আমাদের সমকালের জন্য অনীক লস্করের লেখা ধারাবাহিক গল্পের এটি হচ্ছে ষষ্ঠ পর্ব

Posted by স্বাভিমান

মন্ত্রমুগ্ধ
(আমাদের সমকালের জন্য অনীক লস্করের লেখা ধারাবাহিক গল্পের এটি হচ্ছে ষষ্ঠ পর্ব। পঞ্চম পর্বের শেষে মাথায় আঘাত লেগে কুলেন্দ্র অচেতন, তারপর .........) 
জ্বরের ঘোরে কুলেন্দ্র বিড় বিড় করে। ‘ওই উঠ, ফেয়ারওয়েল ফাংশনঅ জাইতে নায় নি’ – রণেনের ডাকে কুলেন্দ্র সাড়া দেয় না। শিলচরের বহুতল ফ্ল্যাট বাড়ির একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়েছে তারা চার বন্ধু। ফ্ল্যাটের মালিকনি থাকেন ওই বাড়িরই আরেকটি ফ্ল্যাটে। রণেন সহ তাদের তিনজনের আগের থেকেই পরিচয় ছিল। তারা চারবন্ধু মিলেই প্রথমে ভাড়া নিতে চেয়েছিল, কিন্তু তাদের মধ্যে একজন মুসলিম বন্ধুকে বাড়ির মালিকনির আপত্তিতে মধুরবন্দের কোন এক বাড়িতে ভাড়া নিতে হয়। ‘আমার কোন আপত্তি নাই, কিন্তু সমবায় সমিতির অন্য সদস্যরা পরে ক্যাচাল করতে পারে, তোমরা আর কেউরে জোগাড় কইর‍্যা নেও’ – মালিকনির এই কথা সরাসরি তাদের বন্ধুকে তারা জানায়নি। ওই বন্ধুটি শহরতলির মধুরবন্দে নিজে থেকেই ঘর খুঁজে নিয়েছে, হয়ত এই নিয়ম সে আগে থেকেই আঁচ করতে পেরেছে। অগত্যা আরেকজন সাথীর জন্য তাদের অপেক্ষা করতে হয়। হপ্তাদিনের মধ্যেই ঘর খুঁজতে আসা তাদের সমবয়সী একজন জুটে যায়। ওই নতুন বন্ধুটির মা ছোটভাইকে নিয়ে লক্ষীপুরের গঞ্জ-শহরে থাকেন। তার বাবা দাদুর একমাত্র সন্তান। দিদা তার জন্মের আগেই মারা গেছেন। তার দাদু বরাক নদির ওপারে কয়েক কিয়ার ক্ষেতের জমি বাগি দিতেন, তাতে বছরের পরিবারের চালের সংকুলান তো হতোই, কিছু বিক্রিও করতেন। এছাড়া লক্ষিপুর বাজারে ছিল একটি স্টেশনারী দোকান যা তিনি নিজে দেখাশোনা করতেন। তার বাবা বিএ পাশ করার আগেই প্রেম করে বিয়ে করে ফেলেন। তার কয়েকবছর পর তার  দাদুও মারা যান। জমি ও দোকান থেকে আয়ও কমতে থাকে। এছাড়া দোকানকে আরও বড় করার জন্য ব্যাঙ্ক থেকে কিছু ধার নিয়েছিলেন তার দাদু। দাদু অকস্মাৎ মারা যাওয়ায় পরিবারে খানিকটা আর্থিক সংকটও দেখা দেয়। কিন্তু দাদুর মৃত্যুর কয়েক বছরের মধ্যেই তার বাবা এসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে যান। জমি ও দোকান বিক্রি করে লক্ষীপুরেই ভাল সরকারি পদে চাকরিও জুটিয়ে নেন। সে তখন নেহেরু কলেজে উচ্চ-মাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। একবছরের মধ্যেই তার বাবা তারজন্য মোটর সাইকেল কিনে দেন, লক্ষীপুরের বাড়িকেও খানিকটা আধুনিক করে তোলা হয়। মাস্টার বেডরুম সংলগ্ন টয়লেট ও বাথরুম, ছেলেদের জন্য পৃথক ঘর, গ্যাস্টরুম, সবার জন্য আরেকটি আধুনিক টয়লেট ও বাথরুম বানানো হয়, যদিও মূল কাঠামোটা আসাম-টাইপই রেখে দেওয়া হয়। