Showing posts with label Economy. Show all posts
Showing posts with label Economy. Show all posts

মুজাফফর নগরের সাম্প্রদায়িক সংঘাতঃ একটি ভিন্ন দৃষ্টিকোণ

Posted by স্বাভিমান Labels: , , , ,


 ( লেখাটি ৩ নভেম্বর, ২০১৩ সংখ্যা সাময়িক প্রসঙ্গে বেরিয়েছে)
  
সংঘাতের বৈশিষ্ট্য
মাদের নিজ রাজ্য আসামের পশ্চিম প্রান্তে জনগোষ্ঠীগত অশান্তি লেগেই আছে। সেখানে দৃষ্টি নিবদ্ধ না করে উত্তর প্রদেশের পশ্চিম প্রান্তের সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে মনোনিবেশ করা নিয়ে অনেকেই বিস্ময় প্রকাশ করতে পারেন। তাই মুজফফরনগরের ঘটনাপ্রবাহের যথাযথ গুরুত্ব বোঝানোর জন্য এর একটা ব্যাখ্যা শুরুতেই দেওয়া জরুরি। উত্তর প্রদেশের পশ্চিম প্রান্তের মুজাফফরনগর সহ অন্যান্য জেলা ‘সুগার বেল্ট’ বা চিনিকলের শিল্পাঞ্চল হিসেবে পরিগণিত, শুধুমাত্র মুজফফরনগর জেলাতেই ১১টি চিনিকল রয়েছে। অন্যদিকে নিম্ন আসাম হিসেবে পরিচিত আসামের পশ্চিমাঞ্চল অনুন্নত কৃষিপ্রধান অঞ্চল। সামন্তীয় এবং অর্ধ-জনজাতীয় পরিচিতির সম্পর্কে আবদ্ধ গোষ্ঠীগত চেতনার প্রাধান্যকে ব্যবহার করে সংকীর্ণ স্বার্থের যে সংঘাতময় পরিস্থিতির সৃষ্টি করা সম্ভব, শিল্পাঞ্চলের সামাজিক সম্পর্কে সেই ফাটল সৃষ্টি করা সহজ নয় বলেই চালু ধারণা রয়েছে। অথচ সেখানেই এমন এক বড় মাপের সংঘাত হল যে প্রায় ৫০ জন নিহত ও প্রায় ৫০ হাজার লোককে গৃহহীন হয়ে ত্রাণশিবিরে আশ্রয় নিতে হল। নিহত ও গৃহহীন লোকেদের প্রায় সবাই যে মুসলিম সম্প্রদায়ভুক্ত তা সরকারি-বেসরকারি সব সূত্রের ভাষ্য থেকেই স্পষ্ট। মিরাট, ভাগলপুর, ভিওয়ান্দি ইত্যাদি অঞ্চলের মুসলিম বিরোধী দাঙ্গার সাথে এই দাঙ্গার কিছু চরিত্রগত পার্থক্য রয়েছে। কারণ উল্লিখিত অঞ্চলগুলিতে যে বিশেষ পারিবারিক ও ক্ষুদ্র শিল্প ধীরে ধীরে প্রযুক্তি ব্যবহারের মধ্য দিয়ে কারখানায় বিকশিত হচ্ছিল সেগুলিতে মালিক ও শ্রমিক উভয়ই ছিল মুসলিম সম্প্রদায়ভুক্ত। অন্যদিকে মুজফফরনগর ও পার্শ্ববর্তী জেলায় মুসলিমরা মূলত দক্ষ ও অদক্ষ শ্রমিক। সাধারণত কোনো জনগোষ্ঠীর উপর আক্রমণের পেছনে নির্দ্দিষ্ট জনগোষ্ঠীকে অবদমিত করে রাখা একটি সচেতন বা অচেতন উদ্দেশ্য হিসেবে ক্রিয়াশীল থাকে। ভিন্ন আর্থ-সামাজিক বাস্তবতায় নিম্ন আসামের অ-বড়ো জনগোষ্ঠীরাও এধরনেরই আক্রমণের সম্মুখীন হচ্ছেন। প্রতিটি জনগোষ্ঠীগত সংঘাতের আলাদা আলাদা স্থানিক বৈশিষ্ট্য ও কারণ থাকে, কিন্তু সবগুলিই ঘটে এক বিশেষ সময়ের সামগ্রিক আর্থ-রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রভাবে। স্থানিক না সামগ্রিক কারণ কোনটা প্রাধান্যকারী অবস্থায় রয়েছে তা আমাদের বাস্তব পরিস্থিতির বাস্তব ব্যাখ্যার মধ্য দিয়ে আবিষ্কার করতে হয়। মুজফফরনগরের সংঘর্ষের ঘটনায় মুসলিম শ্রমজীবী মানুষকে আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু করে নেওয়ার পেছনে বিশ্বায়ন তথা আশির দশক থেকে চালু নয়া-উদারবাদী অর্থনীতি যে বিত্তপুঁজি নিয়ন্ত্রিত বাজারশক্তির দৈত্যকে বোতল থেকে বের করে এনেছে তার প্রভাব প্রধান্যকারী ভূমিকায় রয়েছে। এই নতুন দিকটি যা এই দাঙ্গার মধ্য দিয়ে উন্মোচিত হয়েছে তার একটা ব্যাখ্যা তুলে ধরার জন্যই এই নিবন্ধের অবতারণা।

ঘটনার সূত্রপাত ও জনগোষ্ঠীগত ঐক্য
        ঘটনার সূত্রপাত ঘটে ভিন সম্প্রদায়ের এক মেয়েকে কুরুচিপূর্ণ যৌন-মন্তব্যকে কেন্দ্র করে। ২০১৪-এর নির্বাচনকে সামনে রেখে জনগোষ্ঠীগত সেন্টিমেন্টকে কাজে লাগাতে এই ঘটনাকে একটি পরিপূর্ণ সাম্প্রদায়িক সংঘাতে রূপান্তরের জন্য রঙ-বেরঙের রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে কেউ কেউ নীরবে অপেক্ষা করতে থাকে, আবার অনেকে তাতে সরাসরি ইন্ধন যোগায়। অথচ দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী চৌধুরী চরণ সিং-এর মৃত্যুকাল অর্থাৎ ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত তাঁর নেতৃত্বে জাঠ ও মুসলিমদের এক ঐক্য গড়ে উঠেছিল। নির্বাচনী দৃষ্টিকোণ থেকে এই ঐক্য উভয় সম্প্রদায়ের জন্যই লাভদায়ক ছিল। ইউপি’র পশিমাঞ্চলে মুসলিম জনসংখ্যা প্রায় ৩৩% এবং ফলে চৌধুরী চরণ সিং-এর নেতৃত্বে এই ঐক্যে জাঠদের রাজনৈতিক প্রতিপত্তি যেমনি অনেকগুণ বেড়েছিল, ঠিক তেমনি এই ঐক্যের জেরেই ২০১২-এর বিধানসভা নির্বাচনে ২৬ জন মুসলিম প্রার্থী জয়লাভ করেছিল। ২০০৬-এর সাচার কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী নির্মাণ শিল্পে, কারখানা ও বাণিজ্যে শ্রমিক হিসেবে মুসলিমদের অংশীদারি কৃষিক্ষেত্র থেকে অনেক বেশি। ফল বাগান ও ফলের ব্যবসায় অ-শ্রমিক মুসলিমদের একাধিপত্য রয়েছে। অন্যদিকে অবিসি জাঠ সম্প্রদায় মূলত জমির মালিক ও আখ চাষি। মুজফফরনগরের ঘটনা মুসলিম-জাঠ ঐক্যেই শুধু ফাটল ধরায় নি, মেহনতি মানুষের এক নতুন ঐক্যের সম্ভাবনাকে ধ্বংস করে দিয়েছে।

