন উমর তাঁর ‘দ্য ইমারজেন্স অব বাংলাদেশ (দ্বিতীয় খণ্ড)’ গ্রন্থে। পশ্চিম পাকিস্তানী সামরিক শাসন ও সাম্রাজ্যবাদের মদতপুষ্ট পশ্চিম পাকিস্তানী বুর্জোয়াদের পুঁজির আধিপত্যের বিরুদ্ধে ক্রমবর্ধমান শ্রমিক-কৃষক-ছাত্র বিক্ষোভ ও প্রতিরোধ        পূর্ব-পাকিস্তানের বাঙালি জাতিয়তাবাদের কোর হিসেবে বিকশিত হতে থাকে এবং এই প্রতিরোধ আন্দোলন পশ্চিমী শাসকদের সাম্প্রদায়িক বিভাজনের রাজনীতিকেও প্রতিহত করে। কিন্তু কম্যুনিস্ট পার্টি এই জাতিয়তাবাদকে শ্রমিক শ্রেণির ও গণ-আকাঙ্খার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বিচার করেনি। ১৯৬২-এর ইন্দো-চীন যুদ্ধের পর দুই শিবিরে বিভক্ত কম্যুনিস্ট পার্টির উভয় গোষ্ঠী পূর্ব-পাকিস্তানের জাতিয়তাবাদের প্রশ্নে কোন সুনির্দ্দিষ্ট নীতি গ্রহণ করতে পারেনি। কারণ পশ্চিম পাকিস্তানের শাসক গোষ্ঠীর অবস্থান সোভিয়েত রাশিয়া না চীন কার বেশি সহায়ক – এটাই মুখ্য বিচার্য বিষয় হয়ে ওঠে। ফলে এই বাঙালি জাতিয়তাবাদের নেতৃত্ব চলে যায় বাঙালি মধ্যশ্রেণির হাতে। সবাইকে নিয়ে ইউনাইটেড ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট পরিচালনে আগ্রহী সুরাবর্দীর মৃত্যুর পর শেখ মুজিবুর রহমান আওয়ামি লিগকে পুনরুজ্জীবিত করেন এবং সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী ও শ্রমিক-কৃষকের স্বার্থসম্বলিত বিষয়গুলিকে বাদ দিয়ে বাঙালি উগ্রজাতিয়তাবাদী দৃষ্টিভঙ্গির ছত্রছায়ায় সবাইকে সমাবেশিত করেন। তথাপি সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে ও সাম্প্রদায়িক বিভাজনের বিরুদ্ধে শ্রমিক-কৃষক-ছাত্রদের প্রতিরোধ আন্দোলন ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এক পৃথক জাতি-রাষ্ট্র গঠনের আন্দোলনে রূপান্তরিত হয়। কিন্তু বরাক উপত্যকায় ভাষা আন্দোলন নিঃশেষিত হয় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার মধ্য দিয়ে। এই করুণ পরিণতির কারণ হিসেবে যারা পিছিয়ে পড়া অর্থনীতিতে ক্রিয়াশীল ইসলামী মৌলবাদী ও মুসলিম সম্প্রদায়ের ধর্মীয় আবেগকে দেখাতে চান তাদের যুক্তি যে ধোপে টেকে না, তার জলজ্যান্ত প্রমাণ পূর্ব-পাকিস্তানের ভাষা  আন্দোলনের পরিণতি। বরঞ্চ এই পরিণতির কারণ খোঁজার জন্য অন্য একটি পর্যবেক্ষণের দিকে পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করা মনে হয় সমীচীন হবে।