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই তারা এই পরিবেশে হাফিয়ে উঠেন। বড় মাপের অফিসার ও তার পরিবারের সদস্যরা পরশিদের সাথে আর আগের মত খোলাখুলি মেলামেশা করতে পারেন না। সাক্ষাতে সৌজন্যমূলক আলাপচারিতা থাকলেও, আগের মত বাড়িতে আনাগোনা একেবারেই বন্ধ। দুপক্ষেরই বাধো বাধো ঠেকে। বাড়িতে অফিসের গাড়ি থাকে, থানার কর্তারাও তদ্বির করতে গাড়িটারি নিয়ে আসেন। এভাবে লক্ষিপুরে থাকাটা তাদের কাছে বেশ মুস্কিল হয়ে উঠে, এছাড়া ছেলের পড়াশোনার জন্যও শিলচরে চলে যাওয়া জরুরি। তাই শিলচরে একটি ভাল ফ্ল্যাট কেনার জন্য খোঁজখবর করতে শুরু করেন তার বাবা। কিছুদিনের মধ্যেই শিলচর অম্বিকাপট্টিতে একটি ভাল ফ্ল্যাটের সন্ধানও পেয়ে যান। পরিবারকে শিলচর পাঠিয়ে দিয়ে তিনি লক্ষীপুরে থাকবেন এবং শনি-রোববারে ছুটিতে শিলচর যাবেন - এরকমই এক পরিকল্পনা মাথায় রেখে শিলচরে ফ্ল্যাট কেনার সিদ্ধান্ত নেন তার বাবা। কিন্তু এভাবেই একদিন ফ্ল্যাট দেখে শিলচর থেকে লক্ষিপুর ফেরার পথে এক অভাবনীয় পথ-দুর্ঘটনায় তার বাবার মৃত্যু হয়। ঘটনার এই আকস্মিকতায় সবকিছু ওলটপালট হয়ে যায়। বাবার পরিচিতদের সহায়তায় ওই অফিসেই তার মার কেরাণির চাকরি জোটে যায়। তাতে দুই ছেলের পড়ার খরচ ও সাংসারিক ব্যয় সংকুলান হয়, কিন্তু সৌখীন জীবন যাপনে রাশ টানতে হয়। পড়শিদের সাথে গুমোট ভাবটাও ধীরে ধীরে কাটতে শুরু করে। অগত্যা লক্ষীপুরেই তাদের থেকে যেতে হয়, এছাড়া তাদের গত্যন্তরও ছিল না। কলেজের পাঠ সাঙ্গ করে বড় ছেলে বিজন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়, পাকেচক্রে কুলেন্দ্রদের সাথে চারজনের এই মেসে সে আশ্রয় নেয়।
উল্টোদিকের ফ্ল্যাটের পলাশ স্যারকে দেখলেই কুলেন্দ্রর পিত্তি জ্বলে যায়। সুঠাম গঠন,  শিলচরের অভিজাত কলেজের পঞ্চাশোর্ধ্ব এই অধ্যাপক সকাল-বিকেল দু’বেলা দুই ব্যাচ ছাত্র পড়ান। বিকেলের ব্যাচ পড়ানো শেষ হলেই, কুলেন্দ্রদের মেসে এসে উপদেশ দেওয়া তাঁর রুটিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমনিতে সবসময়ই এক কৃত্রিম গাম্ভীর্য বজায় রাখেন। চলনে-বলনেও রয়েছে তার গাম্ভীর্য। মেপে কথা বলেন, মেপে হাসেনও। মেসে এসে বেশিক্ষণ থাকেন না, যতক্ষণ থাকেন ক্যারিয়ার সংক্রান্ত উপদেশ দিয়ে যান, কুলেন্দ্ররা সবসময়ই শ্রোতা। হাজার হোক অধ্যাপক, তাঁর অভিজাত বংশবৃত্তান্ত তিনি প্রথম দিনই দিয়ে রেখেছেন। ক্যারিয়ারের বিষয় নিয়ে কুলেন্দ্র ছাড়া বাকী তিনজনকে নিয়েই তিনি বেশি চিন্তিত। বিশেষ করে বিজনের প্রতিই তাঁর আগ্রহটা একটু বেশি, কারণ প্রথম দিন বিজনের মা যখন এসেছিলেন এই অধ্যাপকও সেখানে উপস্থিত। অধ্যাপক জানতে পেরে বিজনের মা বিজনের প্রতি খেয়াল রাখার জন্য তাঁকে বিশেষ অনুরোধ করেন। সে থেকে বিজনের প্রতি তাঁর একটু বেশি নজর। তাঁর ধারণা কুলেন্দ্রর বিশেষ চিন্তার কারণ নেই, কারণ জাতি-কোটা থাকার সুবাদে তার কিছু একটা জুটে যাবে, নিদেনপক্ষে গ্রামে ফিরে গিয়েও রোজগারের