শ্রমজীবীদের ঐক্য ও জনগোষ্ঠীগত দূরত্ব
          বিগত দিনগুলিতে রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব এবং বিভিন্ন নতুন সার্ভিস ও কনস্ট্রাকশন সেক্টরে দক্ষ  ও অদক্ষ শ্রমিকের নিয়োগের ফলে মুসলিম শ্রমিকদের শ্রেণিগত ক্ষমতা খানিকটা বৃদ্ধি ঘটে। অন্যদিকে চিনি উৎপাদনের কারখানায় দেখা দেওয়া মন্দার শিকার হয় জাঠ চাষিরা। চিনিকল মালিকদের থেকে প্রায় ৩০০০ কোটি টাকা চাষীদের প্রাপ্য। এই অর্থ অনাদায়ে জাঠ জমিমালিক ও চাষিদের বাস্তব অবস্থার অবনতি ঘটে। আর্থ-সামাজিক অবস্থার তুলনামূলক বিচারে জাঠদের অবস্থান মুসলিমদের চেয়ে অনেক উন্নত হলেও, বিগত বছরগুলিতে উভয় সম্প্রদায়ের আর্থিক স্বচ্ছলতার বিপরীতমুখী গতি জাঠদের মধ্যে এক মনোবিকারের জন্ম দেয়। দুই সম্প্রদায়ের আর্থিক অবস্থানের ফারাক কমে আসার বাস্তব প্রেক্ষিতে পুরোনো নির্বাচনী ঐক্যকে শ্রমজীবী মানুষের ঐক্যের এক নতুন মাত্রা দেওয়া যেত। কিন্তু প্রগতিশীল শক্তির অনুপস্থিতিতে বিষয়ীগত এই বাস্তবতাকে প্রগতিশীল আন্দোলনের দিকে নিয়ে যাওয়া সম্ভব ছিল না, বরঞ্চ মনস্তাত্ত্বিক চাপের পরিস্থিতিকে ব্যবহার করে পুরোনো ঐক্যকে ভেঙে দিতে সমর্থ হল প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি।

চিনি উৎপাদন ও পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের কৃষির বাণিজ্যিকিকরণ
           ১৮২০ সালে ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানী ভারতে প্রথম চিনি উৎপাদন চালু করে। বেনারসের হলুদ চিনি ইংল্যাণ্ডের কারখানায় পরিশোধিত করে কোম্পানী বাজারজাত করত। কিন্তু ১৮৪৬ সালের ব্রিটিশ শুল্ক নীতির বলি হয়ে ব্রিটিশ কারখনার রসদ হিসেবে ভারতীয় চিনি প্রতিযোগিতায় টিঁকে থাকতে পারে না এবং ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ‘চিনির ভাণ্ড’ হয়ে ওঠার ভারতীয় স্বপ্ন ভঙ্গ হয়। বিশ শতিকার দ্বিতীয়ার্ধে রপ্তানীনির্ভর চিনিশিল্প আবার বিকশিত হতে আরম্ভ করে। উত্তরপ্রদেশের পূর্বাংশে চিনি উৎপাদনের জন্য আখ চাষ জমিদার ও বণিক শ্রেণির অধীনে চাষীদের দূরবস্থার বৃদ্ধি ঘটায় ও সামন্তীয় শ্রেণি সম্পর্কের ঐতিহ্যকে শক্তিশালী করে, কিন্তু নতুন বাজার ও প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে পশ্চিমাঞ্চলের অবিসি জাঠ জমি-মালিক তথা চাষীরা প্রভূত উন্নতি সাধন করে। জাত-বর্ণে বিভাজিত ভারতীয় সমাজে জমির মালিকানা ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা উচ্চবর্ণ হিন্দুদের করায়ত্ত থাকলেও তারা নিজেরা জমির চাষ করে না, অন্যদিকে অবিসি জমির মালিকরা নিজেরাই সরাসরি চাষাবাদের সাথে যুক্ত। ফলে বাণিজ্যিক আখ চাষের মাধ্যমে পশ্চিম উত্তর প্রদেশে শ্রেণি সম্পর্কের অনেকখানি পরিবর্তন ঘটায়। ১৮৭০ সালের মধ্যেই চামার বাঁধা-শ্রমিকরা নিজেদের দাসত্বের শৃঙ্খল থেকে বেরিয়ে তাদের নিজেদের গ্রামে বা বাইরে কার খামারে কাজ করবে তা তারা নিজেরা নির্ধারণ করার ক্ষমতা অর্জন করে। ১৮৮২ সালের এক রিপোর্ট অনুযায়ী চামার সম্প্রদায়ের শ্রমিকরা পূর্ণ হাজিরা দাবি করতে শুরু করে। কৃষি কাঠামোর এই পরিবর্তনই আরও বিকশিত হয়ে মণ্ডল ও দলিত রাজনীতির ভিত্তি তৈরি করে এবং কৃষির এই শিল্পায়ন মুসলিম-জাঠ ঐক্যেরও ভিত্তি হিসেবে এতাবৎ কাজ করে। কিন্তু এই প্রক্রিয়ায় বাধ সাধে এই শতকের আশির দশক থেকে চালু নতুন আর্থিক নীতি ও তথাকথিত বিশ্বায়ন প্রক্রিয়া।

অবাধ বাণিজ্য নীতি ও সুগার ইণ্ডাস্ট্রি
        স্বাধীনতা-উত্তর পর্যায়ে চিনির উৎপাদনের সামগ্রিক বৃদ্ধি ঘটতে থাকে। পরিকল্পনা পর্যায়ে চিনিকলের সংখ্যা ও চিনির উৎপাদনের পরিমাণ ১৯৫১-৫৬ সালে ১৩৮ ও ১৯.৩৪ লাখ টন থেকে বেড়ে ২০০৩-০৪ সালে দাঁড়ায় যথাক্রমে ৪৬১ ও ১৭০ লাখ টন। নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী আইন, ১৯৫৫ অনুসারে চিনি উৎপাদন নিয়ন্ত্রিত হয়ে আসছে। কিন্তু বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ার উদার আর্থিক নীতির অঙ্গ হিসেবে ১৯৯৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর থেকে ভারত সরকার চিনি শিল্পকে লাইসেন্স-মুক্ত করে দেওয়ার প্রক্রিয়া জারি করে। রপ্তানীর উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়। কিন্তু রপ্তানী বাস্তবে ২০০১-০২ সালে ১৩৬০ মেট্রিক টন থেকে ২০০৪-০৫ সালে কমে দাঁড়ায় মাত্র ২০ মেট্রিক টন এবং বিশ্ব বাণিজ্যিক লবির চাপে এই একই পর্যায়ে আমদানী ৪৩৮ মেট্রিক টন থেকে বেড়ে দাঁড়ায় ১৮০০ মেট্রিক টনে। এবছরের জানুয়ারী পর্যন্ত ৬.২৬ মেট্রিক টন আমদানী হয়েছে এবং আরও ১.৯ লাখ মেট্রিক টন বন্দরে আসার অপেক্ষায় রয়েছে। ভারতবর্ষের সব অঞ্চলের চিনি উৎপাদকদের মালিক-সংস্থা আমদানী শুল্ক বৃদ্ধি করে চিনি আমদানী কমিয়ে আনার জন্য চাপ দিয়ে চলেছে। সরকার লেভি-সেলের মাধ্যমে রেশনে কম দামে চিনি দেওয়ার জন্য যথেষ্ট পরিমাণ চিনি দেশীয় চিনি উৎপাদকদের থেকে সংগ্রহ করে বাকী চিনি খোলা বাজারে বিক্রয় করার সুবিধা করে দিতে আমদানী কমিয়ে আনতে পারত। কিন্তু ২০০১ সালের মধ্যেই ভারত সরকার বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা নির্দেশিত কৃষি নীতিতে সম্পূর্ণ যুক্ত হয়ে যাওয়ার ফলে অবাধ বাণিজ্য নীতি থেকে সরে আসতে পারছে না। রঙ্গরাজন কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী সরকারি নিয়ন্ত্রণ আরও শিথিল করার তোড়জোড় চলছে। এই কমিটির রেভিন্যু শেয়ারিং ফর্মুলা চাষীদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়, কারণ তাতে কৃষিপণ্যের বাজারদর আমদানি-রপ্তানি নিয়ন্ত্রিত যোগান-চাহিদার উপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল হয়ে পড়বে। এই নীতি আসলে পরিচালিত হচ্ছে কারগিল, জামিকভ, উইলমার, মিত্রাপল ইত্যাদি বহুজাতিক বাণিজ্য সংস্থাকে ভারতীয় চিনি বাণিজ্যে অংশগ্রহণের সুযোগ করে দিতে।