বরাকের বুদ্ধিজীবীদের একষট্টির ভাষা আন্দোলনের তথ্য সম্বলিত যে সব পুস্তক প্রকাশিত হয়েছে সেইসব পুস্তকে সন্নিবিষ্ট তথ্যে দেখা যায় যে গণঅংশগ্রহণের মাধ্যমে করিমগঞ্জ জেলা থেকে এই আন্দোলনের সূত্রপাত  হয়ে শেষ পর্যায়ে নেতৃত্ব চলে আসে শিলচরে এবং তারপর ১৯শে জুনের ঘটনার মধ্য দিয়ে তার পরিসমাপ্তি ঘটে। ছিয়াশির আন্দোলনের সাথে ব্যক্তিগতভাবে জড়িয়ে থাকার সুবাদে এই লেখকেরও অনুরূপ অভিজ্ঞতা হয়েছে। করিমগঞ্জ জেলাতেই আন্দোলন দানা বাঁধে এবং পরবর্তীতে শিলচরের নেতৃত্বে আন্দোলনের প্রাণশক্তি লোপ পায়। এই পর্যবেক্ষণের একটি ব্যাখ্যা এভাবে দেওয়া যেতে পারে। বাংলাদেশের মত করিমগঞ্জ জেলায় কৃষক আন্দোলনের এবং কিছু পরিমাণে শ্রমিক আন্দোলনের এক ঐতিহ্য রয়েছে এবং কম্যুনিস্ট পার্টিগুলো দীর্ঘকাল এই ঐতিহ্য বহনও করেছে। ফলে ভাষিক অধিকারের সংগ্রামও দ্রুত গ্রামাঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু জাতিয়তার প্রশ্নে কম্যুনিস্টদের অস্বচ্ছ ও দোদুল্যমান দৃষ্টিভঙ্গির ফলে নেতৃত্ব চলে যায় ডানপন্থী মধ্যবিত্ত নেতৃত্বের হাতে। শ্রমিক ঐক্যে বিঘ্ন ঘটা নিয়ে শংকিত ভারতীয় কম্যুনিস্টরা কখনওই ‘নিপীড়িত জাতি থেকে আসা কম্যুনিস্ট ও নিপীড়ক জাতি থেকে আসা কম্যুনিস্টদের দ্বিবিধ ভূমিকার’ লেনিনীয় সূত্রায়নকে খুব দক্ষতার সাথে কাজে লাগাতে পারেনি। নেতৃত্বদায়ী মধ্যবিত্ত কম্যুনিস্টদের উগ্রজাতিয়তাবাদী ‘ইনার কোর’-এর প্রভাব বিস্তারকারী স্পৃহা এর পেছনে মুখ্য কারণ হিসেবে কাজ করেছে। তাই বরাকের ভাষা আন্দোলনের লাগাম যখন চলে আসে মধ্যবিত্ত শ্রেণি ও তাদের প্রধান দল কংগ্রেসের হাতে, তখন স্বাভাবিকভাবেই এই আন্দোলনের কেন্দ্র হয়ে ওঠে শিলচর। ব্যবসা-বাণিজ্য-ক্ষুদ্র উৎপাদন ও বিভিন্ন পেশাকে কেন্দ্র করে যে  মধ্যশ্রেণি তখন গড়ে উঠেছিল, করিমগঞ্জ জেলায় এই শ্রেণিটি ছিল খুবই দুর্বল। দেশভাগজনিত উদ্বাস্তুদের হিন্দু চেতনার প্রভাব বেশ প্রকটভাবেই ছিল এই মধ্যশ্রেণির উপর। উপরন্তু সুজিৎ চৌধুরী তাঁর ‘শ্রীহট্ট কাছাড়ের প্রাচীন ইতিহাস’ গ্রন্থে যেভাবে সিদ্ধেশ্বর কপিলাশ্রমে মন্দির ভিত্তিক অর্চনা এবং বারুণী স্নান --- উচ্চবর্ণ ও নিম্নবর্ণের ধর্মাচারের দুটি সমান্তরাল ধারার টানাপোড়েনকে সুদূর অতীতের ধর্মীয় সংঘাতের ক্ষীয়মান ধারা হিসেবে দেখাতে