Showing posts with label Assam. Show all posts
Showing posts with label Assam. Show all posts
Posted by স্বাভিমান Labels: , , , , , , ,

অসমের প্রাক-নির্বাচনী পরিস্থিতি, সৃষ্টি ও ধ্বংস

আমাদের আইনের শাসনে উপনিবেশিক প্রভাব এখনও বিদ্যমান। শোষণ ও অবদমনের বৈধতা  প্রদানই ছিল উপনিবেশিক শাসনের মুখ্য উদ্দেশ্য। দীর্ঘ সংসদীয় গণতন্ত্রে ও বিচারব্যবস্থার যাচাই প্রক্রিয়ায় নাগরিক ও জনগনের অধিকারের শাসনে্র লক্ষ্যে আইনের গণতান্ত্রিক পরিবর্তন হয়।  তবে বিশ্ব পুঁজিবাদী ব্যবস্থা, বিশ্বশক্তির ভারসাম্য, অভ্যন্তরিণ আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক  টানাপোড়েন ইত্যাদির সাথে সামঞ্জস্য রেখে বিপরীত যাত্রা চলছে বেশ কয়েক দশক ধরে। উপনিবেশিক কালা আইনের অপব্যবহার, নাগরিক অধিকার খর্ব করার জন্য নতুন কালা আইন জারি এবং আইনের গণতান্ত্রিক পরিবর্তনকে নাকচ করে শাসনযন্ত্রকে অত্যাচারী ও অমানবিক করে তোলার প্রচেষ্টা আমরা বহুবার প্রত্যক্ষ করেছি। কিন্তু গণতন্ত্রের জন্য প্রয়োজনীয় দু’টি গুরুত্ত্বপূর্ণ পরিসর আগে কখনও এভাবে আক্রান্ত হয়নি, বর্তমানে যা শাসনের চরিত্রের আমূল পরিবর্তনকে সূচিত করে।  

সেই পরিসরের প্রথমটি হচ্ছে, রাষ্ট্রের সাথে জনগণ বা ভোটারের সম্পর্ক যা নাগরিকত্ব আইন দিয়ে সংজ্ঞায়িত। নাগরিক হিসাবে ভোটাররা যে প্রতিনিধি নির্বাচিত করেন তারাই সরকার কিংবা আইনসভা পরিচালনা করেন, অর্থাৎ নাগরিক হিসাবে ভোটাররাই সার্বভৌম – দেশের সার্বভৌমত্বের ধারণা তাতেই নিহিত। বেশ কয়েকবার শাসনের সেই ধারণা বাধাপ্রাপ্ত হয় – ১৯৬২ সালে ইন্দো-চিন যুদ্ধের পরিস্থিতিতে, ১৯৭১ সালে ইন্দো-পাক যুদ্ধের আবহে এবং ১৯৭৫ সালের অভ্যন্তরিণ বিশৃঙ্খলার অজুহাতে কুখ্যাত ইমার্জেন্সির সময়ে। এসব করা হয় পরিস্থিতির দোহাই দিয়ে জরুরীকালীন অধ্যাদেশ জারি করে। তাতে আইনের পরিবর্তন করা হয়নি, যদিও এধরনের অধ্যাদেশ জারি করার ক্ষমতাই গণতন্ত্রের জন্য বিপদজনক।

নিওলিবারেল অর্থনীতির প্রবেশের প্রথম পর্যায়কে উন্নয়ন ও সামাজিক শান্তির নতুন যুগের সূচনা ভাবলেও, দ্বিতীয় পর্যায় থেকে শাসকশ্রেণি আম-জনতার ক্ষোভ বৃদ্ধির সম্ভাবনা আঁচ করতে আরম্ভ করে। নাগরিকের সামগ্রীক জীবন রাষ্ট্রের নজরদারি ও হুকুমে পরিচালনার লক্ষ্যে আইনের পরিবর্তন হতে শুরু করে। নাগরিকত্ব আইনের পরিবর্তনে রাষ্ট্র ও নাগরিকের গনতান্ত্রিক সম্পর্কের বিপরীত যাত্রার সেই যুগ তখনই শুরু হয়ে যায়।  

অসমের নির্দ্দিষ্ট বাস্তবতায় “বিদেশি ও বহিরাগত” ইস্যু সবসময়ই এক আবেগিক বিষয়। শাসক যে তার স্থায়ী সমাধান কখনোই চাইতে পারে না, অসমের আলোকপ্রাপ্ত সমাজের এই বোধ হারিয়ে ফেলার জন্যই নাগরিক-অধিকারের বিষয়টি অসমে এক ভয়ানক রূপ নিয়েছে। রাষ্ট্র অন্যায় আচরণ করবে, তাতে আশচর্য হওয়ার কিছু নেই। কিন্তু বিপদ দেখা দেয় তখনই যখন রাষ্ট্রের অন্যায় সামাজিক স্বীকৃতি লাভ করে। ইউরোপীয় ‘সিভিল সোসাইটি’ অর্থে সুশীল সমাজের অস্তিত্ব ভারতেই দুর্বল, অসমের মত প্রান্তিক অঞ্চলে তা যে অত্যন্ত দুর্বল হবে তা বলাই বাহুল্য। সেই সুশীল সমাজ ভাবতেই পারেন যে আইএমডিটি আইন বাতিল হলে বিদেশি সমস্যার সমাধান হবে, কিন্তু বাম-গণতান্ত্রিক শিবিরের একাংশও তা’ই ভেবেছিলেন এবং সেটা বাতিলের পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন। যে প্রদেশে “বিদেশি ও বহিরাগত” সমস্যা এক বাস্তব সমস্যা যার আবেগিক  ব্যবহারে জন্য শাসক ও শাসনযন্ত্র তাকে জিইয়ে রাখার ও শোষণ-প্রক্রিয়ায় অতি-শোষণের লক্ষ্যে বলপ্রয়োগে শ্রমকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করার উদ্দেশ্যে ব্যবহার করবে, সেখানে রাষ্ট্রের হাতে এক অমোঘ অস্ত্র তুলে দেওয়ার সামাজিক স্বীকৃতি পেল। নাগরিকত্বের সন্দেহ দেখা দিলে অভিযুক্তের উপরই বর্তাবে অভিযোগ খণ্ডনের দায়। দ্বিতীয়বার এনআরসি’র প্রশ্নে শাসকের সেই ট্র্যাপে পা দিলেন “সুশীল সমাজ” ও বাম-গণতান্ত্রিক অংশ । তাঁরা ভাবলেন এনআরসি হলে অসমে “বিদেশি ও বহিরাগত” সমস্যার ক্লোজার হবে, বাস্তবে এনরাসি ও কা দু’টো আইনই নাগরিকের ঘাড়ের উপর খড়গ হিসাবে ঝুলে রইল। শাসকশ্রেণি উপর এই আস্থা ও ভ্রান্তির সূত্রপাত আসলে নিওলিবারেল অর্থনীতির কাছে আত্মসমর্পণ থেকে জাত, মুখে তারা যা’ই বলুন না কেন, মানসিক পরাজয় তাতে অন্তর্নিহিত। এবার সবচাইতে বিপদজনক ন্যারেটিভ অসমের রাজনীতিতে তৈরি হতে চলেছে।

অসমে “পুশব্যাক” এই জমানার বিষয় নয়। কিন্তু আইনের বাধা এড়িয়ে গোপনে সেটা করা হত। এবার ১৯৫০ সালের অভিবাসী বহিষ্কারের এক আইনকে ব্যবহার করে পুশব্যাকের উপর আইনি জামা পড়ানোর চেষ্টা হচ্ছে, প্রয়োজনে আসাম রুলসের সংশোধনও করে নেওয়া হতে পারে। ১৯ লাখ এনআরসি ছুট, অসংখ্য ডি-ভোটার, ট্রাইব্যুনালের ভুলে লক্ষাধিক “ঘোষিত বিদেশি” ভারতীয় নাগরিকদের উপস্থিতিতে কী ধরনের সামাজিক ভয়ের পরিবেশ তৈরি হতে পারে তা সহজেই অনুমেয়। সেটা নির্বাচনী তুরুপের তাস হিসাবে অতীব কার্যকরী হাতিয়ার হিসাবেও ব্যবহৃত হতে পারে।