প্রতিক্রিয়াশীল প্রত্যাঘাত
          বিশ্বায়নের অঙ্গ হিসেবে নতুন বাণিজ্য নীতির ফলে চিনি শিল্পে দেখা দেওয়া সংকটের অজুহাতে উত্তরপ্রদেশের আখ চাষিদের প্রদেয় ৩০০০ কোটি বকেয়া দিচ্ছে না মিলমালিকরা। ২০১১-১২ সালের ১৮,২০০ কোটি টাকার তুলনায় ২০১২-১৩ সালে ২২,৪৬২ কোটি টাকার আখ কিনেছে উত্তরপ্রদেশের মিলমালিকরা। ইতিমধ্যে ৮ টি মিলের মালিকরা ২০১৩-১৪ সালে মিল না চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মুসলিম শ্রমজীবী মানুষের ব্যাপক উচ্ছেদের ফলে তাদের মধ্যে যে ভীতির সঞ্চার হয়েছে তাতে যদি তারা ত্রাণ শিবির থেকে অতি-সত্বর নিজ গ্রামে ফেরত যেতে না চায় তাহলে তা মিল-মালিকদের কাছে কার্যত আশীর্বাদ হিসেবেই বিবেচিত হবে, কারণ এক্ষেত্রে গোদামের চিনির স্টক খালি করার জন্য মিল বন্ধ রাখতে বিশেষ বেগ পেতে হবে না। আর যদি এই উদ্বাস্তুরা নিজ গ্রামে ফিরেও আসে, তাহলেও ন্যায্য মজুরি প্রদানের জন্য একজোট হওয়ার সাহস পাবে না। অন্যদিকে শ্রমজীবী মানুষের অনৈক্যের জন্য ছোট ও মাঝারি জাঠ চাষিরাও আখের ন্যায্য মূল্যের জন্য লড়ার বস্তুগত ও মানসিক সাহস সঞ্চয় করতে পারবে না। এমতাবস্থায় বৃহৎ জমি মালিকরা নতুন পুঁজি বিনিয়োগের মাধ্যমে বাণিজ্যিক চাষের চেয়ে ‘অ্যাবসল্যুট গ্রাউন্ড রেন্ট’ বা জমির খাজনার মাধ্যমে সুনিশ্চিত আয়ের জন্য সামন্তীয় সম্পর্কের দিকে পশ্চাদগমন করাকেই শ্রেয় মনে করবে এবং এই প্রক্রিয়ার মধ্যেই খাপ-পঞ্চায়েতের মত পশ্চাদগামী শক্তিগুলো পুনরায় মাথাচাড়া দিয়ে উঠার এক যোগসূত্র পাওয়া যায়। বৃহৎ বহুজাতিক বাণিজ্যিক বেপারি ও খাজনা বা সুদি ও ফাটকা লগ্নিকারী বৃহৎ পুঁজির জন্য এই পরিস্থিতিই সবচাইতে লাভজনক। আখচাষ, চিনি উৎপাদন ও বাণিজ্যে এই প্রতিক্রিয়াশীল পশ্চাদগামী শক্তির এই নতুন সমীকরণ গড়ে উঠার জন্যই প্রয়োজন ছিল মুসলিম শ্রমিক ও জাঠ আখচাষিদের ঐক্য ভেঙে দেওয়া, যাতে অত্যন্ত কম মজুরিতে শ্রমিক খাটিয়ে আখচাষ ও চিনিকলের উৎপাদন ব্যয় কমিয়ে দেওয়া যায়। শ্রমজীবী মানুষের প্রগতিশীল ঐক্য বিরোধী এই শক্তিই মুজফফরনগরের সাম্প্রদায়িক সংঘাতের মুল চালিকাশক্তি, যে সংঘাত পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে ছড়িয়ে পড়ে। স্থানিকভাবে চালিকাশক্তির এই সফলতা দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনাই হচ্ছে আজকের গণতন্ত্রের প্রধান বিপদ। রাজনৈতিক ক্ষেত্রে তারাই এই পশ্চাদগামী শক্তির সুযোগ্য বাহক হবে যারা উদারবাদী আর্থিক নীতিকে জোরেসোরে এগিয়ে নিতে চাইবে এবং শ্রমজীবী মানুষের ক্ষমতা বৃদ্ধির উপযোগী আর্থ-সামাজিক সুরক্ষার নীতি একে একে বাতিল করতে উদ্যত হবে।

ক্ষমতায়ন ও নতুন বিকল্প
          বিশ্বায়নের উদারবাদী অর্থনীতি ও শ্রমজীবী মানুষেরর টানাপোড়েনের মধ্যেই কিছু কিছু পদক্ষেপ শ্রমজীবী মানুষের প্রশ্বাস নেওয়ার খোলা জায়গা তৈরি করে দিচ্ছে। এনরেগা, খাদ্য সুরক্ষা, বীমা প্রকল্প ইত্যাদি এধরনেরই যৎসামান্য কিছু স্বস্তির জায়গা। এই প্রকল্পগুলি যদি বাস্তবে রূপায়ণ হয়ে বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর প্রকৃত হিতাধিকারীদের মধ্যে পৌঁছে এবং রঙ্গনাথ মিশ্র কমিশনের মত বিভিন্ন কমিশনের সুপারিশগুলি কার্যকরী করে জনগোষ্ঠীগত বঞ্চনার খানিকটা অবসান করা হয় তাহলে উদার-আর্থিক নীতির প্রবক্তাদের ক্ষোভিত করলেও শ্রমজীবী মানুষরা কিছুটা বস্তুগত ও মানসিক শক্তি সঞ্চয় করবে। রাজনীতির দুর্বৃত্তায়ন ও দুর্নীতির করাল থাবা গোটা পরিস্থিতিকে যেভাবে গ্রাস করছে তাতে বর্তমান জনগোষ্ঠীগত নেতৃত্বকে দিয়ে এই কাজটুকুও হবে কিনা তা সন্দেহের আবর্তে।

         কিন্তু আমাদের একথা মনে রাখতে হবে যে এই উপরোক্ত পদক্ষেপগুলো রূপায়ণ হলেও শক্তির ভারসাম্য থেকে যাবে প্রতিক্রিয়াশীলদের পক্ষে। রাষ্ট্র, রাজনীতি ও আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে নতুন গণতান্ত্রিক ভারসাম্য গড়ে তুলতে আমাদের যেতে হবে এমন এক নতুন অনুশীলনের মধ্য দিয়ে যা নতুন তত্ত্বায়নের সূত্রপাত ঘটায়, উল্টোদিকে আমাদের যেতে হবে এমন এক নতুন তত্ত্বের মধ্য দিয়ে যা নতুন অনুশীলনের জন্ম দেয় যেখানে গোটা শ্রমজীবী শ্রেণি নীতি নির্ধারণের বিতর্কে অংশ নিতে শুরু করে এবং তা এক স্বীকৃত প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পরিগ্রহ করে।   