চেয়েছেন, কাছাড়ের বর্তমান বাস্তব সমাজজীবনেও সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় এই দূরত্ব খুবই প্রকটভাবে বিদ্যমান। তাই বরাকের মধ্যশ্রেণির নেতৃত্বে ভাষিক জাতিয়তাবাদ বরাকের মুসলিমদের এবং এমনকী স্থানীয় তপসিলিদেরও প্রভাবিত করতে ব্যর্থ হয়। দিসপুরের শাসক শ্রেণির সাথে বরাকের বর্ণহিন্দু মধ্যশ্রেণির দ্বন্দ্ব সরকারি সুযোগ-সুবিধার ভাগবাটোয়ারার সংকীর্ণ গণ্ডির মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল, অথচ অন্যান্যদের স্বার্থ ছিল মূলত ভূমিকেন্দ্রিক এবং এক ক্ষুদ্র মুসলিম বিত্তশালীদের উৎপাদনশীল বিনিয়োগের সুযোগের সাথে। তাই আন্দোলনের প্রথম পর্যায়ে মুসলিমদের যে ব্যাপক অংশগ্রহণ ছিল নেতৃত্বের হাত বদলের সাথে এই জনসমর্থনকে ক্রমশঃ দূরে ঠেলে দিতে সমর্থ হয় অসমীয়া উগ্রজাতিয়তাবাদী নেতৃত্বের তল্পিবাহকরা। ফলে কম্যুনিস্ট পার্টির ব্যর্থতার সুযোগে সাম্রাজ্যবাদ ও দেশীয় শাসকদের সাথে আপসকারী পূর্ব-পাকিস্তানের মুসলিম মধ্যশ্রেণি যখন ভাষিক জাতিয়তাকে এক পৃথক রাষ্ট্র গঠনের আন্দোলনে রূপান্তরিত করতে পারল, তখন প্রায় একই প্রেক্ষাপটে বরাকের মধ্যশ্রেণির পৃথক রাজ্য গঠনের দাবি সম্প্রদায়গত শঙ্কা ও সংঘাতের মধ্য দিয়ে সমাপ্ত হল।
উভয়ের প্রেক্ষাপট মোটামুটিভাবে একই বলার পেছনে যে বিষয়গুলি যুক্তিগ্রাহ্য হিসেবে বিবেচিত হতে  পারে তা হলো – এক, প্রায় একই সময়ে উভয় অঞ্চলে ভাষা আন্দোলনের বিকাশ; দুই, উভয়ই একই সাংস্কৃতিক অঞ্চলের অঙ্গ। এব্যাপারে আচার্য নিহাররঞ্জন রায়ের বক্তব্য উদ্ধৃত করা যেতে পারে – “বরাক ও সুরমা নদীর উপত্যকা মেঘনা উপত্যকারই (মৈমনসিং-ত্রিপুরা-ঢাকা) উত্তরাংশ মাত্র। এই দুই উপত্যকার মধ্যে প্রাকৃতিক সীমা কিছু নাই বলিলেই চলে। ......এখনও শ্রীহট্ট-কাছাড়ের হিন্দু-মুসলমানের সমাজ ও সংস্কৃতি বাংলার পূর্বতন জেলাগুলির সঙ্গে একসূত্রে গাঁথা। শুধু তাহাই নয়, লৌকিক ও অর্থনৈতিক বন্ধনও বাংলার এই জেলাগুলির সঙ্গে”। তিন, বহির্বিশ্বের সাথে যোগাযোগের জন্য বাংলাদেশের যেমন রয়েছে সামুদ্রিক জলপথ, তেমনি পশ্চিমবঙ্গের মধ্য দিয়ে বহিঃরাজ্যের সাথে যোগাযোগের জন্য বরাকের রয়েছে বাংলাদেশের স্থলভূমি। সুতরাং বিচ্ছিন্ন হওয়ার আকাঙ্খার মধ্যে ভৌগোলিক বিচ্ছিন্নতার কোন ভীতি ক্রিয়াশীল ছিল না।
