Comments on the relevance of 19th may in today's perspective for a local weekly tabloid "Borak Kontho". This is published in this blog to invite right- minded people to extend this brief comment & to critically analyse further to set an anti-imperialist perspective of our future language movement.
বরাক কণ্ঠের জন্য ঃ
১৯শে মে’র উত্তরাধিকার ও কিছু প্রাসঙ্গিক মন্তব্য -- অরূপ বৈশ্য
১৯শে মে দিনটি জড়িয়ে গেছে আমাদের ভাষা-সংস্কৃতির ঐতিহ্যের সাথে। এই ঐতিহ্যের ধ্বংস – উদঘাটন – (পুনঃ)নির্মাণ নিরন্তর চলতে থাকে যতক্ষণ না এক চূড়ান্ত হিসেব-নিকেশের সমাপ্তি ঘটে। এই চূড়ান্ত হিসেব-নিকেশের আগে অলস স্মৃতিমেদুরতা বিনাশের শক্তিকেই মদত যোগায়। বরাকের বোদ্ধারা সবসময়ই পশ্চিমের দিকে ধাবমান। আগে পশ্চিমবঙ্গ – এখন পূর্ববঙ্গ – আমাদের কাছে উভয়ই পশ্চিম। আলাদা আলাদা গোষ্ঠীতে এখন যেভাবে বাংলাদেশ পাড়ি জমে উঠছে – তাতে মনে হতে পারে ১৯শে মে’র ও ২১শে ফেব্রুয়ারির দুই স্রোত মিলতে চলেছে মহাসাগরের দিকে। পথিমধ্যে সমস্ত বাধাবিঘ্ন পেরিয়ে যদি এই স্রোত এগিয়ে যেতে পারে – তাহলে এই স্রোতে তরি ভাসাতে কে না চাইবে? উদ্বেলিত হওয়ার কোন কারণ নেই – কারণ এহো বাহ্য। বরাকের সমাজের অন্তরাত্মা এই স্রোতের কলতান শুনতে পায় না। বরাকের বুদ্ধিজীবী সমাজ দিসপুর লবির সাথে টেক্কা দিতে একদা কলকাতার আশ্রয়ে – সেখান থেকে বিমুখ হয়ে এখন ঢাকার আশ্রয়ে। এভাবে পশ্চিমদিকে পূববাংলামুখো যাত্রার পেছনে চালিকাশক্তিটি কী? ঐক্যের জন্য বৃহত্তর সামাজিক চাপ, না ঐক্যের সামাজিক বাতাবরণ তৈরি করার সচেতন চাহিদা? প্রথম সম্ভাবনাকে এক কথায় নাকচ করে দেওয়া যায় – কারণ বরাকের সামাজিক পরিস্থিতি, যেখানে নির্বাচন হয় হিন্দু-মুসলিম পরিচিতির ভিত্তিতে, তার সাথে এই সম্ভাবনা খাপ খায় না। দ্বিতীয় সম্ভাবনা নিয়েও অনেকেই সন্দিহান। সদিচ্ছার দিক থেকে সন্দেহের অবকাশ যদি নাও থাকে, কার্যকারিতা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ নিশ্চতভাবে রয়েছে।
১৯শে’র ২১শে যাত্রা জোর পেয়েছে ২০১০-এ, যখন বাণিজ্য নিয়ে ইন্দো-বাংলাদেশ চুক্তি হয় এবং বরাক উপত্যকা ও পার্শ্ববর্তী রাজ্যের সাথে বাংলাদেশের পরিবহন বাণিজ্যের সম্ভাবনা নিয়ে এক উজ্জ্বল ছবি এশিয়ান ডেভেলাপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) রিপোর্টে প্রকাশ পায়। বাণিজ্যে বসতি লক্ষ্মী। ভাষা-সাহিত্য-সংস্কৃতি নিয়ে বাণিজ্যের সাগরে জাহাজখানি তো ভাসাতেই হবে। কিন্তু এই বাণিজ্যের শক্তি দিয়ে দিসপুর লবির সাথে টেক্কা দেওয়ার স্বপ্ন বোধহয় ১৯শে’র উত্তরাধিকারি বৌদ্ধিক গোষ্ঠীর অধরাই থেকে যাবে। কারণ বাংলাদেশ তার বাণিজ্যিক স্বার্থ চীন-নেপাল-বার্মাকে বাদ দিয়ে দখবে না এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বাণিজ্যিক পরিবহনের এডিবি’র ভাষ্যে বাংলাদেশ খুব একটা আস্থা রাখবে না। বাংলাদেশ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মূল কেন্দ্র আসামকে সাথে নিতে চাইবে এবং সেজন্য তাদের শুধু দিল্লি নয়, দিসপুরকেও সাথে নিতে হবে। উপরন্তু, বরাকের সমাজ জীবনে কোন ইতিবাচক পরিবর্তন আনার ক্ষেত্রে এই প্রক্রিয়াটি সম্ভবত বন্ধ্যা।