মূল্যবোধের অবক্ষয় ও সামজিক অস্থিরতা

Posted by স্বাভিমান Labels: , , , , ,

সম্পূর্ণ বৃত্ত

     
দৈনিক যুগশঙ্খ, ২৩ আগস্ট, ২০১৩ সংখ্যায় প্রকাশিত
      সামাজিক-রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে মূল্যবোধের অবক্ষয়ের কথা আজকাল আর কেউ অস্বীকার করেন না। কিন্তু আমরা বিষয়টিকে যত সরলভাবে দেখি, বিষয়টি তার চেয়ে ঢের গভীর ও জটিল। রাজনীতির অবক্ষয়ের মডেল বোঝাতে গিয়ে অর্থনীতিবিদ শামির আমিন লিখেছেন – যারা রাজনীতি বোঝে তারা রাজনীতিতে যোগ দেয় না, যারা বোঝে না তারা দাপিয়ে বেড়ায়। এই জটিল বিষয় নিয়ে আলোচনা একটু হালকা চালেই করা যাক। এই নিবন্ধকারের দু-চারটে হালকাচালে লেখা যুগশঙ্খের পাতায় ছেপে বেড়িয়েছে। কাছাড়ের জয়পুরের নিবাসী অশীতিপর বৃদ্ধ দূরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়েও সামাজিক কাজে লিপ্ত আমার এক মামা এই লেখাগুলো পড়ে আমাকে বলেছেন – “তুই বড় কঠিন বাংলা লেখচ”। তাঁর কথার অন্তর্নিহিত অর্থের উত্তরে একথা বলা যায় যে বাস্তব পরিস্থিতিতে আজ এত জটিলতা যে তার সহজ সরল ব্যাখাতেও খানিকটা জটিলতা থেকে যায়। আমার এই মামার কথা এখানে উল্লেখ করলাম এক ভিন্ন উদ্দেশ্যে। তিনি কংগ্রেস নেতা প্রয়াত মহীতোষ পুরকায়স্থের সম্পর্কে ভাই এবং নিজেও কংগ্রেস করতেন। শাসক শ্রেণির রাজনৈতিক দলগুলোতে এধরনের সৎ, নিষ্ঠাবান ও গরিব-দরদি নেতা-কর্মী আজ বিরল প্রজাতি হিসেবেই গণ্য হয়। তাই প্রশ্ন উঠা স্বাভাবিক যে শাসকীয় রাজনীতিতে ও রাষ্ট্র পরিচালনায় কী এমন ঘটল যে মূল্যবোধের সংজ্ঞাই পালটে গেল? রাষ্ট্রের নীতি-নির্ধারণের ক্ষেত্রে শাসকীয় রাজনীতির সৎ, নিষ্ঠাবান ও গরিব-দরদি নেতা-কর্মীদের প্রায় সম্পূর্ণ প্রভাবমুক্তি ঘটেছে। অনেকের মতে এ এক অবশ্যম্ভাবী পরিণতি – বৃত্ত আসলে সম্পূর্ণ হয়েছে – কেন্দ্রাতিগ শক্তির ঠেলায় বৃত্ত ভেঙে টুকরো টুকরো হওয়াও অবশ্যম্ভাবী।

আধুনিক ও সেকেলে চিন্তা

            নেহরু ও গান্ধির উন্নয়ন চিন্তার দ্বৈরথ আজ অপ্রাসঙ্গিক। তৎকালীন সোভিয়েত রাশিয়ার স্তালিনীয় শিল্পোন্নয়নের আদলে নেহেরুর চিন্তা ও গান্ধির গ্রাম-স্বরাজের উন্নয়ন-চিন্তা বাস্তব প্রায়োগিক ক্ষেত্রে কার্যকারিতা হারিয়েছে। নেহেরুর চিন্তায় বিড়লাদের মত তৎকালীন ভারতীয় বৃহৎ পুঁজিপতিদের আকাঙ্খারও প্রতিফলন ঘঠেছিল। আধুনিক পণ্য উৎপাদনে প্রয়োজনীয় সামগ্রি যেমন তেল, বিদ্যুত, স্টিল, কয়লা ইত্যাদির উৎপাদন এবং শিক্ষা-স্বাস্থ্য-যোগাযোগ ইত্যাদি সামাজিক ও পরিষেবামূলক ক্ষেত্র সরকারি মালিকানায় রাখার প্রস্তাব বিড়লাদের বোম্বে-ক্লাবের ছিল, কারণ সেই সময়ের পুঁজিপতিরা এসব ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী ছিল না। সুতরাং নেহেরুর উন্নয়ন চিন্তায় পুঁজির সাথে কোন দ্বন্দ্ব ছিল না, বরঞ্চ এই চিন্তায় পুঁজিপতিদের প্রভাব ছিল। নেহেরুর মডেলে উন্নয়ন ছিল বিদেশি আধুনিক প্রযুক্তির আমদানি নির্ভর, অন্যদিকে আধুনিকতার মানদণ্ডে গান্ধির চিন্তা ছিল সেকেলে এবং জাত-বর্ণভিত্তিক শ্রম-বিভাজনের ধর্মীয় রীতিভিত্তিক তথাকথিত স্বনির্ভর গ্রামের ধারণা-প্রসূত। এই উভয় ধারণাতেই কৃষির উদ্বৃত্ত আয় থেকে শিল্প-বিকাশের কোন পথের সন্ধান ছিল না। নানাধরনের পণ্য সামগ্রির বহির্বাণিজ্যিক চাপে গ্রামে একধরনের আধুনিকতার ছোঁয়া লাগল বটে, কিন্তু গ্রামীণ আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও স্বনির্ভর অর্থনীতির জন্য প্রয়োজনীয় চাহিদা ও উৎপাদন-কাঠামো তৈরিতে এই ধারণা ব্যর্থ হল। এই ব্যর্থতা নেহেরু ও গান্ধি উভয়ের ধারণাকেই অসার প্রমাণিত করে ছাড়ল। এবং এর সাথেই অসার হয়ে গেল এই উভয় ধারণাতেই আদর্শগতভাবে নিহিত থাকা সামাজিক কল্যাণের ধারণাও। সুতরাং প্রয়োজন দেখা দিল এক নতুন নীতি ও আদর্শকে আঁকড়ে ধরা।

ধনপতির হাঁড়ি ও গরিবের লোহার চালের বাটি

             নেহেরুর উন্নয়ন ও জনকল্যাণের ধারণা উবে গেলেও একটা বৈশিষ্ট আরও তীব্র আকারে মানুষের মননকে গ্রাস করে নিল। সেই বৈশিষ্ট্য হল আমেরিকা-ইউরোপের অনুসরণ, অনুকরণ ও তাদের কাছে ভিক্ষাবৃত্তি। বিশ্বব্যাপী নয়া-উদারবাদী অর্থনীতির সাথে সেই আদর্শ একেবারে খাপে খাপে মিলে গেল। রাজনীতিবিদ-প্রযুক্তিবিদ-আমলা সবাই পাশ্চাত্যের চোখধাঁধানো নগরসভ্যতার মানদণ্ড অনুসরণ করতে গিয়ে স্থান-কাল-পাত্র বিবেচনায় না রেখে তাদের নীতি ও প্রযুক্তি প্রয়োগে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। তাদের এই প্রয়োগশালায় যে বিপুল অর্থের প্রয়োজন তার যোগান সুনিশ্চিত করতে সেই দেশগুলির নিয়ন্ত্রিত ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্ক, আই-এম-এফের মত সংস্থা বা সেই দেশের বৃহদাকারের পুঁজি-মালিকদের কাছে ধার নিতে ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে হাজির হতে হল। অর্থের সাথে ওতোপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকে ক্ষমতা – সুতরাং ধারের অর্থ যত বাড়তে থাকে নিজ দেশের ক্ষমতার লাগামও তার সাথে পাল্লা দিয়ে যেতে থাকে দেশের চৌহদ্দির বাইরে – সমুদ্রের ওপারে বহুদূরে। স্বাধীনতা-উত্তর পর্যায়ে যে ধনপতিরা রাষ্ট্রের সহায়তায় উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশে বিনিয়োগের সুযোগ খুঁজত, আম্বানীদের মত সেই ধনপতিরা ফুলেফেঁপে অনেক বড় হয়েছে, তাদের মুনাফার হাঁড়ি পূর্ণ হয়েছে, এখন নতুন হাঁড়ি চাই। তারা সরাসরি এখন বিদেশি কোম্পানীদের হাত ধরে যাত্রা করতে পারে মালয়-সিংহল-নেপাল-আফ্রিকা ইত্যাদি অভিমুখে। অর্থ ও ক্ষমতা যাদের, আদর্শের মালিকানাও তাদের কাছে। তারাই শিক্ষা-মিডিয়া সহ মতামত তৈরির সমস্ত মূল প্রতিষ্ঠানের মালিক। তারা যাকে প্রকৃত মূল্যবোধ বলে বিবেচনা করবে তার পক্ষে শিক্ষিতশ্রেণির বৌদ্ধিক সায় আদায় করে নেওয়ার জন্য মগজ-ধোলাইয়ের কোন কসরতই বাকি থাকবে না। এভাবে শাসনের পক্ষে শাসিতের মত আদায় করে নিতে পারার পরিস্থিতিই গ্রামশিয়ান হ্যাগিমনি সূত্রে আধিপত্যের প্রথম ধাপ। উন্নয়নের মানদণ্ডটাই যখন বদলে গেছে তখন শপিং-মল গড়ে উঠতে লক্ষ টাকার কেলেঙ্কারি বা বিদেশি পুঁজি বিনিয়োগে বৃহৎ শিল্প গড়ে তুলতে কয়লা খনির বরাত নেওয়ার পেছনে কোটি কোটি টাকার তছরূপ নিয়ে যারা প্রশ্ন তুলে তারা নিশ্চিতভাবে উন্নয়ন বিরোধী হিসেবে বিবেচিত হয়। বেড়াল সাদা হোক বা লাল – ইঁদুর ধরলেই হল (মাও পরবর্তী চিনের সরকারি মন্ত্র)।-প্রকৃতি ভারসাম্য হারাক -আরো অনেক উত্তরাখণ্ড হোক – গরিব পেটে মরুক বা পিঠে মরুক – না জুটুক ‘লোহার চালের বাটি’ (চিনা উপমা),  তাতে কী এসে যায়, উন্নয়ন হলেই হল। কারণ অর্থ ও ক্ষমতার মালিকরা এই ফরমানই জারি করেছে – তা আমাদের মানতে হবে। নাহলে তারা আমাদের দেশে বিনিয়োগ করবে না।