কিছু একটা বন্দোবস্ত করতে পারবে। কিন্তু শিলচরের এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করে বাকীদের ভবিষ্যত অনিশ্চিত। বাকী তিন বন্ধুই উঁচু পদে সরকারি চাকুরীয়ান পরিবার থেকে আসা, সুতরাং তাদেরকে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। তাঁর ধারণা এসংক্রান্ত টিপস দেওয়ার ক্ষমতা তিনি ছাড়া এঅঞ্চলে আর কোন অধ্যাপকের নেই। উপদেশের পর তিনি যখন গাত্রোত্থান করেন, তাঁর গাম্ভীর্যপূর্ণ তাচ্ছিল্যভরা মুচকি হাসি কুলেন্দ্রর গায়ে যেন আগুন ছিটিয়ে দেয়। বিজনও তাঁকে সহ্য করতে পারে না, কিন্তু কুলেন্দ্রর তাঁর প্রতি প্রচণ্ড চাপা ক্রোধ নিয়ন্ত্রণে রাখতে গিয়ে মস্তিষ্কে বিস্ফোরণ ঘটে। সে দু’হাত তুলে তাঁর গলা লক্ষ্য করে এগিয়ে যায়, মনে মনে গালি পাড়ে, ‘শালা টিচারি দেখাইতে আইছে, চুতমারানির শাড়াশি রগ ছিড়ি লাইতাম’।
কুলেন্দ্রদের মেসের বাদিকের ফ্লেটে থাকেন সত্তর ছুঁই ছুঁই এক বৃদ্ধ, তাঁর ছেলে, ছেলের বউ ও নাতি। এই বৃদ্ধের সাথে কুলেন্দ্রর বেশ ভাব হয়ে যায়। কুলেন্দ্র যেদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে যায় না, সেদিন এই বৃদ্ধের সাথে গল্প করে কিছু সময় কাটায়। চাকুরীয়ান ছেলে, ছেলের বউ ও নাতি যে যার কাজে বেরিয়ে যায়, বৃদ্ধ দিনের বেলা একাই থাকেন। ছেলে ব্যাঙ্কে চাকুরি করে, বউ শিক্ষিকা ও নাতি পলিটেকনিক পাশ করে এক আইটি কোম্পানীর স্থানীয় ম্যানেজার হিসেবে কাজ করে। মোবাইল টাওয়ার নির্মাণ ও মেরামতির কাজ দেখাশুনা করা, জমি অধিগ্রহণের জন্য প্রশাসনিক দপ্তরে তদ্বির করা এগুলো কাজ করতে গিয়ে তাকে বরাক উপত্যকার বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাঘুরি করতে হয়। তাই দশ হাজার টাকা ফিক্সড সেলারি ছাড়া টিএ-ডিএ মেলে, ঠিকাদারদের থেকেও কিছু উপরি পাওনা জুটে। কিন্তু ভবিষ্যত সুরক্ষিত না হওয়ায় সে অন্য কোম্পানীতে চাকরির চেষ্টায় আছে। বৃদ্ধের নামে শিলচরেই আরেকটা বাড়ি আছে যেখানে ছোট ছেলে তার পরিবার নিয়ে থাকে। দুই মেয়ে বিয়ে হয়ে অন্যত্র চলে গিয়েছে। ছোট ছেলে ও ছেলের বৌ মাঝে মাঝে ঐ ফ্ল্যাট বাড়িতে আসে। ওরা যেদিনই আসে, বন্ধ কপাটের ওপাশ থেকে চিৎকার চেঁচামেঁচির আওয়াজ শোনা যায় – বোঝা যায় কিছু একটা নিয়ে জোর তর্কাতর্কি চলছে। কুলেন্দ্রর ঔৎসুক্য বাড়তে থাকে। বৃদ্ধের সাথে পরিচয়ের পর সে রহস্য জানতে পারে। প্রথম দিনেই এই বৃদ্ধের প্রতি কুলেন্দ্রর এক মমত্ববোধ জাগ্রত হয়। বৃদ্ধ তাঁর অতীত নিয়ে যখন কথা বলেন তাঁর মুখাবয়বে এক তৃপ্তির ভাব ফুটে উঠে – বলিরেখাগুলি একে অপরের সাথে বিকর্ষিত হয়ে উজ্জ্বল ত্বকের ঝলক দিতে থাকে। সিলেটে বৃদ্ধের বাবার জমিদারি ছিল। গ্রামের পাঠশালা ও মফঃস্বল শহরের উচ্চতর-বিদ্যালয়ে পড়ার সময় তাঁর  ছায়াসঙ্গি ও সবচাইতে অন্তরঙ্গ বন্ধু পাশের বাড়ির আমিনূলকে নিয়ে অনেক মজাদার