দ্বিতীয় যে পরিসরটির রাষ্ট্র সম্পর্ক বদলে দিচ্ছে সেটা হলো সম্পত্তির অধিকারের প্রশ্ন। আইনের চোখে সম্পত্তির অধিকারের প্রশ্নে সবাই সমান। কিন্তু জমি অধিগ্রহণ আইন, কৃষি বিল, শ্রম কোড ইত্যাদির মাধ্যমে আম-জনতার সম্পত্তির ও আয়ের অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। রাষ্ট্র যখন ইচ্ছা তখনই আম-জনতার সম্পত্তির উপর বুলডোজার চালাতে পারে, সম্পত্তি কাকে দেওয়ার জন্য? ব্যক্তিমালিক কর্পোরেট পুঁজির স্বার্থে এ হলো রাষ্ট্রের সেবা। এই প্রশ্নে কোন গণতান্ত্রিক প্রতিরোধ হলে, রাষ্ট্র কতটা নিষ্ঠুর হতে পারে তার বহুবিধ নজির ইতিমধ্যে তৈরি হয়েছে। এই প্রতিরোধের আবহেও নিওলিবারেল আত্মসমর্পণ একেবারে স্পষ্ট। এবং ফলে শাসক এই প্রশ্নেও একধরনের সামাজিক স্বীকৃতি আদায় করে নিতে সক্ষম হচ্ছে।    

অসমের রাজনীতিতে এই দু’টি বিষয়ের সাথে শ্রমিকের অধিকারের প্রশ্ন ওতোপ্রোতভাবে জড়িত, কারণ শাসকের এধরনের অগণতান্ত্রিক ও অমানবিক ভূমিকার পেছনে আসল চালিকাশক্তি হচ্ছে কর্পোরেট পুঁজির জন্য সস্তা শ্রম ও সস্তা সম্পদের যোগান ধরার বাধ্যবাধকতা।

আর শাসকের সামাজিক স্বীকৃতি আদায়ের পেছনে আসল রহস্য হচ্ছে বিরোধী শিবিরের ভূমিকা ও “সুশীল সমাজের” বিভ্রান্তি। বিরোধীরা পুঁজির মালিককে অসন্তুষ্ট করে সংসদীয় গণতন্ত্রের পরিসরে নির্বাচনী রাজনীতি করতে অক্ষম। ফলে রাষ্ট্রের আচরণের ব্যাপারে তাদের বিরোধিতা “ধরি মাছ, না ছুঁই পানি’র” মত। এমনকি বাম-বিরোধী শিবিরের একাংশেরও এই প্রবণতা ক্রমশঃ প্রকট হচ্ছে। সম্প্রতি সিপিএম দল কেরালা সরকারের ভূমিকার উপর সিলমোহর লাগাতে নতুন এক নীতিগত অবস্থান নিয়ে ব্যক্তি-পুঁজির গুরুত্ত্বকে সমাজবাদী গঠন প্রক্রিয়ার বাস্তবতার অঙ্গ হিসাবে মেনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। হঠাৎ করে এই সিদ্ধান্তের কী অর্থ? রাষ্ট্রীয় মালিকানার অর্থ যে সমাজবাদ নয়, সেটা সবাই স্বীকার করে, কিন্তু সেটি অবশ্যই একটি  প্রয়োজনীয় শর্ত – আবার ব্যক্তি-মালিকানা হলেই যে তা সমাজবাদী শ্রেণিসংগ্রামের দ্বারা প্রভাবিত হবে না সেরকম কোন স্বতঃসিদ্ধ নিয়মও কেউ ঘোষণা করেনি। কিন্তু নেহেরু-ইন্দিরা জমানায়, সিপিএম রাশিয়া থেকে আবিষ্কার করল যে রাষ্ট্রীয় মালিকানা সমাজবাদের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ, এবার বাজপেয়ী – মোদী জমানায় চিন থেকে আবিষ্কার করল ব্যক্তি-মালিকানা সমাজবাদী গঠন-প্রক্রিয়ার অঙ্গ। প্রথমটি ছিল রাষ্ট্রীয় আমলাতান্ত্রিক পুঁজিবাদের কাছে আত্ম-সমর্পণ, দ্বীতিয়টি নিওলিবারেলিজমের কাছে।  

অ-বাম বিরোধী শিবিরের দুর্বলতা আরও এককাঠি উপরে। রাষ্ট্রের চরিত্র বদলে “রাষ্ট্র-সর্বেসর্বা” করার যে আইনি আয়োজন চলছে, তাতে প্রাথমিকভাবে টার্গেট মুসলমানরা। কারণ, তারা মূলত কৃষিজীবী, তারা মূলত দক্ষ কায়িক-শ্রমিক, তারা সংখাগুরু ধর্মের কাছে মূল অপর ধর্ম। ফলে বিরোধীরা রাষ্ট্রের ভূমিকার বিরোধিতা করতে গিয়ে সেই আশঙ্কায় ভোগেন যে, সংখ্যাগুরুর ভোট না হাতছাড়া হয়, যদিও সেই আশঙ্কাকে গুরুত্ত্ব দিয়ে তাদের বিশেষ প্রাপ্তি ঘটেনি। কিন্তু শাসকরা তাতে মেজোরিটির সামাজিক স্বীকৃতি লাভে সফল হয়েছে, প্রথম পর্যায়ের বিজয় হাসিল করে নিয়েছে। সেই স্বীকৃতির জোরেই এবার এই নীতি প্রসারিত হচ্ছে অমুসলিম শ্রমিক-কৃষকদের উপর। কিন্তু তার সার্বিক বিরোধিতার নৈতিক অবস্থান খুইয়েছে বিরোধী শিবির।

অতি-ক্ষমতাধর রাষ্ট্রের অতিমানব রাজনেতা তৈরি হয়। কারণ রাষ্ট্রক্ষমতার কেন্দ্রীভবনের সাথে ব্যক্তিক্ষমতারও কেন্দ্রীভবন ঘটে। অসমে কংগ্রেস শিবির সেখানে চ্যালেঞ্জ জানাতে গৌরব গগৈকে হাজির করেছেন। সেখানে ব্যক্তি-ইমেজ ভাঙাগড়ার রাজনৈতিক নাটক অব্যাহত আছে। কিন্তু শাসক শিবির তার দলের নির্বাচনী নেতৃত্বের ইমেজ-বিল্ডিংকে এমন পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে, যেখান থেকে সাধারণ জনগণ ভাবতে শুরু করে যে ব্যক্তি নিজেই আইন।

অথচ সাধারণ জনতাই নির্বাচনে ভাগ্য-নিয়ন্ত্রক। পুঁজির শোষণ, তথাকথিত উন্নয়নের যাঁতাকল, অর্থনৈতিক বিপর্যয়ে পর্যুদস্ত সাধারণ ক্ষোভিত মানুষ সমাধান চাইছে, দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া মানুষ ঘুরে দাঁড়াতে চাইছে। কিন্তু সর্বশক্তিমানের কাছে, ভাষা-ধর্মের মধ্যবিত্ত অপর সৃষ্টির রাজনীতির কাছে মানুষ তখনই আত্মসমর্পণ করে, যখন বিকল্প কোন সচেতন সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রতিবাদ-প্রতিরোধের পরিসর অনুপস্থিত থাকে। যে রাজনীতি অমানবিক পুশব্যাককে আইনি বৈধতা দেয়, এবং অমানবিকতাই রাজনৈতিক ক্ষমতার পরাকাষ্ঠা হিসাবে মানুষ মেনে নিতে বাধ্য হয়, তাকে প্রতিহত করতে পারে রাজ্যব্যাপী বিকল্প ভাবনার সামাজিক জাগরণ ও রাজনৈতিক আর্টিকুলেশন।  