ডানে-বামে পাশাপাশি

             শাসক শ্রেণির দল হিসেবে যারা পরিচিত, তাদের থেকে খানিকটা দূরে ( বিপরীত মেরুতে নয়) যে সব বামপন্থী দলরা তাদের সাথে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান করছে, তাদের এই বিদেশি পুঁজি বিনিয়োগ নিয়ে নীতিগত কোন আপত্তি নেই। তাদের একটাই আপত্তি – এই পুঁজি যাতে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ না হয়, সরাসরি শিল্পদ্যোগে আসে। সরাসরি বিনিয়োগে হয়ত সামান্য কিছু কর্মসংস্থান হয়, কিছু এলাকায় বিদ্যুৎবাতি জ্বলে, কারখানাকে কেন্দ্র করে কিছু রাস্তাঘাট হয়, এই রাস্তায় উপরতলার কর্মীদের নানাবিধ গাড়ি চলে। কিন্তু যা হয় না তা হলো – দারিদ্রদূরীকরণ, মজুরদের ন্যূনতম মজুরির সংস্থান, সামাজিক সুরক্ষা, লাখ লাখ পেন্সনারদের বেঁচে থাকার গ্যারান্টি, গণ-ক্ষমতায়ন ইত্যাদি। এই অসংখ্য না-হওয়ার তালিকার শেষে যে বিষয়টি গম্ভীর সামজিক ব্যাধির জন্ম দেওয়ার জন্য একমাত্র হওয়ার তালিকায় যুক্ত হয় তা হল – অসাম্য বৃদ্ধি। কারণ এই বিনিয়োগ থেকে অতি-মুনাফা করাটাই যখন লক্ষ্য, তখন বিনিয়োগ আসে ‘সেজ’-এলাকাতেই যেখানে বিদেশি বহুজাতিক কোম্পানীদের জন্য এদেশীয় সমস্ত আইন অচল এবং তাদেরকে আনতে হয় জামাই আদর করে সরকারি অর্থ ব্যয়ে নানাবিধ ছাড় দিয়ে।

টানাপোড়েনের জটিল অঙ্ক

               হওয়া, না-হওয়ার এই তালিকা বানাতে বানাতে পুঁজি-মালিকরা যাতে অপ্রতিরোধ্য গতিতে অগ্রসর হতে পারে – তারজন্যই শ্রমের সংগঠিত ইউনিয়নকে ভেঙে দেওয়া তাদের প্রাথমিক কর্তব্য হিসেবে দেখা দেয়। বেসকারিকরণ ও ক্যাজুয়েলাইজেশনের ধাক্কায় আমাদের পাবলিক সেক্টরগুলোর সংগঠিত ইউনিয়নগুলি মুখ থুবরে পড়েছে – এই ইউনিয়নগুলি এখন শুধুমাত্র ট্রান্সফার-পোস্টিং-এর জন্য ম্যানেজমেন্টের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখার মাধ্যম। শিক্ষিত মধ্যশ্রেণি এই বাস্তবতাকে মেনে নিলেও মেনে নিতে নারাজ নতুন শ্রমিকশ্রেণি যারা ন্যূনতম মজুরি পায় না, যাদের ইউনিয়ন করার অধিকার দেওয়া হয় না। মেনে নিতে নারাজ গরিব আম-জনতা যাদের শিক্ষা-স্বাস্থ্য-বাসস্থান-রুটি-রুজি-পুষ্টির সংস্থান হয় না। তাই বিদ্রোহ মারুতি-সুজুকি বা বাজাজ কোম্পানীর কারখানা চত্বরে – বিদ্রোহ     চা-বাগানে, তাই যে কোন সুযোগে বিদ্রোহে অংশগ্রহণ মেহনতি আমজনতার। এই টানাপোড়েনে সবহারাদের বিফলতা অনেক, আবার সফলতার পাল্লা ভারি হওয়ার সংকেতও অনেক। মারুতি-সুজুকিতে ইউনিয়নের অধিকার আদায়, কাজ-খাদ্যের বিষয়কে মৌলিক আইনি অধিকার করে নেওয়া, জমি অধিগ্রহণে গ্রামসভার মতামতে গুরুত্ত্ব আরোপ ইত্যাদি সফলতার সূচক। দুর্ভিক্ষপীড়িত হিসেবে খ্যাত ওড়িষ্যার কালাহাণ্ডি জেলার লাঞ্জিগড়ে ও ঝারসুগুদা জেলায় মাইনিং প্রজেক্ট খুলেছে বেদান্ত গ্রুপের বেদান্ত এল্যুমিনিয়াম কোম্পানী। সেখানকার আদিবাসীরা তাদের বসতজমি বলপূর্বক কেড়ে নেওয়ার বিরুদ্ধে জোর লড়াই করে আদায় করে নিয়েছে জমি-অধিগ্রহণে গ্রামসভার অনুমতির আইনি অধিকার। পুঁজি ও ক্ষমতা উদার-অর্থনীতির উন্নয়নের পক্ষে এদের সমর্থন আদায় করে নেবে, না সংগঠিত শ্রমশক্তি নতুন মতাদর্শের ধারক হয়ে উঠবে তা দেখার জন্য আমাদেরকে আরও কিছুকাল অপেক্ষা করতে হবে। সংগঠিত এই শক্তি যতদিন না সরাসরি চ্যালেঞ্জ জানানোর মত শক্তি সঞ্চয় করে নেবে, ততদিন মাল্টিপ্লেক্স-শপিং মল-হাই স্যালারি ইত্যাদিকেই যারা উন্নয়ন বলে বিবেচনা করে এবং এসব ঠিকঠাক চললে অন্যক্ষেত্রে যারা দুর্নীতিকেই নীতি হিসেবে গণ্য করে তাদের আনুগত্য পাবে উদার-অর্থনীতির প্রবক্তারা, ততদিন অর্থনৈতিক স্বশাসনের ধারণা অর্থহীন হয়েই থাকবে। পরিস্থিতি এরকমই এক জটিল অঙ্কে কষা। তাই আমার মামাকে বলতেই হয় – “বাংলাটা তুই বড় কঠিন লেখচ”।





প্রযুক্তি-চর্চা, সমস্যা জর্জরিত বরাক উপত্যকা ও বিশেষজ্ঞদের ভূমিকা

Posted by স্বাভিমান Labels: , , , , ,

         