ঘটনার কাহিনী শোনান তিনি। দেশভাগের বলি হয়ে ওপারে চলে আসার কথা বলতে গিয়ে তাঁর চোখেমুখে শোকের অভিব্যক্তি ফুটে উঠে, আবার পরক্ষণেই উৎফুল্ল হয়ে বলেন, ‘অই আমিনূলের মদতেই কিছু অস্থাবর সম্পত্তি আমি ইফার নিয়ে আইতে পারছি, কিন্তু ওখন মনে হয় ওইটাউ কাল হইছে – খালি হাতে আইলেউ বালা আছিল’। সেই অস্থাবর সম্পত্তি বিক্রি করে শিলচরে জমি কিনে বাড়ি বানান এবং টুকটাক ব্যবসা করে কিছু আয়েরও বন্দোবস্ত হয়। পরবর্তীতে যুদ্ধের বাজারে আর্মি-সাপ্লাই দিয়ে বেশ কিছু অর্থ উপার্জন করেন এবং চার ছেলে মেয়ে নিয়ে ছ-জনের পরিবারে সচ্ছলতা আসে। ছোট ছেলে পড়াশুনা সাঙ্গ করে কনস্ট্রাকশন কোম্পানী খুলতে চায়। ইদানীং বড় বড় কোম্পানীগুলো বিভিন্ন ধরনের কনস্ট্রাকশনের কাজের বরাত নিচ্ছে এবং তারা স্থানীয় ঠিকাদার কোম্পানীদের উপ-ঠিকা দিয়ে দেয়। একাজে এখন ভালই মুনাফা। তাছাড়া সড়ক নির্মাণ, বিভিন্ন ধরনের টাওয়ার লাইন বানানো ইত্যাদি ক্ষেত্রে যদি প্রশাসন ও গ্রামীণ দালালদের নেটওয়ার্কিং-এর কাজটা করা যায় জমি-অধিগ্রহণের ক্ষেত্রেও ভাল কামিয়ে নেওয়া যায়। কোম্পানীর পরিকাঠামোর জন্য এক মোটা অঙ্কের অর্থ চাই। ছোট ছেলের দাবি বাড়ির অর্ধেক জমি বিক্রি করে এই অর্থ তাকে দিতে হবে। কিন্তু বৃদ্ধ কিছুতেই রাজি নন – সিলেটের বাড়ি ছেড়ে এসে তিলে তিলে আজকের এই আবাস গড়ে তুলেছেন যার প্রতি তাঁর একধরনের আসক্তি জন্মে গেছে। এনিয়ে বাড়িতে প্রতিদিন অশান্তি। ছোট ছেলের অভব্য আচরণ মাত্রা ছাড়িয়ে যায় এবং বাধ্য হয়ে বড় ছেলের পরিবারের সাথে তিনি এই ফ্ল্যাটে চলে আসেন। এই ফ্ল্যাট কেনার সময় তিনি তাঁর ব্যাঙ্কে জমা অর্থের পুরোটাই দিয়ে দেন। বড় ছেলে সামান্য লোন নেয় এবং ফ্ল্যাটটা তার ও তার স্ত্রীর যৌথ মালিকানায় কেনে। বাড়ি ছেড়ে এসে তিনি ছোট ছেলের দাবি মেনে নেবেন বলে মন স্থির করে ফেলেন। যেহেতু ব্যাঙ্কের জমা অর্থ তিনি বড় ছেলেকে দিয়ে দিয়েছেন, তাই ছোট ছেলে এখন পুরো বাড়িটাই দাবি করতে শুরু করে। এতে দুই ভাইয়ে তুমুল বাক-বিতণ্ডা বেঁধে যায়। দুই ভাই শেষ পর্যন্ত তাকেই দোষী সাব্যস্ত করে এবং কলহের তীর তাঁর অকর্মণ্যতাকেই আক্রমণ করে বসে। তিনিও ধীরে ধীরে নিজেকে অকর্মণ্য ভাবতে শুরু করেন, পিতা-পুত্রের সম্পর্কের মাধ্যম যে সর্বনাশা সম্পত্তি তার ধ্বংসের মধ্যেই মুক্তির পথ খোঁজেন। সম্পত্তিহীন কুলেন্দ্র এই বৃদ্ধের হাত ধরে টান দেয়। দুজনে দ্রুত পায়ে হাঁটতে শুরু করে। আঁধার কালো টানেলের মধ্য দিয়ে হাঁটছে তো হাঁটছেই, যতই এগোয় টানেল শেষে আবছা আলোর রেখা ততই দূরে চলে যায়। হাঁটতে হাঁটতে কুলেন্দ্র হাঁফাতে থাকে, বৃদ্ধ তার গায়ে এলিয়ে পড়ে পা টেনে টেনে চলেছেন। হঠাৎ বিকট আওয়াজে টানেলটি ফেটে যায়। ব্লাস্টিং-ব্লাস্টিং, জগদ্দল পাথর ভাঙার ব্লাস্টিং। চোখের সামনে বৃদ্ধ ও অধ্যাপকের মৃতদেহ। কুলেন্দ্র চিৎকার দিয়ে লাফিয়ে উঠে। ঘামের জলে পুরো বিছানা ভিজে উঠেছে। গাঁয়ের মাঠ থেকে দমকা হাওয়া জোৎস্নার আলোর সাথে মাখামাখি করে খোলা জানালার ফাঁক দিয়ে কুলেন্দ্রর বিছানার উপর আছড়ে পড়ে। কুলেন্দ্রর দেহের তাপ নেমে গেছে – শরীর হীম-শীতল, মন্ত্রমুগ্ধের মত কুলেন্দ্র আবার বিছানায় নেতিয়ে পড়ে।
       