রঞ্জিত হসকোতে ও ইলিজা ট্রোজানোয় তাদের “কনফ্লুয়েন্স” গ্রন্থে দেখিয়েছেন যে বাণিজ্যপথ ও নদী-সমুদ্রের সঙ্গমস্থলেই বিভিন্ন ভাষা-সংস্কৃতির সংমিশ্রণ ঘটে ও মহান সভ্যতাগুলি গড়ে উঠে – প্রাচীন আলেকজান্দ্রীয়া এর এক প্রকৃষ্ট উদাহরণ যা এশিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকার সঙ্গমস্থল হিসেবে গড়ে উঠেছে। বরাক উপত্যকা সহ বাংলার পূর্বাঞ্চল এরকমই সঙ্গমস্থলের এক ক্ষুদ্র সংস্করণ যেখানে অনেকগুলো বাণিজ্যপথ ও নদী-সমুদ্র এসে মিলেছে। উপরন্তু উর্বর নদী-উপত্যকা গড়ে উঠার সাথে সম্পর্ক রেখে বাংলার পূর্বাঞ্চল ও বরাক উপত্যকার বিস্তৃত অঞ্চলে লাঙ্গলভিত্তিক সভ্যতার উন্মেষ পশ্চিমবঙ্গের পরে ঘটায় এখানে সভ্যতার এক বিশেষ উপাদান সংযোজিত হয়েছে। এঅঞ্চলে ইসলাম ধর্ম বাঙালির ইসলাম হিসেবে বিকশিত হয়। রিচার্ড এম ঈটন তাঁর ‘দ্য রাইজ অব ইসলাম এন্ড দ্য বেঙ্গল ফ্রন্টিয়ার’ গ্রন্থে দেখিয়েছেন যে এঅঞ্চলে ইসলাম ‘সভ্যতা বিকাশের মতাদর্শ’ হিসেবে -- লাঙ্গলভিত্তিক ধর্ম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। স্থায়ী কৃষির বিকাশের জন্য হিন্দু ব্রাহ্মণদের চেয়ে মোল্লা, হাজী সহ অন্যান্য ইসলাম ধর্মীয় প্রবক্তাদের বসতি স্থাপনের জন্য প্রত্যন্ত অঞ্চলে অনেক বেশি জমি মিলেছিল এবং ফলে জঙ্গল সাফাইয়ে কুঠার, জমি আবাদের জন্য লাঙ্গল, ধর্মীয় মতাদর্শের জন্য ধর্মগ্রন্থ যা বহুলভাবে উপলব্ধ করানোর জন্য ইসলামী সভ্যতার কাগজ তৈরির প্রযুক্তি – এই সব মিলে বাঙালিত্বের সঙ্গে ইসলাম মিশে গিয়েছিল। ফলে এতদঅঞ্চলের বাংলা ভাষার শব্দভাণ্ডারে আরবি-পার্শি শব্দের প্রাধান্য দেখা যায় এবং এই প্রাবল্য সভ্যতা বিকাশের সাথে সংযোজিত হওয়ায় বাংলা ভাষার প্রাণশক্তিকেও বহন করে। ফলে পূববাংলা বা বরাক উপত্যকায় ইসলামের সাথে বাঙালিয়ানার কোন দ্বন্দ্ব নেই। বরাক উপত্যকার ভাষা আন্দোলনে এই দ্বন্দ্ব দেখা দেয় হিন্দু মধ্যশ্রেণির নেতৃত্বের অপরিণামদর্শিতা ও সংকীর্ণতা এবং কম্যুনিস্ট নেতৃত্বের ব্যর্থতার ফলে। একষট্টির ভাষা আন্দোলনের এই পরিণতি বরাকবাসীর সংগ্রামী চেতনার মেরুদণ্ডকেই ভেঙে দিয়েছে। নতুন করে জেগে ওঠা শ্রমিক-কৃষক-ছাত্র আন্দোলনের প্রেক্ষিতে এক সুস্থ জাতিয়তাবাদ আবারও মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে কিনা তা সম্পূর্ণতই নির্ভর করছে নয়া বামপন্থার উত্থানের উপর। 