        (বেশ কিছুদিন আগে 'দৈনিক সাময়িক প্রসঙ্গে' এই লেখকের একটি চিঠি বেরিয়েছিল – সেই চিঠির বিষয়বস্তুকে নিয়েই 'অরুণোদয়' কাগজের  জন্য এই পুনর্লিখন – অরূপা মহাজন।)
           ঙ্গল গ্রহে ইসরোর উপগ্রহ অভিযানের জন্য ভারত সরকারের কেবিনেট ৪৫০ কোটি টাকা মঞ্জুর করেছে। এই উপগ্রহটি নাকি লাল-গ্রহের বায়ুমণ্ডল যাচাই করবে। অর্থমূল্যের হিসেবে বিচার করলে এই অভিযানকে ভারতের মত দরিদ্র দেশের অর্থের অপচয় হিসেবে বিবেচনা করা যায় না। কিন্তু এই অভিযানকে ফলাও করে প্রচার করার মধ্যে বিজ্ঞান ও কারিগরি বিদ্যাচর্চার ক্ষেত্রে আমাদের দিশাহীন কিংবা একদেশদর্শী পরিকল্পনার প্রতি আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এই অভিযানকে কেন এতো গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে? তার দুটি মুখ্য কারণ রয়েছে। প্রথমত এতে আমাদের এলিট শ্রেণির এবং তাদের নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে শিক্ষিত ও প্রভাবান্বিত মধ্যশ্রেণির সুপার-পাওয়ার হওয়ার সুপ্ত অলীক বাসনাকে আরেকটু উস্কে দেওয়া যায় – বিশ্ব এলিট ক্লাবের সাথে  গা-ঘেঁষাঘেষি করে তাদের ‘অল্টার-ইগোকে’ ফুলে-ফেঁপে উঠতে দেওয়া যায়। সুপার-পাওয়ার হওয়ার এই বহিরঙ্গের সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে যুক্ত একটা অন্তরঙ্গও রয়েছে যা আমাদের দেশের সাধারণ মানুষের এমনকি মানব সভ্যতার জন্য বিপদজনক। কী সেই বিপদ? বহিরঙ্গে সুপার-পাওয়ার হওয়ার প্রয়াস অন্তরঙ্গে সুপার হওয়ার প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেই করতে হয় অর্থাৎ আমাদের এলিট শ্রেণি ও তাদের পোঁ-ধরারা যখন ইউরোপ-আমেরিকার সমকক্ষ সঙ্গী হওয়ার চেষ্টায় ব্রতী, তখন কোটি কোটি নিরন্ন দরিদ্র মানুষ যারা খাদ্য-বস্ত্র-বাসস্থানের জন্য সরকারী ব্যয় বৃদ্ধি করার ব্যাপারে উদগ্রীব হয়ে এলিট-শ্রেণির উপরে উঠার প্রক্রিয়ায় অন্তরায় হতে চায় – তখন এই নিরন্ন-হাঘরেদের পদদলিত করেই তাদের বাসনাকে কায়েম করা যায় এবং এরজন্যই উন্নত প্রযুক্তির দোহাই দিয়ে সাধারণ মানুষকে ভিটেমাটি ছাড়া করা হচ্ছে – তা সে নিউক্লিয়ার এনার্জির জন্যই হোক বা বিগড্যাম। প্রযুক্তির এই চর্চার সাথে সৃজনশীলতার বিশেষ কোন সম্পর্ক নেই –এটা একধরণের স্কিলের চর্চা। অথচ আমজনতার সমস্যা সমাধানের সাথে যদি প্রযুক্তি চর্চার বিষয়কে জুড়ে দেওয়া যেত তাহলে প্রযুক্তিচর্চার সাথে যুক্ত সবাই সৃজনশীল গবেষণার এক বিশাল কর্মযজ্ঞের সাথে সামিল হয়ে দেশ গঠনে ব্রতী হওয়ার সুযোগ পেত। এই দৃষ্টিভঙ্গীতে যাতে বৌদ্ধিক সমাজ প্রভাবিত না হয় – সেটাই               মঙ্গল-অভিযানকে ফলাও করে প্রচার করার দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ অন্তর্নিহিত কারণ। অথচ আধুনিক ইউরোপ যে এই পথ পরিক্রমা করেই এসেছে সে ব্যাপারে আমাদের এলিটরা অবগত হলেও ন্যস্তস্বার্থে ও ওলিগোপলিস্টদের (একচেটিয়া কর্পোরেটদের গ্রুপ) সেবাদাসত্বের দাসখতে সই করে জ্ঞানচর্চার এক ভ্রান্ত পথের দিকে দেশ-জাতিকে পরিচালিত করছেন।  উন্নত প্রযুক্তির ঢোল বাজিয়ে কর্পোরেট প্রভুদের নির্দেশে ২০০৫ সালে বিদ্যুৎ ক্ষেত্র সংস্কারের আইন পাশ করা হল। দীর্ঘ সাত বছর পর উন্নত প্রযুক্তির দেশজোড়া নমুনা দেখল দেশবাসী। বিদ্যুত ঘাটতিজনিত যন্ত্রণার স্থানিক অনুভূতিকে দীর্ঘ তথাকথিত উন্নত প্রযুক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে বিশাল পরিমাণ মৃত-পুঁজির সৃষ্টি করে এবং সাধারণ মানুষের উপর বিশাল বিদেশি ঋণের বোঝা চাপিয়ে দিয়ে জাতীয় অনুভূতিতে রূপান্তরিত করা হয়েছে। বিশ্বায়িত প্রযুক্তির বাজারে অনুভূতির বিশ্বায়নের দিকে যাত্রা। বিশ্বায়নের এই যাত্রার বিপরীতে একটা স্থানিক যাত্রার হিসাব আমরা এবার করে দেখতে পারি। কারণ যখন প্রযুক্তি শিক্ষার নামে মঙ্গল গ্রহে যান পাঠাচ্ছে আমাদের সরকার, তখন বরাকের মানুষরা নিজের অঞ্চলের বাইরে বেরোতে নিজের প্রাণটাকেই অজানা ভিন-গ্রহে পাঠিয়ে দিচ্ছেন।
                 বিজ্ঞান ও কারিগরি বিদ্যার বিভিন্ন শাখায় আমাদের এঅঞ্চলে কৃতবিদ্যদের সংখ্যা নেহাত কম নয়। কিন্তু কৃষি-শিল্প-নাগরিক সুযোগ সুবিধা-পরিবেশ ইত্যাদি সংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যার সমাধানকল্পে কোন গুরুত্বপূর্ণ কাজ ও তার বাস্তবায়ন আমাদের খুব একটা চোখে পড়ে না। ভাষা-সংস্কৃতি-উৎপাদন পদ্ধতি-জলবায়ু ইত্যাদি সবদিক থেকে আমাদের মত বৈচিত্রময় দেশে যে কোন সমস্যার একটা স্থানিক মাত্রা থাকে। কিন্তু বাস্তব পৃষ্ঠভূমি থেকে সমস্যা সমাধানের বাস্তব কোন পদ্ধতি আবিষ্কারের কষ্টসাধ্য ও সৃজনশীল পথ পরিহার করে আমরা অনুকরণের মাধ্যমে দক্ষ বিশেষজ্ঞ তকমা পেতে বেশি আগ্রহী। জ্ঞানার্জনকে বাজারের চাহিদার দ্বারা পরিচালিত দক্ষতার (Skill) স্তরে নামিয়ে আনার পরও আমাদের সমাজ নামী উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের অত্যন্ত সম্ভ্রমের সাথে দেখে, কারণ সমাজ ধরে নেয় যে এই প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের বিদ্যা-বুদ্ধি-জ্ঞান এতো বিশাল যে তার থেকে সমাজ উপকৃত হবে। কিন্তু বাস্তবে এই  দক্ষ লোকদের সংখ্যাবৃদ্ধির সাথে তাল মিলিয়ে আর্থ-সামাজিক সমস্যা ও সামাজিক অবনতির মাত্রা কেন উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে? এর উত্তর আমাদের সার্বিক আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থার সাথে সাথে সম্ভবত শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যেও নিহিত রয়েছে। সম্প্রতি এক টিভি-চ্যানেলের বিতর্ক প্রোগ্রামে একজন অবসরপ্রাপ্ত প্রবীণ চিকিৎসক মন্তব্য করেন যে আমাদের শিক্ষা পদ্ধতি ক্রমাগত অনুভূমিক (Horizontal) থেকে উলম্ব (Vertical) হয়ে যাচ্ছে এবং ফলে সামগ্রিক জ্ঞানের মাধ্যমে সৃজনীক্ষমতা বিকাশের বদলে এটা একধরনের ট্রেনিং-এ রূপান্তরিত হচ্ছে – সবকিছুই এখন উন্নত  থেকে উন্নততর ওয়ার্কশপ যেখানে পুঁজির সেবা করার জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষ লোক তৈরি করা হচ্ছে এবং বিশ্লেষণী ক্ষমতা বিকাশের বদলে শিক্ষার মানে হয়ে যাচ্ছে পুনঃপুনঃ পাঠের মাধ্যমে একধরনের মুখস্ত বিদ্যা (Learning by rote)। এরমধ্যেই ব্যতিক্রমী কাজ যে হচ্ছে না তা নয় –  কিন্তু তা সাধারণত মিডিয়াকে, বাজারের নিয়মকে ও নীতি নির্ধারণকে প্রভাবিত করতে পারে না। এভাবে বেশিদিন চলতে পারে না – কারণ গোটা সমাজ গুটি গুটি পায়ে অতি সত্বর এক ভয়ঙ্কর পরিণতির দিকে পা বাড়াচ্ছে। যদি আমরা মনে করি যে সব বিজ্ঞানই শেষ বিচারে মানব সভ্যতার জন্যই, যে সভ্যতা আজ অস্তিত্ব সংকটের    সামনে দাঁড়িয়ে গেছে – তাহলে আমাদেরকে বিকল্প পথ অনুসন্ধান করতেই হবে।
               অত্যন্ত ছোট মাপের কাজের কথা এখানে উল্লেখ করা যায়। সারা পৃথিবী জল সংকটে ভুগছে – জল নিয়ে প্রায় যুদ্ধ বাধার উপক্রম। দক্ষিন ভারতের কোন এক শহরের পুরসভা ছাদের জল সংগ্রহ করা বাধ্যতামূলক করে দিয়ে উপকৃত হয়েছে। চেরাপুঞ্জিতে যখন জল সংকট, তখন থর মরুভূমির এক বসতি অঞ্চল কোন ব্যয়বহুল পদ্ধতি অবলম্বন না করেই জল সমস্যার সমাধান করে নিয়েছে। আমাদের শিলচরের কোন বিশেষজ্ঞ ছাদের জল নিয়ে একটা হিসাব করতেই পারেন এবং তাতে যদি দেখা যায় আমাদের উপকৃত হওয়ার সম্ভাবনা আছে তাহলে পুরসভা ও উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ তা বাধ্যতামূলক করে দিতে পারে। জল নিষ্কাশনী সমস্যার  সমাধানেও কোন উদ্ভাবনী প্রয়াস নজরে পড়ে না – জল নিষ্কাশন ও জল সংরক্ষণকে সম্পৃক্ত করে ভাবলে কোন সমাধানসূত্র বেরতেও পারে। বরাকের কৃষির অবস্থা খুবই শোচনীয় এবং তারজন্য বিভিন্ন ফ্যাক্টর দায়ি। কিন্তু বরাকের কৃষকদের বাস্তব অভিজ্ঞতাকে সার-সংকলিত করে কোন বিকল্প পন্থা-পদ্ধতি আবিষ্কারের চেষ্টা কেউ করছেন বলে শোনা যায়নি। মাত্র ১০০/১১০ মেগাওয়াট চাহিদা থাকা একটা অঞ্চলে বিদ্যুৎ সমস্যা সমাধানের জন্য কোন এক বৃহৎ কর্মকাণ্ডের প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। সামাজিকভাবে উপযোগী-স্থায়ী ও সস্তায় এই নগণ্য পরিমাণ  বিদ্যুৎ উৎপাদন ও যোগানের বন্দোবস্ত এখানেই করা যায় বলে আমাদের বিশ্বাস। এই বিশ্বাসকে বিজ্ঞানসম্মতভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে আমাদের এঅঞ্চলের কারিগরি প্রতিষ্ঠানগুলো কোন কাজ করছে কি? মনে হয় – না। অথচ প্রতিবারই সমস্যা সমাধানের নতুন নতুন মন্ত্র আমাদের শোনানো হয় – এবারের নতুন মন্ত্র হচ্ছে পালাটনা, ভাবখানা এরকম যে এই বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র বরাকের চাহিদা মেটানোর জন্যই তৈরি হচ্ছে, আর বরাক ড্যাম – সে তো আরেক মিথ্যার বেসাতি।  সব পরিকল্পনা তৈরি করা হয় বিদেশি ঋণ ও প্রযুক্তির উপর নির্ভর করে, তাতে সম্পদের বহির্গমণ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি ঘটে প্রকৃত অর্থনীতি পঙ্গু হলেও নীতি নির্ধারকদের কোন মাথাব্যথা নেই। 
              এখন আমাদেরকে প্রতিনিয়ত ভূমিকম্পের বিপদ সম্পর্কে সতর্ক করা হচ্ছে। ব্যয়বহুল সব পদ্ধতির কথা আমাদেরকে শোনানো হচ্ছে যা আমাদের মত দেশে বাস্তবে গণহারে কার্যকরী হওয়া সম্ভব নয়। ভূমিকম্প রোধ ও ভূমিকম্প থেকে বাঁচানোর কার্যকরী কোন পদ্ধতি যদি বাস্তবায়িত না হয়, তাহলে এই ব্যয়বহুল মচ্ছবের কী অর্থ? সব বিষয়ের উপর আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রচুর অর্থ ব্যয়ে ওয়ার্কশপ হয়। ভিন্ন সামাজিক-রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক ইতিহাসের প্রেক্ষিতে অত্যন্ত কার্যকরী ও সৃজনশীল আবিষ্কারের ট্যাকনিক্যাল তথ্য এই ওয়ার্কশপগুলোতে দেওয়া হয়। প্রথমত এই বিষয়গুলি ট্রেনিরা ট্রেনিং-লিটার্যা চার থেকে নিজেরাই আয়ত্ব করে নিতে পারে, দ্বিতীয়ত আমাদের বাস্তব পরিস্থিতিতে এগুলোর বিশেষ কোন বাস্তব কার্যকারিতা নেই। সুতরাং এই ওয়ার্কশপগুলো থেকে প্রাপ্ত তথ্যের বোঝাগুলো মাথায় বয়ে নিয়ে বেড়ানো কি অর্থহীন হয়ে পড়ে না?