বিরোধী শিবিরের সেদিকে বিশেষ নজর নেই, তারা চাইছেন মানুষের ক্ষোভ, মুখ্যমন্ত্রীর দাবিদার নেতা এবং দুর্নীতির ইস্যুতে নির্বাচন লড়ে নিতে। কারণ তারা জানেন, যে দল জনগণের আস্থা অর্জন করতে পারবে সেই দলকেই কর্পোরেট পুঁজি মদত দেবে যদি বিনিময়ে তাদের স্বার্থ দেখা হয়, এই ব্যাপারে বিরোধী শিবির বিজেপি’র নীতি থেকে খুব বেশি দূরত্ব বজায় রাখতে চাইছেন না। অসমের এক বড় সংখ্যক ভোটার চা-শ্রমিক, সেই শ্রমিকদের অধিকারের বিষয় উত্থাপনে নরম-হিন্দুত্বের রাজনীতিও ত্যাগ করতে হয় না, তথাপি চা-শ্রমিকদের মজুরির প্রশ্নে নীরবতা রহস্যজনক। ফলে হার-জিতের খেলা চলছে ধ্বংসের আঙিনায়।                 

সমগ্র বিশ্বে এক ধ্বংসের আবহ বিরাজ করছে। ভারত তথা অসম কোন ব্যতিক্রম নয়। তথাপি অসম সেই মানদণ্ডেও এক বিশেষ উল্লেখ দাবি করে। মিথোলজির আধুনিক ধ্বংসের পুনর্ণির্মাণ।

বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রায় একই সময় প্রাচীন সভ্যতা গড়ে ওঠার ঊষালগ্ন। ইতিহাসবিদরা এই প্রাচীন সময়কে কো-অ্যাক্সিয়্যাল পিড়িয়ড বা একই-অক্ষের সময়কাল হিসাবে চিহ্নিত করেন। প্রাচীন সভ্যতার একটি বৈশিষ্ট্য হলো বিশ্ব ও বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ড সম্পর্কে হতবাক হওয়া অনুসন্ধিৎসা। এর থেকেই জন্ম নেয় মিথোলজি’র দেবতাদের। ভারত গ্রিক সহ প্রায় সভ্যতাতেই মিথোলজির কাহিনীর সাযুজ্য রয়েছে। দ্বেষ, হিংসা, ক্রুরতা, ক্ষমতা লড়াইয়ের ভরপুর অসংখ্য দেবতা ও মিথোলজির চরিত্রে। আর এই চরিত্রগুলিই সৃষ্টির প্রতীক।

প্রেম, যুদ্ধ সব মিলিয়ে বারজন গ্রিক অলিম্পিয়ান দেবতার প্রধান জিউস। সৃষ্টির শুরুর সময়ের দেবতা হিসাবে আকাশ অথবা স্বর্গের স্বৈরশাসক ইউরেনাস ও পৃথিবী গায়া’র এক সন্তানের নাম ক্রোনাস। মাতা গায়া’র নির্দেশে ইউরেনাসের মিলনের সময় তাঁর পিতাকে হত্যা করে ক্রোনাস আকাশের দখল নেয়। ক্রোনাস তার বোন রায়াকে বিবাহ করে। কিন্তু মৃত্যুকালে তাঁর পিতা ভবিষদ্বাণী করেনে যে ক্রোনাসের মৃত্যু হবে তাঁর সন্তানের হাতে, সেই ভয়ে রায়া’র কোলে জন্মের সাথে সাথেই একে একে পাঁচ সন্তানকে সে খেয়ে ফেলে। ষষ্ঠ সন্তানকে রায়া গোপনে রক্ষা করে। সেই ষষ্ঠ সন্তান যখন তার পিতার সামনে হাজির হয়, তখন পিতার পেট থেকে বেরিয়ে আসে আগের পাঁচ সন্তান। তাদের এই নবজন্মের জন্য ষষ্ঠ সন্তান জিউস জ্যেষ্ঠ সন্তান হিসাবে টাইটানদের পরাজিত করে স্বর্গ, মর্ত্য, পাতালের সম্রাট হয়ে বাকী পাঁচ ভাইকে বিভিন্ন ক্ষমতার অধিপতি হিসাবে নিয়োগ করে। এতে তার মাতামহ ও পিতামহ সহযোগিতা করেন। এভাবেই অন্যান্য ক্ষমতার দেবতা হিসাবে আরও ছয় জনকে নিয়োগ করে।

এথেনার জন্মও চিত্তাকর্ষক। জ্ঞানী ও গুণী অলিম্পিয়া-পূর্ব টাইটান দেবী ম্যাটিস জিউসের পরামর্শদাতা, আবার তাদের মধ্যেও ভালবাসার আকর্ষণ রয়েছে। দেবতাদের এক বিবাহ অনুষ্ঠানে জিউস বিভিন্ন রূপে ম্যাটিসের পেছনে ধাওয়া করে, ম্যাটিস পাহাড়ের ছোট গর্তে ঢুকে গেলে সাপ হয়ে ভেতরে গিয়ে ম্যাটিসকে জড়িয়ে ফেলে। জিউস আদর করে দাবি করে যে জিউস ম্যাটিস থেকে বেশি বুদ্ধিমান সেটা প্রমাণিত হলো। প্রত্যুত্তরে ম্যাটিস বলে যে সে যদি ধরা দিতে চাইত না, তাহলে জিউস তাকে ধরতে পারত না। সেটা পরীক্ষা করতে ম্যাটিস ফড়িং সেজে গলিয়ে বেরিয়ে গেলে জিউস গিরগিটি রূপে ম্যাটিসকে গিলে ফেলে। এরপর ম্যাটিসের প্রচণ্ড মাথা ব্যাথা শুরু হয়। ব্যাথার উপসম না হলে ভেতেরে কী আছে তা দেখতে জিউসের মাথা দু’ভাগে কাটলে বেরিয়ে আসে জিউসের কন্যা অতীব রূপসী ও গুনবতী দেবী এথেনা। এভাবে বিশ্ব ও ব্রহ্মাণ্ডের পরিচয় ঘটার সাথে সামঞ্জস্য রেখে মিথোলজির দেবতা ও চরিত্র বাড়তে থাকে।

এবার ধ্বংসের পালা। সর্বময় ক্ষমতার অধিকর্তা হিসাবে হাজির রাষ্ট্রক্ষমতার অধিকারী রাজনেতা। পরামর্শদাতা দানব পুঁজির প্রেমে পেছনে ছুটতে ছুটতে জল, জমিন, জঙ্গল সব ধ্বংস করে নিচ্ছে। ধ্বংস হচ্ছে মানুষের জীবন জীবিকা। বদলা নিতে উত্তপ্ত হচ্ছে ধরিত্রী। ধ্বংস, যুদ্ধ, তাণ্ডবের দেবতারা জেগে উঠছেন। পৌরানিক মিথোলজির মত সৃষ্টির ক্ষমতা আর দেবতাদের হাতে নেই।  সৃষ্টি, সৌহার্দ্য, শান্তির দূতরা লুকিয়ে আছে মেহনতি জনতার মধ্যে। ধ্বংসের দেবতাদের মধ্যে লড়াইয়ের আবহেই জাগিয়ে তুলতে হবে মেহনতি জনতার সামাজিক শক্তিকে। প্রাচীন মিথোলজিতে ছিল দ্বান্দ্বিকতা – সৃষ্টির জন্য ধ্বংস, প্রেমের জন্য ঘৃণা, ভালবাসার জন্য যুদ্ধ। এবার শুধু ধ্বংসের একমাত্রিকতা, সৃষ্টি নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে নিতে চাইছে, সেই বিচ্ছিন্নতাই মেহনতির নতুন লড়াই সৃষ্টির নতুন দ্বান্দ্বিকতায়।                    

অস্থায়ী ঠিকা শ্রমিক-কর্মচারীদের আয় ও সামাজিক সুরক্ষা এবং নাগরিকত্ব, নাগরিক নিরাপত্তার দাবিতে গণকনভেনশন।

Posted by স্বাভিমান Labels: , , , , , , ,










৪ (চার) মার্চ ২০১৮, গান্ধী ভবন, শিলচর।
(ফোরাম ফর সোশ্যাল হারমনি’র উদ্যোগে এবং কোরাস ও অসম মজুরি শ্রমিক ইউনিয়নের সহযোগিতায়)