বিমা ক্ষেত্রে বিদেশি বিনিয়োগ কার স্বার্থে

Posted by স্বাভিমান

বিমা ক্ষেত্রে বিদেশি বিনিয়োগ কার স্বার্থে
অরূপ বৈশ্য

যুগশঙ্খ, ৪ আগস্ট সংখ্যা
আর্থিক সংস্কার কর্মসূচী
বিমা প্রকল্প বিশেষ করে জীবন বিমা হলো এক দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি যার নিয়ম মেনে পলিসি-হোল্ডারদের ভবিষ্যত দাবি অনুযায়ী বিমাকারী অর্থ আদায় দেয়। জনগণের ভবিষ্যত সামাজিক সুরক্ষার জন্য এই সঞ্চয় দীর্ঘমেয়াদি হওয়ায় বিমা প্রকল্পে জমা অর্থ দেশের উন্নয়নমূলক কাজে বিনিয়োগ হয় ও জাতীয় পুঁজি গঠনে সহায়তা করে। যেহেতু জাতীয় উন্নয়নের জন্য সরকারই একমাত্র দায়বদ্ধ ও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে উত্তরদায়ী, তাই এভাবে সঞ্চিত জনগণের অর্থের উপর জাতীয় স্বার্থে সরকারেরই নিয়ন্ত্রণ থাকা উচিত। ভারতবর্ষে কল্যাণকামী রাষ্ট্রের এই ধারণা বদলাতে শুরু করে যখন ১৯৯১ সালে সে সময়কার কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী মনমোহন সিং নয়া আর্থিক নীতির অধীনে কাঠামোগত পুনর্গঠন বা আর্থিক সংস্কার কর্মসূচী  চালু করেন। স্বাধীনতা-উত্তর পর্যায়ে মিশ্র-অর্থনীতির নামে ভারতীয় রাষ্ট্র পুরোনো বিদেশি প্রযুক্তি ও ভারী যন্ত্রপাতি আমদানির উপর নির্ভরশীল এক পুঁজিবাদী পথ অনুসরণ করায় আমদানী-রপ্তানী ভারসাম্যের প্রশ্নটি সংবেদনশীল হয়ে পড়ে। বর্তমানে যা আমদানী করা হয় তা যাতে ভবিষ্যতে নিজ দেশে উৎপাদন করা যায় অর্থাৎ ইমপোর্ট সাবস্টিট্যুশনের নীতির কথা মুখে বলা হলেও স্বার্থান্বেষি শ্রেণির মন জয় করার জন্য এই নীতি বাস্তবায়নে অভ্যন্তরীণ কাঠামোগত বাধাগুলি দূর করার কোন সদিচ্ছা দেখানো হয় না। ফলে নব্বইয়ে তেলের মূল্যবৃদ্ধি হওয়ায় রপ্তানী থেকে আমদানীর পাল্লা ভারী হয়ে পড়ে ও বিদেশি মূদ্রার অভাব দেখা দেয় যা নব্বইয়ের ‘ব্যালেন্স অব পেমেন্ট ক্রাইসিস’ হিসেবে বহুল পরিচিত। ফলে ভারত সরকারকে কাঠামোগত পুনর্গঠন বা আর্থিক সংস্কার কর্মসূচীর শর্তে আইএমএফ-ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্ক থেকে ধার নিতে হয়। এই শর্তাবলির মধ্যে প্রধান শর্ত হচ্ছে এই যে ভারত সরকারকে সবকিছু থেকে সরকারি নিয়ন্ত্রণ উঠিয়ে দিতে হবে এবং দেশি-বিদেশি ব্যাক্তি পুঁজিকে অবাধ মুনাফা করার সুযোগ করে দিতে হবে। এই উদার আর্থিক নীতির নিয়ম মেনেই ২০০০ সালে বিমা ক্ষেত্রে ব্যাক্তি মালিকানার ও ২৬% পর্যন্ত বিদেশি পুঁজি বিনিয়োগের অনুমতি দিয়ে আই.আর.ডি.এ আইন, ২০০০ জারি করা হয়।