A CLARION CALL TO UNITE AGAINST IMPERIALISM AND.....

Posted by স্বাভিমান Labels: , , , , , , , , , ,



A CLARION CALL TO THE PEOPLE TO UNITE AGAINST IMPERIALISM AND NEO-LIBERAL POLICY FROM A THOUSANDS STRONG MASS MEETING AND PROCESSION OF ASSAM MOJURI SRAMEEK UNION


The News Published in Dainik Samayik Prasanga, 15th Nov. 2011 issue 
            This prgramme organised by Assam Mojuri Srameek Union has also been addressed by the office bearers of Barak Human Rights Protection Committe, Krishak Mukti Sangram Samiti, Citizens' Rights Protection Committee, Manipur Peoples' Struggle Committee along with Union's speakers and Mr Gautam Modi, Secretary, New Trade Union Initiative, New Delhi as guest speaker.
Press Releaese

A strong procession of thousands of union  
members entering the meeting venue
The neo-liberal policy and the policy of appeasement serving the corporate interest of the Indian big business houses and the global oligopolists, pursued by the Indian Govt. is increasing the inequality, poverty, unemployment and the prices of the essential commodities in leaps and bounds. In the list prepared on the basis of human development index, India’s place is 119 out of 129 countries. As per the Govt record of 2010, the rate of life expectancy of birth (years) is 64.4%, the rate of malnutrition in the age group of 6-59 months is 79%, below 3 years is 46% and that of below 6 years is 49%. As per Arjun Sengupta report, 77% of people has the average daily expenditure of Rs.20 or less. During the period of 1994-2008, the rate of employment per annum in the Govt organized sector is (-)0.65%  and that of private sector is 1.75%. The workers in the private IT-BPO and other private sectors, and the working class in the unorganized sector who constitute the absolute majority of the India workforce are being compelled to work with measly sum of wage. Almost 2.5 lakhs of farmers committed suicide till date due to agricultural crisis.
      The budgetary allocation of fund for social sector development is very meager. As per Reserve Bank report 2010, the expenditure in education is 2.98% of GDP, that of health is 1.27% and in other social investment is only 2.38% of GDP. With an intention to reduce the social sector investment still further, the Government is conspiring to show less BPL percentage, and pursuing the policy to allow the private capitalists to enter these social sector for making profit through commercialization.
A Sectional view of the mass-meeting
A Sectional view of the mass-meeting
   This policy of the Govt. has shattered the lives of the working class in general and especially the most backward communities and the regions like Barak Valley. All the beneficiary schemes and the scheme under the right to work act like NREGA are not being properly implemented due to the carelessness and insensitivity of the people in the Govt. implementing machineries. The jobcard holders are not getting 100 days work per year, and the state Govt is dillydallying in giving the unemployment allowance against their failure in providing jobs to the job-seekers, though the honourable high court has also passed an order to pay the unemployment allowance against a writ-petition filed by the Union. The tea-workers are not getting the minimum wage and the facilities they are entitled to get as per plantation labour act, even the tea-workers in Barak are getting less than their counterpart in Brahmaputra valley of the state of Assam.     
     In vehement opposition to the neo-liberal policy and on the basis of the demands mentioned below, and by being the part of the all India working class movement initiated by New Trade Union Initiative, the Union is determined to strengthen this movement further.
        Demands are – (1) All the arrear unemployment allowance under NREGA must be paid immediately. (2) 200 days of work per year should be provided to the jobcard-holders.   (3) On the basis of the guideline of Indian Labour Conference, 1957 and the directives of Supreme Court, the minimum wage of the tea-workers and the workers of all unorganized sectors must be fixed. (4) The wages of the tea-workers of Barak Valley should be at per with that of Brahmaputra Valley. (5) The universal PDS should be brought back in force. (6) The PRI and the Gramsabha should be strengthened for empowerment of the people. (7) The power should be decentralized through multi-layered autonomy to ensure equal rights of all communities. (8) The rampant corruption at all levels and the skyrocketing price hike of essential commodities must be arrested, and the Lokpal act must brought into force.