Some critical questions on left practice

Posted by স্বাভিমান


Some critical questions on left practice
Arup Baisya
 The new phase of structural crisis of capitalism started brewing up in the late sixties or early seventies. Amidst the Cold War framework, the peasant and popular upsurges especially in the third world countries came to the centre stage to set the left activism anew. Lenin envisaged the revolution in developed countries after breaking the weakest link of capitalism in Czarist Russia. But the revolution in China already shifted the focus of revolution from the developed countries to backward countries as centre of gravity for transcendence of capitalism. The socialism building in post-revolutionary China, Soviet practice of socialism vis-à-vis “the really existing socialism” was the inspiration to innumerable left-activists who were like “fish in the water”(Mao’s words) within the resurgence of peasant and popular uprisings unfolded in the backdrop of entry of capitalism in the new phase of structural crisis. The fire of the tumultuous situation did not allow the majority of the practicing left-activists to look back to question the socialist-legitimacy behind the Soviet aggression in the name of exporting socialism and the Chinese practice with lack of democracy. Instead of relying on the inherent logic of capitalism behind imperialism, majority of them were engrossed with the idea of treating ‘socialist state power’ as the basic countervailing factor to challenge capitalism and its highest form, imperialism. This statist outlook veiled the process that strengthens the state power instead of social power necessary for the real socialist transitional project of ‘withering away of state’ to build communist society.

This skewed vision developed within the garb of revolutionary activism and revolutionary zeal to complete the imminent revolution in third world left many questions out of the purview of left discourse within the practicing left circles. After the disintegration of Soviet Russia, and when the facts, hitherto remained unnoticed or discarded being treated as the conspiracy of the capitalist roaders, started pouring out abundantly in a neo-liberal environ from within the Chinese society confirming its reversal from socialist trend, the most of the practicing left became puzzled and started questioning Leninist position on imperialism and Mao’s path of revolution. Instead of dwelling on the ‘really existing capitalism’ and the mistakes in the socialism building process and thus improving the concept of ‘theory and practice’ behind the revolutionary success story to fit in a new set of existing parameters, they preferred to go for a paradigm shift from the Leninist and Mao’s position. The defeatist tendency instilled in the minds of millions of left activists has actually provoked some left intellectuals to delineate the present situation in such a way that being far from Leninist position justifies the left inactivity or activity without the immediate agenda to defeat imperialism and to transcend capitalism. This, at least for the time being, suits the activists to cope with the argument of eternal capitalism.

The three main premises on which the aberrant and skewed vision have its fall out can be identified as (1) the question of imperialist rivalry (2) the socialist democracy (3) the revolutionary organization.

On the first question of imperialist rivalry, a section of the left intellectuals want to describe the current phase of capitalist competition as ‘collaborative competition’ that nullifies the Leninist formulation on imperialist rivalry and war. Aizaz Ahmad asserts an element of fundamental novelty of present situation by stating “the first specificity of this regime (in the United Sates) lies in the fact that, thanks to the dissolution of the Soviet bloc, this is the first time in human history that a single imperial power is so dominant over its rival that it really has no rival, near or far, precisely at the time when it has the greatest capacity to dominate the globe”.1 He further asserts that Lenin’s conception of ‘inter-imperialist rivalry’ arose in the course of a conjunctural analysis required by an intense debate on whether a world war was imminent or not. He also points out, “the specificity of the conjuncture in the imperialism of our time, as different from Lenin’s, is that its core – consisting of advanced capitalist countries – is comprised of neither rivals nor equals”.2 He even rules out the idea of inter-imperialist rivalry being shifted from the Atlantic zone to Pacific zone as less plausible and more or less futuristic. Evidently any form of ‘imperialist rivalry’ in Leninist sense of the term does not hold good in his scheme of things depicting the present time.