বন্ধুগণ,
     
   বিগত বহু দশক থেকে আসামের সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে নাগরিকত্ব ও বিদেশি বিতর্ক একটা জ্বলন্ত ও নির্ধারক বিষয় হয়ে থেকেছে। সত্তরের দশকের শেষে আসামের ঐক্যবদ্ধ শ্রমিক কৃষক আন্দোলনকে বিভাজিত করতে শুরু হয় আসুর উগ্রজাতীয়তাবাদী আন্দোলন৷ আসামের জনগণ বার বার সাক্ষী হয়েছেন নানা প্রতিক্রিয়াশীল আন্দোলন ও রক্তক্ষয়ী গোষ্ঠী সংঘর্ষের। আজ, ২০১৮ সালে NRC নবায়নকে সামনে রেখে, উগ্রজাতীয়তাবাদ তাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে আবারও ময়দানে নেমেছে৷ মুমূর্ষু আর্থিক অবস্থায় পুঁজিপতি ও বৃহৎ বাজারের খিদে মেটাতে গিয়ে রাষ্ট্রের জন-কল্যাণকামী চরিত্রও লোপ পাচ্ছে। এতে গিয়ে বেকারি, উচ্ছেদ, করের বোঝা,মজুরি ইত্যাদি সমস্যায় জর্জরিত আপামর অসমবয়সীর কাছে উগ্র জাতীয়তাবাদ জনসমর্থন হারানোর পথে। ছয় জনগোষ্ঠীর সংরক্ষণের আন্দোলন, সমস্যা জর্জরিত বোড়ো, কার্বি, ডিমাসা সহ অন্যান্য জনজাতীয় গোষ্ঠীর ক্ষোভ, বঞ্চনা নিপীড়নের বিরুদ্ধে ঝাড়খণ্ডী-আদিবাসী চা-শ্রমিকদের সংগ্রাম, ভাটি অসমের দিকে দিকে নিপীড়নের বিরুদ্ধে ভাষিক সংখ্যালঘু জনতার প্রতিরোধের বহিঃপ্রকাশ, আসামের প্রাকৃতিক সম্পদ লুটের জন্য বেসরকারিকরণ আজ অসমিয়া উগ্র জাতীয়তাবাদকে এক পতনোন্মুখ শক্তিতে পরিণত করেছে। এই পতনোন্মুখ শক্তিকে আবার মাথা তোলার আগেই শেষ ধাক্কা দিয়ে পরাস্ত করে উগ্র জাতীয়তাবাদ ও সাম্প্রদায়িকতাবাদ মুক্ত আসাম গড়ার লক্ষ্যে সমগ্র আসামবাসীর গণতান্ত্রিক ঐক্য সুদৃঢ় করে গণ আন্দোলনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।
          (১) আমরা দাবি করছি 
        (ক) সুষ্ঠু এনআরসি রূপায়ণ (খ) কোনো ভেদাভেদ না করে সরল নাগরিকত্ব প্রমাণ ও ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়া (গ) সমগ্র আসামবাসীকে একই মানবিক মানদণ্ডে বিচার করা (ঘ) প্রতিটি জনগোষ্ঠীর সম-অধিকার ও সম-মর্যাদা৷
      ভারতবর্ষের বিভিন্ন রাজ্যের মতো আসামেও বেকারত্বের সাথে পাল্লা দিয়ে ঠিকা শ্রমিক-কর্মচারীর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে স্থায়ী শ্রমিক নিয়োগের বদলে ঠিকাদারের মাধ্যমে সস্তায় অস্থায়ী শ্রমিক নিয়োগ হচ্ছে। এই শ্রমিক-কর্মচারীরা নিয়োজিত রয়েছেন ছোটো বড়ো সরকারি বেসরকারি উদ্যোগ ও বিভাগে, শিক্ষা-স্বাস্থ্য-পরিবহণের মতো পরিসেবামূলক ক্ষেত্রে, নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে বিভিন্ন পরিকাঠামোগত ক্ষেত্রে। পরিকাঠামো নির্মাণে নিয়োজিত এই ঠিকা শ্রমিকদের অধিকাংশই আসামের এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে, গ্রাম থেকে শহরে বা এক জেলা থেকে অন্য জেলায় গিয়ে কাজ করেন। এই শ্রমিক-কর্মচারীদের আয় ও সামাজিক সুরক্ষা নেই, ন্যূনতম আইনি গ্যারান্টিও রূপায়ণ হয় না। নাগরিক হিসেবে তাদের সামাজিক নিরাপত্তাও বিঘ্নিত। ২০১৬-এর অক্টোবরে ধেমাজি জেলার গোগামুখে ভাটি অসমের ১১ জন শ্রমিককে বাংলাদেশী অভিযোগে পাকড়াও করে জেলে পুরে দেওয়া হয় ও এই কিছুদিন আগে দরং জেলার ধোলায় হাসান আলি নামে এক বাঙালি শ্রমিকের হাজত-মৃত্যুর অভিযোগের বিরুদ্ধে বিক্ষোভকারীদের উপর পুলিশের গুলিতে মহিদূল হক নামে আরেকজনের মৃত্যু হয়। বাংলাদেশী অভিযোগে শ্রমিকদের উপর নির্যাতন ইদানীংকালে বেড়ে চলেছে।
        (২) আমরা এই শ্রমিক-কর্মচারীদের আয় ও সামাজিক নিরাপত্তা ও নাগরিক অধিকার দাবি করছি।
       ঠিকা শ্রমিক (কন্ট্রাক্ট লেবার) আইনের আসাম রুল, ১৯৭১ অনুযায়ী এই আইন রূপায়ণের জন্য রাজ্যে উপদেষ্টা বোর্ড গঠন করতে হয়। ঠিকাদার বা নিয়োগকারীর পক্ষে ৪ জন ও শ্রমিকদের পক্ষে বিভিন্ন ইউনিয়নের ৪ জন প্রতিনিধি ৩ বছরের মেয়াদে এই বোর্ডে সামিল হয়। কিন্তু দীর্ঘ সময়ের মধ্যে আসামে এই বোর্ড গঠন করা হয়নি। ফলে মালিকপক্ষ ঠিকা শ্রমিকদের প্রতি মর্জি মাফিক ব্যবহার করে এবং শ্রমিকদের মজুরি ও সামাজিক সুরক্ষাজনিত সব ধরনের সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত করে। এই আইন অনুযায়ী ঠিকাদারের নিয়োগকারী সরকারি ও বেসরকারি বিভাগ/প্রতিষ্ঠান/কোম্পানি এই আইনের রূপায়ণের ব্যাপারে ঠিকা-শ্রমিকদের মুখ্য নিয়োগদাতা হিসেবে দায়বদ্ধ থাকে। কিন্তু বর্তমান সরকার আইনের এই বিধান উঠিয়ে দিয়ে ঠিকাদারদের যথেচ্ছাচারের উপর শ্রমিকদের ভাগ্য তুলে দিতে চাইছে।
         এই আইন অনুযায়ী শ্রমিকদের জন্য
       (ক) পর্যাপ্ত বিশ্রামের স্থান (খ) ক্যান্টিন (গ)আপতকালীন চিকিৎসার ব্যবস্থা (ঘ) মুখ্য নিয়োগকর্তার উপস্থিতিতে ৭-১০ দিনের মধ্যে সাপ্তাহিক মজুরি প্রদান (ঙ) মজুরি রেজিস্টার, ওভারটাইম রেজিস্টার (চ) ১৯ নং ফর্ম (রুল ৭৮-২-ব) অনুযায়ী শ্রমিকদের মজুরি স্লিপ প্রদান ইত্যাদির গ্যারান্টি প্রদান করেছে। উপরন্তু, ঠিকাদার যাতে ন্যূনতম মজুরি আইন লঙ্ঘন করতে না পারে তারজন্য মুখ্য নিয়োগকর্তা দায়বদ্ধ থাকবে।
      (৩) আমরা উপরোক্ত আইনের সঠিক রূপায়ণ ও আইন অনুযায়ী পরামর্শদাতা বোর্ড গঠনের দাবি জানাচ্ছি এবং মুখ্য নিয়োগকারীর দায়বদ্ধতা উঠিয়ে দেওয়ার কেন্দ্রীয় সরকারের প্রস্তাবের বিরোধিতা করছি।
       এই তিন দফা দাবির ভিত্তিতে আমরা আগামী ৪ মার্চ, বেলা ১১টায় শিলচর গান্ধী ভবনে এক গণ-কনভেনশনে মিলিত হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। 
_________________________________________
ফোরাম ফোর সোশ্যাল হারমনির পক্ষে- অরিন্দম দেব, ফারুক লস্কর।
কোরাস-এর পক্ষে - নীলকান্ত দাস, স্নিগ্ধা নাথ, আজিম বড়ভূঁইয়া।
অসম মজুরি শ্রমিক ইউনিয়নের পক্ষে - ধরিত্রী শর্মা, নোমান আহমেদ, পারভেজ লস্কর।