দ্বিতীয় প্রজন্মের সংস্কার
বিদেশি বিনিয়োগ দু’ভাবে হতে পারে। কোন বিদেশি কোম্পানী দেশিয় কোম্পানীর শেয়ার সরাসরি নির্দিষ্ট কোম্পানী থেকে কিনে নিতে পারে এবং সেক্ষেত্রে সেই কোম্পানীর বোর্ডের ও পরিচালনার অংশীদার হয়ে যাবে। আবার শেয়ার বাজার থেকে পোর্টফোলিও বিনিয়োগের মাধ্যমে সেই বিমা কোম্পানীর শেয়ার কিনে নিতে পারবে এবং সেক্ষেত্রে কোম্পানী বোর্ড ও ম্যানেজম্যান্টের কোন অংশীদার হতে পারবে না। সেবি’র (SEBI) নিয়ম অনুযায়ী শেয়ার বাজার থেকে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ২৪ শতাংশের বেশি ক্রয় করতে পারবে না, তবে অন্যান্য শেয়ার-হোল্ডারদের অনুমতি নিয়ে তা বাড়ানো যাবে। আই.আর.ডি.এ’র ২০১৪ সালের রিপোর্ট অনুসারে জীবন বিমা ক্ষেত্রে ২৪টি ও অন্যান্য বিমা ক্ষেত্রে ২১টি কোম্পানী রয়েছে। তারমধ্যে জীবন বিমায় ১টি ও অন্যান্য বিমা ক্ষেত্রে ৪টি সরকারি কোম্পানী রয়েছে। জীবন বিমায় মোট বিদেশি বিনিয়োগ ৬০৪৫.৯ কোটি টাকা যা মোট পুঁজির ২৩.৬% এবং অন্যান্য বিমায় রয়েছে ১৫৮৬.৬ কোটি যা মোট পুঁজির ১৬.৬৭%। সাহারা ছাড়া ২৩টি ব্যাক্তি মালিকানাধীন কোম্পানীর সবকটি কোম্পানী তাদের মোট বিনিয়োগের নির্ধারিত ২৬ শতাংশের প্রায় পুরোটাই বিদেশি কোম্পানীর কাছে বিক্রি করে দিয়েছে। বর্তমান এনডিএ সরকার বিমা ক্ষেত্রে বিদেশি বিনিয়োগের ২৬% সর্বোচ্চ সীমা বাড়িয়ে ৪৯% করার জন্য ক্যাবিনেট সম্মতি দিয়ে দিয়েছে এবং এই প্রস্তাব পার্লামেন্টের অনুমোদনের অপেক্ষায়। ইউপিএ সরকারের প্রথম প্রজন্মের সংস্কারের হাত ধরে দ্বিতীয় প্রজন্মের সংস্কার কর্মসূচী দ্রুতগতিতে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার এই সরকারের মনোবাসনা অনুযায়ী এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বিগত কংগ্রেস সরকারের অর্থমন্ত্রী পি. চিদাম্বরম তাঁর কার্যকালেই এই প্রস্তাব রেখেছিলেন, কিন্তু কংগ্রেসের অভ্যন্তরীণ শক্তি ও সহযোগীদের চাপের ফলে তিনি এই প্রস্তাব কার্যকরী করতে পারেননি। ভারত সরকার ৪৯ শতাংশ বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ ফরেন ইনভেস্টম্যান্ট প্রমোশন বোর্ডের (FIPB) মাধ্যমে করার প্রস্তাব দিয়ে দেখাতে চাইছে যে কোম্পানীর নিয়ন্ত্রণ ভারতীয় প্রমোটারদের হাতে থাকবে। এটা আসলে একটা প্রহেলিকা। বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আসল রহস্যটা যাচাই করে দেখা যাক।

ভারতীয় জীবন বিমা বনাম প্রাইভেট কোম্পানী