Lenin locates the nature of imperialism in the modes of behaviour of monopoly capitalism to protect and increase their profit. Among the essential features of the imperialist stage, according to Lenin, are the economic struggle (or alliances) among sectors of finance capital for division of markets and investment opportunities in the advanced as well as the underdeveloped nations, and the military and diplomatic struggle among the imperialist powers for control and influence over weaker nations, industrialised  as well as non-industrialised. Lenin emphasises imperialism as the culmination of inherent dynamism of capitalism and imperialist rivalry as the extension of the logic of this inherent dynamics rather than as formulation evolving from conjunctural analysis of Lenin’s time. The imperialist rivalry is the basic tenet of capitalism in monopoly phase, the only difference is that at a certain point of time, one power-center may be economically and politically much more powerful than others who may strive to avoid full-blown conflict as a tactical move. But this armistice among the imperialist powers is not a primary feature of the time, rather the intrinsic crisis as well as monopolistic interest set the trend to face one another as rivals to combat. The basic premise of Lenin’s theorisation of imperialism as monopoly stage of capitalism, during which finance capital is in the ascendancy and the imperialist rivalry do hold good in the present time and provide us the necessary framework to analyse the situation unfolding at this juncture. Harry Magdoff describes the features of the post-World War II years as the integration of military production with the dominant industrial sectors, the drive of multinational corporation toward worldwide control of the most profitable and newest industries in both the periphery and advanced countries and the priority of the interest of military-multinational industry on the affairs of the state. He is right when he states, “true, this describes primarily the situation in the united states, but at the same time it outlines the path now being followed in rival imperialist powers – a process that may well be speeded up in view of the weakness now being revealed in the internal and external position of U.S. capitalism”.3

The second premise on which the main stream left discourse that enables the heartbroken left-activists to remain complacence in coping up with the existing system and striving for reform is the question of socialist democracy. This discourse is based on Stalinist theoretical enunciation that withering away of state would occur through its reinforcement and leading role of the party. These two ideas combined give rise to strengthened state-power with the communist party at its overwhelming control. Going by the Stalinist conception, they believe that this state cannot exercise ‘function of repression’ because in the socialist state, exploitation is suppressed, the exploiters no longer exist, there is no one to be suppressed. As the democracy and politics get withered away with the withering away of state as the instrument of suppression and dominance, there cannot be any socialist democracy. So only task on the question of democracy is to attain purest form of bourgeois democracy in a bourgeois state and as a result, the struggle for democracy is limited to rectify the aberration in bourgeois democracy in a bourgeois state, not to extend it. The task of simultaneously weakening the state power and strengthening the social power under the leadership of working class gets obliterated from communist proggramme that revolves around the reformist act of taking corrective measures to attain purest form of bourgeois democracy and then discard the essence of this democracy altogether instead of extending it in the futuristic project of socialism building. Charles Bettelheim writes, “the Stalinist ideology of the state and of its relationship with citizens thus enunciates a double discourse : a “democratic discourse” which is in contradiction with facts and an absolutist and repressive discourse which is a commentary on actual practice. This duality is an expression of a social schizophrenia. It reflects the deep contradictions of an economic and political system which oppresses this masses, subjects them to repression and exploits them with an intensity rarely attained in history”.4  