⧭⧭⧭⧭⧭⧭⧭⧭⧭⧭⧭⧭⧭⧭⧭



অস্থায়ী ঠিকা শ্রমিক-কর্মচাৰীসকলৰ আয় আৰু সামাজিক সুৰক্ষা আৰু নাগৰিকত্ব, নাগৰিক নিৰাপত্তাৰ দাবীত গণ কনভেনশ্যন।
৪ (চাৰি) মার্চ ২০১৮, গান্ধী ভৱন, শিলচৰ।
('ফ'ৰাম ফৰ ছ'চিয়েল হাৰমনি’ৰ উদ্যোগত, কোৰাছ আৰু অসম মজুৰি শ্রমিক ইউনিয়নৰ সহযোগিতাত)



বন্ধুসকল,
   
(C)Image:ছবি
বিগত বহু দশকৰ পৰা অসমৰ সামাজিক আৰু ৰাজনৈতিক ক্ষেত্রখনত নাগৰিকত্ব আৰু বিদেশী বিতর্কটো এটা জ্বলন্ত আৰু নির্ধাৰক বিষয় হিচাপে পৰিগণিত হৈ আহিছে । সত্তৰৰ দশকৰ শেষৰ পিনে অসমৰ ঐক্যবদ্ধ শ্রমিক-খেতিয়ক আন্দোলনক বিভাজিত কৰিবৰ বাবে আছুৰ উগ্রজাতীয়তাবাদী আন্দোলন আৰম্ভ হয়৷ অসমৰ জনগণ বাৰে বাৰে নানা প্রতিক্রিয়াশীল আন্দোলন আৰু ৰক্তক্ষয়ী গোষ্ঠী সংঘর্ষৰ চিকাৰ হৈ আহিছে। আজি, ২০১৮ চনত NRC নৱীকৰণৰ গইনা লৈ, উগ্রজাতীয়তাবাদে তাৰ অস্তিত্ব টিকাই ৰাখিবলৈ আকৌ পথাৰত নামিছে ৷ মৃত্যুমুখী আর্থিক অৱস্থাত পুঁজিপতি আৰু বৃহৎ বজাৰৰ ভোক মিটাবলৈ ৰাষ্ট্রৰ জনকল্যাণকামী চৰিত্রও লোপ পাবলৈ লৈছে। ফলস্বৰূপে বেকাৰি, উচ্ছেদ, কৰৰ বোজা, মজুৰি ইত্যাদি সমস্যাত জর্জৰিত সাধাৰণ অসমবাসীৰ ওচৰত উগ্রজাতীয়তাবাদৰ জনসমর্থন হেৰাবলৈ আৰম্ভ কৰিছে। ছয় জনগোষ্ঠীৰ সংৰক্ষণৰ আন্দোলন, সমস্যা জর্জৰিত বড়ো, কার্বি, ডিমাছা সহিতে অন্যান্য জনজাতীয় গোষ্ঠীৰ ক্ষোভ, বঞ্চনা-নিপীড়নৰ বিৰূদ্ধে সংগ্রাম, ঝাড়খণ্ডী-আদিবাসী চাহ শ্রমিকসকলৰ সংগ্রাম, নামনি অসমৰ কেউদিশে নিপীড়নৰ বিৰুদ্ধে ভাষিক সংখ্যালঘু জনতাৰ প্রতিৰোধৰ বহিঃপ্রকাশ, অসমৰ প্রাকৃতিক সম্পদ লুটৰ বাবে কৰা বেচৰকাৰীকৰণে আজি অসমীয়া উগ্রজাতীয়তাবাদক এক পতনোন্মুখ শক্তিত পৰিণত কৰিছে। এই পতনোন্মুখ শক্তিয়ে আকৌ মূৰ দাঙি উঠাৰ আগতেই ইয়াক শেষ ধাক্কা দি পৰাস্ত কৰি উগ্রজাতীয়তাবাদ আৰু সাম্প্রদায়িকতাবাদ-মুক্ত অসম গঢ়াৰ লক্ষ্যৰে সমগ্র অসমবাসীৰ গণতান্ত্রিক ঐক্য সুদৃঢ় কৰি গণ আন্দোলনৰ পিনে আগ বঢ়াই লৈ যাব লাগিব।
           (১) আমি দাবী জনাওঁ -
       (ক) শুদ্ধ এনআৰচি ৰূপায়ণ (খ) কোনো প্রকাৰ ভেদাভেদ নকৰাকৈ সৰল নাগৰিকত্ব প্রমাণ আৰু ভেৰিফিকেশ্যন প্রক্রিয়া (গ) সমগ্র অসমবাসীক একেই মানৱিক মানদণ্ডত বিচাৰ কৰা (ঘ) প্রতিটো জনগোষ্ঠীৰ সমান অধিকাৰ আৰু সমান মর্যাদা৷
        ভাৰতবর্ষৰ বিভিন্ন ৰাজ্যৰ দৰে অসমতো বেকাৰত্বৰ লগত, ঠিকা শ্রমিক-কর্মচাৰীৰ সংখ্যা দিনে দিনে বাঢ়ি গৈ আছে। চৰকাৰী আৰু বেচৰকাৰী ক্ষেত্রত স্থায়ী শ্রমিক নিয়োগৰ সলনি ঠিকাদাৰৰ মাধ্যমেৰে সস্তাত অস্থায়ী শ্রমিক নিয়োগ কৰা হৈ আছে। এই শ্রমিক-কর্মচাৰীসকল নিয়োজিত হৈ আছে সৰু-ডাঙৰ চৰকাৰী-বেচৰকাৰী উদ্যোগ আৰু বিভাগত, শিক্ষা-স্বাস্থ্য-পৰিবহণৰ দৰে পৰিসেৱামূলক ক্ষেত্রত, নির্মাণ শ্রমিক হিচাপে বিভিন্ন পৰিকাঠামোগত ক্ষেত্রত। পৰিকাঠামো নির্মাণত নিযুক্ত এই ঠিকা শ্রমিকসকলৰ অধিকাংশই অসমৰ এক অঞ্চলৰ পৰা আন অঞ্চলৈ, গাঁৱৰ পৰা চহৰলৈ নাইবা এক জিলাৰ পৰা আন জিলাত গৈ কাম কৰে। এই শ্রমিক-কর্মচাৰীসকলৰ আয় আৰু সামাজিক সুৰক্ষা নাই, ন্যূনতম আইনী গেৰান্টিও ৰূপায়ণ নহয়। নাগৰিক হিচাপে তেওঁলোকৰ সামাজিক নিৰাপত্তাও বিঘ্নিত। ২০১৬ৰ অক্টোবৰ মাহত ধেমাজি জিলাৰ গোগামুখত নামনি অসমৰ ১১জন শ্রমিকক বাংলাদেশীৰ অভিযোগত ধৰি জে'লত ভৰাই দিয়া হয়। কেইদিনমানৰ আগতে দৰং জিলাৰ ধোলাত হাছান আলী নামৰ এজন বাঙালী শ্রমিকৰ হাজোতত মৃত্যু হোৱাৰ অভিযোগৰ বিৰুদ্ধে বিক্ষোভ জনোৱা ৰাইজৰ ওপৰত আৰক্ষীয়ে গুলি চলালে আৰু মহিদুল হক নামৰ এজন লোকৰ মৃত্যু হয়। সম্প্রতি বাংলাদেশীৰ অভিযোগত শ্রমিকসকলৰ ওপৰত নির্যাতন বাঢ়ি গৈ আছে।
       (২) আমি এই শ্রমিক-কর্মচাৰীসকলৰ আয় আৰু সামাজিক নিৰাপত্তাৰ লগতে নাগৰিক অধিকাৰৰ দাবী জনাওঁ।
     ঠিকা শ্রমিক (কনট্রেক্ট লেবাৰ) আইনৰ আছাম ৰুল, ১৯৭১ অনুসাৰে এই আইন ৰূপায়ণৰ বাবে ৰাজ্যত উপদেষ্টা ব'র্ড গঠন কৰিব লাগে। ঠিকাদাৰ অথবা নিয়োগকাৰীৰ পক্ষত চাৰি (৪) জন আৰু শ্রমিকসকলৰ পক্ষত বিভিন্ন ইউনিয়নৰ চাৰি (৪) জন প্রতিনিধি ৩ বছৰৰ ম্যাদত এই ব'র্ডত চামিল হয়। কিন্তু দীর্ঘ সময়জুৰি অসমত এই ব'র্ড গঠন কৰা হোৱা নাই। ফলস্বৰূপে মালিকপক্ষই ঠিকা শ্রমিকসকলক নিজৰ মর্জি অনুসৰি ব্যৱহাৰ কৰে আৰু শ্রমিকসকলক মজুৰি আৰু সামাজিক সুৰক্ষাজনিত সকলো ধৰণৰ সুযোগ সুবিধাৰ পৰা বঞ্চিত কৰি থাকে। এই আইন অনুসৰি ঠিকাদাৰৰ নিয়োগকাৰী চৰকাৰী আৰু বেচৰকাৰী বিভাগ/প্রতিষ্ঠান/কোম্পানী এই আইনৰ ৰূপায়ণৰ বিষয়ে ঠিকা-শ্রমিকসকলৰ মুখ্য নিয়োগকর্তা হিচাপে দায়বদ্ধ থাকে। কিন্তু বর্তমানৰ চৰকাৰে আইনৰ এই বিধান উঠাই দি ঠিকাদাৰসকলৰ যথেচ্ছাচাৰৰ ওপৰত শ্রমিকসকলৰ ভাগ্য গতাই দিব বিচাৰিছে।
      এই আইন অনুসৰী শ্রমিকসকলৰ বাবে
   (ক) পর্যাপ্ত বিশ্রামৰ স্থান (খ) কেন্টিন (গ) আপদকালীন চিকিৎসাৰ বাবে ব্যৱস্থা (ঘ) মুখ্য নিয়োগকর্তাৰ উপস্থিতিত ৭-১০ দিনৰ ভিতৰত সাপ্তাহিক মজুৰি প্রদান (ঙ) মজুৰি ৰেজিস্টাৰ, অভাৰটাইম ৰেজিস্টাৰ (চ) ১৯ নং ফর্ম (ৰুল ৭৮-২-ব) অনুসৰি শ্রমিকসকলক মজুৰি স্লিপ প্রদান ইত্যাদিৰ গেৰান্টি প্রদান কৰিছে। তদুপৰি, ঠিকাদাৰে যাতে ন্যূনতম মজুৰি আইন লঙ্ঘন কৰিব নোৱাৰে তাৰ বাবে মুখ্য নিয়োগকর্তা দায়বদ্ধ থাকিব।
    (৩) আমি উপৰোক্ত আইনৰ সঠিক রূপায়ণ আৰু আইন অনুযায়ী পৰামর্শদাতা ব'র্ড গঠনৰ দাবী জনাইছো আৰু মুখ্য নিয়োগকাৰীৰ দায়বদ্ধতা উঠাই দিয়াৰ কেন্দ্র চৰকাৰৰ প্রস্তাৱৰ বিৰোধিতা কৰিছো।
   এই তিনি দফা দাবীৰ ভিত্তিত আমি অহা ৪ মার্চ, দিনৰ ১১ বজাত শিলচৰ গান্ধী ভৱনত এক গণ-কনভেনশ্যনত মিলিত হোৱাৰ আহ্বান জনাইছো। 