৩৬ কোটি পলিসি নিয়ে ভারতীয় বিমা ক্ষেত্র পৃথিবীর সর্ববৃহৎ ক্ষেত্র এবং আগামী পাঁচ বছর এই ক্ষেত্রের দ্রুত বিকাশের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। দেশের মোট জনসংখ্যার ৬৫ শতাংশের বয়স ৩৫ বছরের কম। সুতরাং যারা বিদেশি বিনিয়োগের পক্ষে তাদের যুক্তি হলো এই ক্রমঃবিকাশমান সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে গেলে প্রচুর বিনিয়োগের প্রয়োজন এবং বিভিন্ন কোম্পানীর মধ্যে প্রতিযোগিতা হলে পলিসি-হোল্ডারদের সংখ্যা বাড়বে এবং পলিসি-হোল্ডাররা লাভবান হবে। বিশ্বের উন্নত দেশের বিমা বাজার এক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে এবং সেক্ষেত্রে বিমায় বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে ভারতীয় বাজার অত্যন্ত লোভনীয়। উপরন্তু পেনশন আইন অনুযায়ী পেনশনে বিদেশি বিনিয়োগের মাত্রা বিমা ক্ষেত্রের অনুরূপ হবে। অর্থাৎ এই দুটি ক্ষেত্রে ভারতীয় জনগণের জমা অর্থ ব্যাক্তি মালিকরা তাদের মুনাফার কথা বিবেচনায় রেখে অন্যত্র বিনিয়োগ করবে। সরকারি নিয়ন্ত্রণহীন এই ব্যাক্তি-মালিকানাধীন কোম্পানীদের কাছে পলিসি-হোল্ডারদের স্বার্থ নয়, মুনাফার স্বার্থই প্রধান। একটি হিসাবে দেখা গেছে, প্রাইভেট কোম্পানীর ক্ষেত্রে গড় বার্ষিক প্রিমিয়াম ৬০,০০০ টাকা, অন্যদিকে এলআইসি’র গড় প্রিমিয়াম ৯০০০ টাকা। এই ব্যবধান থেকে এটা স্পষ্ট যে সরকারি বাধ্যবাধকতা থাকায় এলআইসি’র পলিসিগুলো অনেক বিস্তৃত ও অত্যন্ত কম আয়ের লোকদের জন্যও উপযোগী। বেশি আয়ের পলিসি-হোল্ডাররা যদি প্রাইভেট কোম্পানীতে চলে যায়, তাহলে এলআিইসিকেও প্রতিযোগিতায় টিঁকে থাকার জন্য বাধ্য হয়ে প্রাইভেট কোম্পানীর মত তার পলিসিকে পুনর্গঠন করতে হবে। উপরন্তু মুনাফা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ও বিদেশি বৃহৎ পুঁজির চাপে প্রাইভেট কোম্পানীগুলো একজোট হয়ে বা অধিগ্রহণের মাধ্যমে নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা রোধ করে একচেটিয়া ব্যবসার মাধ্যমে সরকারি ক্ষেত্রের চরিত্র পালটে দেবে। অর্থমন্ত্রী বলেই দিয়েছেন যে সব কোম্পানী যাতে সবার পলিসি বিক্রি করতে পারে এবং কর্পোরেট এজেন্ট হয়ে উঠে সে নিয়ম চালু করা হবে। ২০১০-১১ সালের একটি হিসাবে দেখা গেছে যে পলিসি তামাদি হয়ে যাওয়ার অনুপাত (Lapsation ratio) এলআইসি’র ক্ষেত্রে মাত্র ৫%, প্রাইভেট কোম্পানীগুলোর ক্ষেত্রে সেটা ৪২%। প্রাইভেট কোম্পানীর পলিসি-হোল্ডাররা প্রায়শঃই এক বছরের পর আর প্রিমিয়াম দেন না, কারণ যেভাবে বোঝানো হয় একবছর পর তাদের কাছে বিমা-প্রকল্পগুলি সেরকম লাভজনক মনে হয় না। এলআইসি’র ক্ষেত্রে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের জন্য ১০% সীমা নির্ধারণ করা আছে, অর্থাৎ এলআইসি তার জমা পুঁজির (ভারতীয় জনগণের অর্থ) বড় অংশই বিনিয়োগ করে উন্নয়নমূলক পরিকাঠামোগত প্রকল্পে। এলাআইসি’র জমা ধনরাশি জাতীয় পুঁজি গঠনের কাজে লাগে। অন্যদিকে প্রাইভেট কোম্পানীগুলি শেয়ারে বিনিয়োগ করে পলিসি-হোল্ডারদের জমা অর্থের রিস্ক পলিসি-হোল্ডারদের ঘাড়েই চাপিয়ে দেয়। শেয়ার বাজারের অনিশ্চয়তা পলিসি-হোল্ডারদের জমা অর্থের পুরোটাই হাপিস হয়ে যাওয়ার দুশ্চিন্তায় কালঘাম ছুটে। এবার ক্রমবর্ধমান বিমা বাজারের গালগল্প ও জাতীয় স্বার্থের জয়গান বিচার করে দেখা যাক।