The third most important aspect that needs to be discussed and debated is the question of communist organisation. The skewed vision on the question of communist organisation can be traced back even to Lenin’s time and as such demands a historical-anecdote of the period of the heydays of communism. This aspect is not restricted to the main stream left only, but extends to the fringe groups who are in essence radical in other fronts. Lenin’s idea of ‘Vanguardism’ is ripe with implications that can arrest the process of working class self-consciousness. Being the vanguard, the communist party and its activist-leaders are indoctrinated as the infallible mass-leaders who only bear the knowledge to lead the civilization ahead. Mao’s idea of communist activist as ‘the fish in the water’, though a better extension of vanguardist idea, is also problematic in initiating the process of development of mass-consciousness. This metaphor that symbolises communist organiser as ‘fish’ and society as ‘water’ is closely inter-related with the question of being declassed. As the fish can be brought from outside and thrown into the stagnant water, a communist activist becomes leader of the working class from outside and it does not entail the communist who is evolved from within the class and the mutual interaction between the activist and society to ensure the raising of self-consciousness of working class. As the activists constitute the basic foundation of the party-strength, the party is bestowed with responsibility to train them who in turn repose high esteem to the party high-ups for preparing the theoretical materials to train them. Thus the social division of mental and physical labour starts replicating itself within the party life and sets the ground for cultism. Recently the ruminations on this question are becoming visible within the practicing left circle, after the demise of “really existing socialism” and extreme loss of ground and discredit of the main stream left forces. It is now being felt that the organisational practice of the communists till date is not in keeping with the Marxist concept of withering away of state and politics. So keeping in view the Lenin’s theoretical concept of consciousness to the masses from without and proletarian vanguard, Stalinist practice, Gramsci’s concept of organic intellectual and Rosa Luxembourgian critiques, this organizational question needs to be discussed & debated at length.

On the organization question, Luxemburg took an overall organic view. Her polemics against Lenin can be understood when she says, “let us speak plainly, historically, the errors committed by a truly revolutionary movement are infinitely more fruitful and more valuable than the infallibility of the best of all possible central committees”.5 But        over-dependence on spontaneity may distract the party organiser from its educator role and transform the party-leaders into quotidian activists in a sterile situation or quixotic in a vibrant situation with a built-in ‘empiricist outlook’. That Luxemburg was aware of this is clear from her passage that states, “On the one hand, we have the mass; on the other, its historic goal, located outside the existing society. On one hand, we have the day-to-day struggle; on the other, the social revolution. Such are the terms of the dialectical contradiction through which the socialist movement makes its way. It follows that this movement can best advance by taking betwixt and between the two dangers by which it is constantly being threatened. One is the loss of its mass character; the other the abandonment of its goal. One is the danger of sinking back to the condition of a sect; the other, the danger of becoming a movement of bourgeois social reform. That is why it is illusory, and contrary to historic experience, to hope to fix, once for always, the direction of the revolutionary socialist struggle with the aid of formal means, which are expected to secure the labour movement against possibilities of opportunist digression”6.              Like Lenin, Gramsci also finds the remedy of the problem in democratic centralism. But in his opinion, democratic centralism must be elastic, it comes alive in so far as it is continuously interpreted and adapted to necessity. It needs continual renewal. Democratic centralism, again, must be ‘organic’ in the sense that both the leaders and the rank and file must obey the rule of democracy. So the central core of the organizational problem lies on the question of organic nature of party members and the continuously evolving and extending the party democracy vis-à-vis overall democracy. It must be emphasized that the evolving consciousness of the masses should transform their status from object of history to the subject with the withering away of the party itself and in this context,  mass-action is to be given utmost importance as Rosa Luxemburg envisaged.

Notes :
(1)   Iran, Afghanistan : The Imperialism Of Our Time, by Aijaz Ahmad, LeftWord Books, March 2005, page 239. italic words in parenthesis are additions of the author of this article.
(2)  Ibid, page 242.
(3) Imperialism : From the Colonial Age to the Present, by Harry Magdoff, Monthly Review Press 1978. page 111.
(4) Cass Struggle in the USSR, Third Period : 1930-1941, Part 2: The Dominators, by Charles Bettelheim, T R Publication Pvt Ltd 1996, page 17
(5) Readings in Revolution and Organization : Rosa Luxemburg And Her Critic : Selected and Introduced by Sobhanlal DattaGupta, Pearl Publishers, September 1994, page 139.
(6)  The Rosa Luxemburg Reader, edited by Peter Hudis & Kelvin B. Anderson, Cornerstone Publication August 2005, page 263.  

স্বাভিমান:SWABHIMAN Headline Animator

^ Back to Top-উপরে ফিরে আসুন