_________________________________________
'ফ'ৰাম ফৰ ছ'চিয়েল হাৰমনি'ৰ হৈ - অৰিন্দম দেব, ফাৰূক লস্কৰ।
কোৰাছ-ৰ হৈ - নীলকান্ত দাস, স্নিগ্ধা নাথ, আজিম বড়ভুইয়া।
অসম মজুৰি শ্রমিক ইউনিয়নৰ হৈ - ধৰিত্রী শর্মা, নুমান আহমেদ, পাৰভেজ লস্কৰ।



ফোরাম ফর সোশ্যাল হারমনির বুলেটিন – ৩ (খসড়া)

Posted by স্বাভিমান Labels: , , , , , , ,



মাহমদপুর-জয়কৃষ্ণপুর জিপিতে ফোরাম ফর সোশ্যাল হারমনির সমীক্ষক দলের বৈঠক
একটি অসম্পূর্ণ প্রতিবেদন


           

জানুয়ারি, ২০১৬ বেলা ৩ টায় ফোরাম ফর সোশ্যাল হারমনির সমীক্ষক দল হাইলাকান্দি জেলার লালা শহর থেকে ৫/৬ কিঃমিঃ দূরে মাহমদপুর-জয়কৃষ্ণপুর জিপিতে পৌঁছয়, লালা ও কাটলিছড়ার মধ্যবর্তী অঞ্চলে এই জিপি অবস্থিত। দুর্ভাগ্যক্রমে আবহাওয়া ছিল প্রতিকূল। এই শীতের মরসুমেও মতবিনিময় সভার আগে ও পরে অঝোরে বৃষ্টি হয়, এমনকি সেখান থেকে শিলচরে ফেরার প্রায় ৫০ কিঃমিঃ পথ পাড়ি দিতে শিলাবৃষ্টির তোপে খানিকক্ষণ নিরাপদ আশ্রয়ে টিমের গাড়ি দাঁড় করিয়ে রাখতে হয়। দু-পাশে চা-বাগান ও গ্রামগুলিকে রেখে নব্য সেজে ওঠা কুচকুচে কালো পি-ডবলিউ-ডি রাস্তাকে বৃষ্টির জল ধুয়েমুছে সাফ করে আমাদের মত যাত্রীদেরকে যখন আবাহন করছিল, আমাদের নাগরিক মনকে যখন করে তুলছিল রোমান্টিক, ঠিক তখনই হয়ত রাস্তার পাশে খড়কুটোর ঘরে কোন এক চা-শ্রমিক মা তার কালো শিশুটিকে ছাদের ফোটা দিয়ে আসা বৃষ্টির জলের ও কিনকিনে ঠাণ্ডার মারণ ছোবল থেকে বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা করে চলেছে। সে যাই হোক, ভূমিকা বাদ দিয়ে এবার মোদ্দা কথায় আসা যাক।
     