ASOM MOJURI SRAMEEK UNION
CACHAR DISTRICT COMMITTEE
H/O KHUDIRAM SARANI, SIBBARI ROAD, TARAPUR, SILCHAR-8, Regd. No 2287
_____________________________________________________________________________________________
    Ref:  Nil                                                                                  Date : 14.11.2011

      সরকার অনুসৃত নয়া আর্থিক নীতি ও দেশি-বিদেশি ব্যক্তিপুঁজি মালিকদের স্বার্থ রক্ষাকারী পদক্ষেপের ফলে সামাজিক অসাম্য, দরিদ্রতা, বেকারত্ব, নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর মূল্যের বৃদ্ধি ঘটে চলেছে। মানবোন্নয়নের সূচক অনুযায়ী ১২৯টি দেশের মধ্যে ভারতের স্থান ১১৯ নং। ২০১০-এর সরকারি হিসেব অনুযায়ী, জন্মবছরে বেঁচে থাকার হার ৬৪.৪%,     ৬ মাস থেকে ৫৯ মাস বয়সের শিশুর অপুষ্টির হার ৭৯%, ৩ বছরের নিচে শিশুর ৪৬% ও ৬ বছরের নিচে ৪৯% অপুষ্টিতে ভুগছে। অর্জুন সেনগুপ্ত কমিশনের রিপোর্ট অনুযায়ী ৭৭% লোকের দৈনিক গড় ব্যয় ২০ টাকা বা তার কম। ১৯৯৪-২০০৮-এই পিরিয়ডে সরকারি সংগঠিতখণ্ডে গড় বছরে নিয়োগের হার (-)০.৬৫% ও বেসরকারি ক্ষেত্রে ১.৭৫%। আইটি-বিপিও ও অন্যান্য বেসরকারি ক্ষেত্রগুলোতে এবং গরিষ্ঠাংশ শ্রমজীবী মানুষ অসংগঠিত ক্ষেত্রে অত্যন্ত নগণ্য মজুরিতে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে। কৃষিক্ষেত্রে বিপর্যয়ের জন্য ইতিমধ্যে মোট প্রায় ২.৫ লাখ কৃষকের আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। 
Union's flag-hoisting (above)
 and procession (below)

সরকারী বাজেটে সামাজিক খাতে ব্যয় বরাদ্দ নিতান্তই অপ্রতুল। রিজার্ভ ব্যঙ্কের ২০১০-এর হিসেব অনুযায়ী শিক্ষখাতে জিডিপির ২.৯৮%, স্বাস্থ্যখাতে ১.২৭% ও অন্যান্য খাতে জিডিপির মাত্র ২.৩৮% ব্যয় করা হয়। সামাজিক খাতে ব্যয় আরও কমিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে বিপিএলের সংখ্যা কমিয়ে দেখানোর চক্রান্ত করছে সরকার এবং সামাজিক ক্ষেত্রগুলিতে মুনাফালোভি ব্যক্তিমালিকদের অনুপ্রবেশের পথ সুগম করার নীতি অনুসরণ করছে সরকার।

     সরকারের এই নীতিতে সাধারণভাবে শ্রমজীবী মানুষ এবং বিশেষ করে বরাক উপত্যকার মত পিছিয়ে পড়া অঞ্চলের ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীদের জীবনে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। গণ-আন্দোলনের চাপে কাজের অধিকার সাব্যস্ত করতে এনরেগা সহ অন্যান্য যেসব জনহিতকর প্রকল্প সরকার নিয়েছে তাও দুর্নীতি ও প্রশাসনযন্ত্রের অসংবেদনশীলতা ও গাফিলতিতে সুস্টুভাবে কার্যকরী হচ্ছে না। এনরেগার বছরে ১০০ দিনের কাজ দেওয়া হচ্ছে না এবং কাজ দিতে না পারলে যে বেকার ভাতা দেওয়ার কথা, তা দিতেও রাজ্য সরকার টালবাহানা করছে। এব্যাপারে ইউনিয়নের এক রিট পিটিশনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট অতিসত্বর বেকার ভাতা প্রদান করার আদেশও জারি করেছে। চা-শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি সহ প্ল্যাল্টেশন লেবার আইন অনুযায়ী সুযোগ-সুবিধাগুলি দেওয়া হয় না, এমনকি বরাক উপত্যকার চা-শ্রমিকদের ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার শ্রমিকদের চেয়েও নেক কম হাজিরা দেওয়া হয়।

            ইউনিয়ন সরকারের ব্যক্তিগতকরণের নীতির বিরুদ্ধে এবং নিম্নলিখিত দাবিগুলির ভিত্তিতে আন্দোলন গড়ে তুলতে এবং নিউ ট্রেড ইউনিয়ন ইনিসিয়েটিভের উদ্যোগে সর্বভারতীয় আন্দোলনের সাথে যুক্ত হয়ে এই আন্দোলনকে আরও শক্তিশালী করতে বদ্ধপরিকর।
          (১)এনরেগার বকেয়া বেকার ভাতা প্রদান করতে হবে। (২) এনরেগার অধীনে বছরে ২০০দিনের কাজ দিতে হবে। (৩) ইণ্ডিয়ান লেবার কনফারেন্স ১৯৫৭ ও সুপ্রিম কোর্টের আদেশের গাইডলাইন মেনে চা-শ্রনিক ও অসংগঠিত শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ধার্য করতে হবে। (৪) বরাক ও ব্রহ্মপুত্র ভ্যালির চা-শ্রমিকদের সমহারে মজুরি প্রদান করতে হবে। (৫) সর্বজনীন রেশনিং ব্যবস্থা চালু করতে হবে। (৬) পঞ্চায়েত ও গ্রামসভাকে শক্তিশালী করতে হবে। (৭) বহুস্তরীয় স্বশাসনের ভিত্তিতে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে সব জনগোষ্ঠীর অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। (৮) সর্বস্তবরে দুর্নীতি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধি রোধ এবং লোকপাল আইন চালু করতে হবে।              




The BPL Question

Posted by স্বাভিমান Labels: , , , ,

     The Below Poverty Line (BPL) lists are to be revised again. It is time therefore that the people looked closely at what is involved. For a family to be listed as BPL promises to ensure relatively affordable food, free medical care and various other facilities. It is therefore a vital marker for the nearly 80 percent of our rural population and the similar but slightly lesser numbers in the urban areas who do not get two square meals a day throughout the year. It is therefore not surprising that BPL listings have become the focus of spontaneous class struggle throughout India. A brief review of the question is therefore necessary at the present juncture.

Food crisis & famine

Posted by স্বাভিমান Labels: , , , ,

               In the first week of April `08, the influential US magazine Time noted:– “ .. the headlines of the past month suggest that skyrocketing food prices are threatening the stability of a growing number of governments around the world.”  The United Nations Special Rapporteur on the Right to Food Jean Ziegler offered among the bleakest prognoses for the continuing crisis -- “We are heading for a very long period of rioting, conflicts and waves of uncontrollable regional instability marked by the despair of the most vulnerable populations,”

স্বাভিমান:SWABHIMAN Headline Animator

^ Back to Top-উপরে ফিরে আসুন