বিমা বাজার ও জাতীয় স্বার্থ
সাধারণ যুক্তিতেই বোঝা যায় যে জনগণের হাতে সঞ্চয় করার মত ধন যত বাড়বে ততই বিমারাশি বাড়বে। এটাও দু’ভাবে হতে পারে। সাংসারিক ও অন্যান্য আনুষাঙ্গিক ব্যয় করার পর সঞ্চয় করার মত অর্থ থাকা লোকের সংখ্যা বৃদ্ধি করে, আবার যারা এখন সঞ্চয় করেন জনসংখ্যার সেই ক্ষুদ্র অংশের আয় বৃদ্ধির নীতির মাধ্যমে তাদেরকে বিমায় সঞ্চয় করতে অনুপ্রাণিত করে। যে কোন সরকার যদি দেশের স্বার্থ ও জাতীয় স্বার্থ মাথায় রাখে তাহলে তাকে প্রথম পথই অনুসরণ করতে হবে। কারণ দেশ মানে শুধু একটি ভূগোল নয়, দেশ মানে সেই ভৌগোলিক স্থানে বাসকারী মানুষ। সরকার যদি সেই স্বার্থ মাথায় রাখে তাহলে অর্থনীতিকে এমনভাবে পরিচালিত করতে হবে যাতে উৎপাদন, উৎপাদিকা শক্তি ও তার থেকে সাধারণের আয় বৃদ্ধি ঘটে এবং এই আয় বৃদ্ধির ফলে জমা পুঁজি উন্নয়ন খাতে ব্যয় করার জন্য সরকারের ঘরেই যায় তার জন্য বীমা-ব্যাঙ্কের মত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর উপর সরকারি নিয়ন্ত্রণ রাখতে হবে। সেই পথই দেশীয় ও জাতীয় অর্থনীতির পথ। কিন্তু ইউপিএ ও এনডিএ সরকার দ্বিতীয় পথ অবলম্বন করেছে এবং বিমা ক্ষেত্রে বিনিয়োগের জন্য দেশিয় বাজার থেকে পুঁজি সংগ্রহ না করে প্রাইভেট মালিকদের বিনিয়োগের উপর নির্ভর করছে। দেশিয় ব্যক্তি-মালিকদের যেহেতু সেই ক্ষমতা নেই, তাই বিদেশি বিনিয়োগ। কিন্তু এই পদক্ষেপ যে দেশিয় অর্থনীতিকে চূড়ান্ত অনিশ্চয়তার দিকে নিয়ে যাচ্ছে এবং প্রাইভেট বিনিয়োগ যে কর্মসংস্থান সৃষ্টিরও সহায়ক না হতে পারে বিভিন্ন উন্নয়নশীল দেশের অভিজ্ঞতা থেকে সেটা আজ প্রমাণিত সত্য।

অনিশ্চিত ভবিষ্যত
২০০১ সালে যখন বীমা ক্ষেত্রে ব্যক্তি-মালিকদের জন্য খুলে দেওয়া হয়, তখন আমাদের অর্থনীতির বিকাশের হার ছিল ৮ থেকে ৯%। এই বিকাশের বড় অংশই ছিল ফাটকাবাজারে বিনিয়োগ নির্ভর। কিন্তু এই বিকাশের হার পড়ে যাওয়ায় বিগত দুই বছরে প্রাইভেট কোম্পানীগুলি তাদের ৩৪% শাখা বন্ধ করে দেয় এবং তাদের কর্মী সংখ্যার ৩০% ছাটাই করে দেয়। সংকাটাদীর্ণ বিশ্ব পুঁজিবাদী অর্থনীতির শেয়ার বাজারে ২০০৮ সালের থেকেও বড় ধ্বস যে কোন সময় নেমে যেতে পারে। পুঁজিবাদে বিশ্বাসী বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদরা পুঁথির পর পুঁথি লিখে প্রমাণ করছেন যে আজকের বিশ্বে ক্রমবর্ধমান সামাজিক অসাম্য আর্থিক বিকাশ বৃদ্ধির প্রতিবন্ধক। আমেরিকার মত উন্নত দেশের রাজনীতিবিদ ও চিন্তাবিদরাও এনিয়ে সাংঘাতিক দুশ্চিন্তায়। এটা দুর্ভাগ্যজনক যে বিশ্ব পুঁজির মায়ায় আমাদের মত দেশও সেই অসাম্য বৃদ্ধির নীতির পথেই হাঁটছে।

স্বাভিমান:SWABHIMAN Headline Animator

^ Back to Top-উপরে ফিরে আসুন