         
  মতবিনিময় সভার স্থান যদিও ছিল মাহমদপুর-জয়কৃষ্ণপুর জিপি, কিন্তু সভায় আসলে উপস্থিত হোন আশপাশের অনেকগুলি জিপি ও দূরবর্তী স্থানের কিছু প্রতিনিধিরা। এরকম সভায় কোন একটি নির্দিষ্ট অঞ্চল সম্পর্কে গ্রহণযোগ্য বিশদ তথ্য সংগ্রহ করা কঠিন, বিশেষকরে প্রতিকূল আবহাওয়ার জন্য ফোরামের টিম যখন গ্রামের অভ্যন্তরে ঘুরে বেড়াতে অক্ষম হয়। স্বাভাবিকভাবেই এই জিপির তথ্য ছাড়াও আশপাশের অনেক ঘটনার কথা উঠে আসে এই আলাপচারিতায়। এই আলোচনা থেকে সমীক্ষক দলের মনে হয় যে হাইলাকান্দি জেলার কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা যা গোটা জেলার জনমানসেই শুধু প্রভাব ফেলেনি আর্থিক-সামাজিক বিন্যাসেও প্রভাব ফেলেছে এরকম ঘটনা, সামগ্রিক জনবিন্যাস, অভ্যন্তরীণ আর্থিক-সামাজিক সম্পর্ক নিয়ে এক বিশদ প্রতিবেদন তৈরির উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। তাই এই আলোচনা থেকে যেসব আর্থিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক তথ্য উঠে এসেছে সেগুলি আরও গভীরে যাচাই না করে তাৎক্ষণিক একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন তৈরি করা থেকে আপাতত: বিরত থাকাই শ্রেয় বিবেচিত হয়। এই দিক থেকে এদিনের আলোচনার এক বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে, কারণ এই আলোচনা ফোরাম টিমকে হাইলাকান্দি জেলার সামাজিক-রাজনীতিকে আরও গভীরে যাচাই করতে আগ্রহান্বিত করে তুলেছে।
          তবে সেদিনের আলোচনার বিশদ তথ্য এখানে তুলে না ধরলেও, কিছু সাধারণ তথ্য এখানে তুলে ধরছি। ১৯৭৯-৮০ সালে কাটলিছড়া এলাকায় এক ভয়াবহ দাঙ্গার পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। আব্দুল মালিক লস্কর এই প্রসঙ্গ উত্থাপন করলে কাটলিছড়া এলাকার অধীর নাথ জানান, সে সময় লবণ-কেরোসিনের খুব সংকট দেখা দেয়। সেই লবণ-কেরোসিনের বণ্টনকে কেন্দ্র করে সমবায় সমিতির তৎকালীন চেয়ারম্যান প্রয়াত ইউনিস খান চৌধুরীকে অপমানিত করার মত কোন এক ঘটনা ঘটে। প্রয়াত চৌধুরী ছিলেন সে এলাকার সর্বজনশ্রদ্ধেয় প্রভাবশালী ব্যক্তি। এই ঘটনার প্রতিবাদে ১৯৭৯ সালের সম্ভবত জুন-জুলাই মাসে তাঁর সমর্থনে হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে সাধারণ মানুষের এক ঐক্যবদ্ধ মিছিল বেরোয়। এই সময় জনৈক বিভূতি দেবের বাড়িতে কেউ বা কারা কিছু ইট-পাটকেল ছোড়ে, ইউনুস খান এই ঘটনার প্রতিবাদও করেন। কিন্তু মিছিল যখন কাটলিছড়া বাগান-থানা হয়ে ফিরে গিয়ে কাটাখাল নদী পার হয় তখনই সাম্প্রদায়িক রূপ পরিগ্রহ করে, কেন-কীভাবে তা আরও বিশদভাবে জানা প্রয়োজন। আব্দুল মালিক লস্কর ও অধীর নাথ জানান যে এই দাঙ্গায় ময়না মোক্তারের দুই ছেলে সপু ও তপুকে হত্যা করা হয়। ইউনুস খানের মত ময়না মোক্তারও ছিলেন এই এলাকার মুসলিম জমিদার (আনুমানিক ৭০০/৮০০ বিঘা জমির মালিক) ও প্রভাব প্রতিপত্তিশালী ব্যক্তি এবং সেই সুবাদে তার ছেলেদেরও ছিল এলাকায় দাপট। সপু-তপু দুই ভাইয়ের হত্যা নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে, কারুর মতে তাদেরকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে, আবার পুলিশের গুলিতে তারা নিহত হোন বলে ভিন্ন মতও রয়েছে। তবে সেই ঘটনায় দীননাথপুর চা-বাগানের ৩ জন মুসলিম শ্রমিক পুলিশের গুলিতেই নিহত হয়েছেন বলে জানান অধীর নাথ। এই দাঙ্গার নির্ভরযোগ্য বিশদ তথ্য সংগ্রহ করা এবং দাঙ্গার পেছনে অন্তর্নিহিত আর্থ-সামাজিক কারণসমূহ বিশ্লেষণ করা জরুরি। তবে এই দাঙ্গার পর কাটলিছড়া বাজারে মুসলিম ব্যবসায়ী যারা ব্যবসা করতেন তাদের প্রায় সবাই ধীরে ধীরে সরে আসেন এবং সাহাবাদ ও লালা এলাকায় চলে আসেন। সাহাবাদ বাজার সেই সময়েই গড়ে ওঠে। আব্দুল মালিক লস্কর বলেন যে কাটলিছড়া বাজার মসজিদে আজান দিতে দেওয়া হয় না, হিফজুর রহমান এই তথ্যের সাথে দ্বিমত পোষণ করেন, আবার সালা উদ্দিনের মতে সেখানে মুসলাম না থাকায় সম্ভবত আজান দেওয়া হয় না। যে জিপিতে সভা বসেছিল সেই জিপিতে হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের লোক বাস করলেও সেই দাঙ্গার কোন প্রভাব এই এলাকায় পড়েনি। তার কারণ জানতে চাইলে আব্দুল মালিক লস্কর জানান যে এই এলাকায় সবাই স্থানীয় এবং মুসলিম, এসসি, অবিসি সম্প্রদায়ের লোক। সালা উদ্দিন, রেকিব উদ্দিন, সাজ্জাদ আলি লস্কর বলেন যে এই এলাকায় হিন্দু-মুসলমানে সামাজিক মেলামেশার পরিবেশ ও সম্প্রীতি রয়েছে এবং কোনধরনের সাম্প্রদায়িক ঘটনার নজির নেই, তবে অতীতে টান্টুর মোকামকে কেন্দ্র করেই হোক বা সাধারণভাবে এ অঞ্চলে যৌথ সামাজিক আনন্দ উৎসবের যেসব অনুষ্ঠান ছিল তা এখন আর অবশিষ্ট নেই, দৈনন্দিন মেলামেশা মূলত বাজার ও পারিবারিক অনুষ্ঠানকেন্দ্রীক।
     
      
   বিভিন্ন কথোপকথন থেকে সমীক্ষক দলের ধারণা জন্মে যে এই দাঙ্গার পেছনে রয়েছে ধর্ম-বর্ণ-জমিকে কেন্দ্র করে উৎপাদন সম্পর্ক এবং সর্বোপরি তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তান থেকে আসা উচ্চবর্ণ হিন্দু পরিবারদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠার প্রয়াসের সাথে স্থানীয় প্রতিষ্ঠিত মুসলিম পরিবারদের সংঘাতের এক জটিল আর্থিক-সামাজিক-রাজনৈতিক সংমিশ্রণের পরিণতি। এটা ফোরাম টিমের শুধু ধারণাই, এনিয়ে আরও গভীরে পর্যালোচনা করা জরুরি। পর্যালোচনা করা জরুরি ১৯৯০ সালের হাইলাকান্দি দাঙ্গার ঘটনা নিয়েও। সত্তরোর্ধ সাজ্জাদ আলি লস্কর বলেন একষট্টির ভাষা আন্দোলনের সময় অসমীয়া ভাষার দাবিতে তাঁরা মিছিল করেছেন, কিন্তু পরবর্তীতে বুঝতে পারেন যে তিনি তো অসমীয়া ভাষা এক লাইনও বলতে পারেন না। সুতরাং সে সময়কার ঘটনাবলীও নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করে দেখা জরুরি। এই কাজগুলি করা অত্যন্ত জরুরি এই কারণেই যে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এই জেলা নিয়ে বিভিন্ন ধরনের ভ্রান্ত ধারণা মধ্যবিত্ত শিক্ষিত মননে বিরাজ করছে এবং হাইলাকান্দি জেলায় হিন্দু-মুসলিম বিভাজনকে সুদৃঢ় করতে উগ্র-সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী অতি-সক্রিয় রয়েছে।
      