এ হলো ১৯শে’র ঐতিহ্য চর্চার একটি কাহিনি। অন্য কাহিনিটি ভয়ংকর। সেই প্রক্রিয়া ঐতিহ্যকে ধ্বংস করে দিতে চায়। আধুনিকতার নামে তারা মাতৃভাষার জায়গা ইংরেজিকে দিতে চায়। যাহা চিরন্তন – যাহা সমসাময়িক – তাহাই আধুনিক – এই ধারণা তারা মানতে নারাজ। তাদের মতে পুঁজির কাছে যা প্রয়োজনীয়, বাজারের জন্য যা প্রযোজ্য, রাষ্ট্রের জন্য যা বাধ্যবাধকতা তাহাই আধুনিক। উত্তর-আধুনিকের কথা না হয় বাদই দিলাম। আধুনিকতা নির্ধারণেই যখন এতো জটিলতা – তার উত্তর পুরুষদের তো বোঝা মুস্কিল। এই তথাকথিত আধুনিকতার যুক্তির জালে জনগোষ্ঠীর ৯০% অশিক্ষা, হাভাতে, হাড়জিরজিরে, জরাজীর্ণতায় আক্রান্ত। বাকী ১০% ইংলিশ-বুলিতে তরতরিয়ে স্বর্গের সিঁড়ি আরোহণে বিভোর – তবে তাতে যে ঠেলাধাক্কা, সিঁড়ি ভেঙে পড়ার সম্ভাবনা প্রবল। বরাক উপত্যকার সমাজ জীবনের জন্য এই প্রক্রিয়াটি যে ধ্বংসাত্মক তাতে কোন সন্দেহ নেই।
১৯শে চর্চার আসল কাহিনিটি হচ্ছে পুনঃনির্মাণের কাহিনি – যা এক প্রাণবন্ত গঠনমূলক হিসেব-নিকেশে পরিগণিত হতে পারে। তবে তা এখনও বেশিদূর এগোয়নি – শুধু বলা যায় ‘আমাদের গল্প হলো শুরু’। ৬১’র ভাষা আন্দোলন নিয়ে যেটুকু ইতিহাস চর্চা হয়েছে তার নির্যাস নিয়ে অনেকেই বরাকের সামাজিক দ্বন্দ্বগুলির দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করেছেন। কিন্তু এই দ্বন্দ্বগুলির সমাধানের দিক-নির্দেশ বা করণীয় কাজ সম্পর্কে চর্চা করার ব্যাপারে বৌদ্ধিক মহলে অনীহা রয়েছে। এই অনীহা আসলে আধিপত্যের প্রশ্নের সাথে যুক্ত। উপর থেকে কোন এক প্রক্রিয়া যদি এই দ্বন্দ্বগুলিকে দমিয়ে (সমাধান নয়) দিতে পারে, তাহলে বর্তমান আধিপত্যের কাঠামোয় কোন ব্যাঘাত ঘটে না। এখন যারা দিল্লি-দিসপুরের তাবেদার নেতৃত্ব – তারা বরাকভূমির সুবেদারি চাইছেন। এই তাবেদারদের মাড়িয়ে দিয়ে এক গণ-প্রক্রিয়া শুরু করার ব্যাপারে আমাদের বৌদ্ধিক সমাজ খুব একটা আগ্রহী নয়। তবে এখন একথা স্বীকার করা হয় যে হিন্দু-মুসলিম, স্থানীয়-অস্থানীয়, সবর্ণ-অসবর্ণ, বাঙালি-অবাঙালি ইত্যাদি দ্বন্দ্বকে দূর করার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে এগোতে হবে। কিন্তু এই দ্বন্দ্বগুলির বাস্তব স্বরূপ, তার সমাধানের পথ এবং এই লক্ষ্যে উদ্যোগ নেওয়ার ব্যাপারে বৌদ্ধিক মনোনিবেশ একেবারেই সীমাবদ্ধ। অথচ এটাই একমাত্র ১৯শে মে’র ঐতিহ্যের সুস্থ গণতান্ত্রিক পুনঃনির্মাণের পথ – যা প্রাণবন্ত সমাজ গড়ার লক্ষ্যে বরাকের সমাজ জীবনে সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলতে পারে।
0 comments:
Post a Comment