   
  এই জিপি সম্পর্কে কিছু তথ্য সংগ্রহ করা গেছে উপস্থিতিদের বয়ান থেকে। তবে ভাল করে যাচাই না করে সবগুলি তথ্য এখানে উপস্থাপন করা থেকে বিরত থাকা গেল। শুধুমাত্র গুটিকয় তথ্য এখানে তুলে ধরা হচ্ছে। জবরুল ইসলাম জানান যে এই জিপি-তে আনুমানিক ৬/৭ হাজার ভোটারের মধ্যে পাঁচশত থেকে এক হাজার হিন্দু ভোটার রয়েছে। জমির মালিকানা রয়েছে ৭০% মানুষের। গড়ে ১ থেকে ২ বিঘার জমি মালিকানা। ৩%-এর ৫ বিঘার উপর জমি রয়েছে, আনুমানিক ১০ টি পরিবারের রয়েছে ১০ বিঘার উপর জমি। সবাই পাওয়ার টিলার দিয়ে জমি চাষ করেন। এই ৭০%-এর মধ্যে ১৫%-এর ক্ষুদ্র ব্যবসায় আছে ও দুইজন জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার ছাড়া ৫% লোক ৩য়-৪র্থ শ্রেণি ও শিক্ষকতার (অধিকাংশ প্রাইমারী স্কুলের) চাকরীর সাথে যুক্ত। বাকী ৩০% লোক বিভিন্ন ক্ষেত্রে পুরোপুরি দিনমজুর। চাষের জমি দুই ফসলি, অসংখ্য ফিসারি রয়েছে এ অঞ্চলে। জমি না থাকায় এ অঞ্চলের মৎস্যজীবী মাইমাল সম্প্রদায়ের মানুষ মৎস্য চাষের সাথে যুক্ত থাকলেও ফিসারির মালিকানা প্রায় নেই। এলাকায় একটি ক্যানেল ইরিগেশনের ব্যবস্থা থাকলেও তা অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে। অথচ কাটাখাল নদী থেকে বা টিউবওয়েলের মাধ্যমে ইরিগেশনের ব্যবস্থা করলে চাষবাস ও ফিসারির প্রভূত উন্নতি হতে পারত। পাশের নিজবার্ণারপুর-সর্বানন্দপুর জিপিতে তারা-পাম্পগুলি অকেজো হয়ে পরে থাকায় ভীষণ পানীয় জলের সংকট এবং এই জিপির বহু এলাকা বিদ্যুৎ সংযোগহীন।
উপরোক্ত তথ্যগুলিকে আরও গভীরে যাচাই করার মাধ্যমে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রস্তুত করার ইচ্ছা নিয়ে ফোরামের সমীক্ষক দল শিলচর ফিরে আসে।

ডার্করুমে আজাদ

Posted by স্বাভিমান Labels: , ,

(হঠাৎ মনে উদয় হল – তাই এই অনুগল্পটি লিখে ফেললাম)
            তখন কত আর বয়স হবে তার। বছর দেড়েক হল ম্যাট্রিক পাশ করেছে। অসমীয়া মাধ্যমে পড়েছে সে, বাড়িতে বাংলা বললেও নিজেকে অসমীয়া-মুসলিম বলেই জানে বরপেটার ভানুবিলের আজাদ। নিরীহ গোবেচারা প্রকৃতির ছেলে। সেবার যখন সন্ত্রাসী আক্রমণে তার গ্রাম জ্বলেপুড়ে খাক হয়ে যায়, গ্রামের অন্য সমবয়সীদের সাথে সে প্রতিরোধে সামিল হতে পারেনি। তার সমবয়সীরা তাকে কাপুরুষ-মেয়েলি স্বভাবের বলে অবজ্ঞা করত। সেবার তারা সপরিবারে আশ্রয় নেয় রিফিউজি ক্যাম্পে। তাকেও রোজগারের সন্ধানে নেমে পড়েতে হয়। ভাল রোজগারের সন্ধান পেয়ে দুই বন্ধু পাড়ি দেয় মুম্বাই শহরে। উপেন বড়ো তার স্কুলের সহপাঠী এবং দুজনে গলায় গলায় ভাব।
          মুম্বাইয়ে এক ডিজাইনার কোম্পানীর ওয়ার্কশপের ডার্করুমে দুজনে একসাথে কাজ করে। কিন্তু অর্থ রোজগারের যে আশায় দুই বন্ধু মুম্বাই পাড়ি দিয়েছিল তা এখনও পূরণ হয়নি – এই চাকরিতে নিজের খাওয়া-দাওয়ার খরচ শেষে বিশেষ সঞ্চয় করা যায় না। তাই অন্য ভাল কাজের সন্ধানে রয়েছে তারা।
যে মেসে তারা থাকে সেখানে টিভি দেখার বন্দোবস্ত করে দিয়েছে বাড়ি-মালিক। সেদিন রাতের খাওয়া-দাওয়া সেরে টিভির পর্দায় দুজনে চোখ রাখে। গুরদোয়ারায় আমেরিকান যুবকের সশস্ত্র আক্রমণের খবর উপেন খুব মনযোগ দিয়ে শুনে, কিন্তু আজাদ এই খবর শুনতে চায় না। তার গ্রাম আক্রমণের দুঃস্বপ্ন সে ভুলে থাকতে চায়।
           পরদিন যথারীতি কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে দুজনেই। দারোয়ান এসে খবর দেয় আজাদের একটা ফোন এসেছে। ফোন ধরতে চলে যায় আজাদ। কিছুক্ষণ পর আজাদ ফিরে আসে। অন্ধকারে উপেন তার শক্ত চোয়াল ও উদভ্রান্ত চেহারা দেখতে পায়নি। উপেন ফোনের খবর জানতে চাইলে, টেবিলে রাখা ছুরি তুলে নিয়ে সজোরে উপেনের বুকে বসিয়ে দেয় আজাদ উপেন মাটিতে লুটিয়ে পড়ে, আজাদও দেখতে পায়নি তার প্রিয় বন্ধুর প্রাণহীন মুখ। আজাদ রক্তরাঙা ছুরি উঁচিয়ে ধরে ডার্করুম ছেড়ে বেরিয়ে আসে। ভাবলেশহীন আজাদকে এভাবে দেখতে পেয়ে আশপাশের সবাই তাকে ধরে ফেলে, কিন্তু সে যেন কিছুই বুঝতে পারছে না – শারীরিক যন্ত্রণার গোঙানির সাথে মিশে ‘আমি কাপুরুষ নই’ কথাটি তার গলা থেকে বেরিয়ে আসছে। পুলিশ এসে আজাদকে নিয়ে যায়। কথাবার্তা বলে পুলিশের মনে হয় সে মানসিক রোগী – চিকিৎসার জন্য তাকে আদালতের সুপারিশে মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পুলিশ খবর নিয়ে জানতে পারে সেদিন আজাদের এক আত্মীয় তাকে রিফিউজি ক্যাম্প আক্রমণের খবর দিয়েছিল, যে আক্রমণে অনেকের সাথে তার পরিবারের সবাই নিহত হয়।
         কিছুদিন চিকিৎসার পর তার মানসিক ভারসাম্য ফিরে এলে তাকে সংশোধনাগারে পাঠানো হয়। আদালত থেকে জেলে পৌঁছতে পৌঁছতে মাগরিবের নামাজের সময় হয়ে যায়। জেল আঙিনার একপ্রান্তে মুসলিম কয়েদিরা সারিবদ্ধ হয়ে হাঁটুগেড়ে বসে পড়েছে। আজাদও তাদের সাথে যোগ দেয়। জীবনে এই প্রথমবারের মত নামাজের মর্মার্থ বোঝার চেষ্টা করে আজাদ।

প্রযুক্তি-চর্চা, সমস্যা জর্জরিত বরাক উপত্যকা ও বিশেষজ্ঞদের ভূমিকা

Posted by স্বাভিমান Labels: , , , , ,

         

        (বেশ কিছুদিন আগে 'দৈনিক সাময়িক প্রসঙ্গে' এই লেখকের একটি চিঠি বেরিয়েছিল – সেই চিঠির বিষয়বস্তুকে নিয়েই 'অরুণোদয়' কাগজের  জন্য এই পুনর্লিখন – অরূপা মহাজন।)
           ঙ্গল গ্রহে ইসরোর উপগ্রহ অভিযানের জন্য ভারত সরকারের কেবিনেট ৪৫০ কোটি টাকা মঞ্জুর করেছে। এই উপগ্রহটি নাকি লাল-গ্রহের বায়ুমণ্ডল যাচাই করবে। অর্থমূল্যের হিসেবে বিচার করলে এই অভিযানকে ভারতের মত দরিদ্র দেশের অর্থের অপচয় হিসেবে বিবেচনা করা যায় না। কিন্তু এই অভিযানকে ফলাও করে প্রচার করার মধ্যে বিজ্ঞান ও কারিগরি বিদ্যাচর্চার ক্ষেত্রে আমাদের দিশাহীন কিংবা একদেশদর্শী পরিকল্পনার প্রতি আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এই অভিযানকে কেন এতো গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে? তার দুটি মুখ্য কারণ রয়েছে। প্রথমত এতে আমাদের এলিট শ্রেণির এবং তাদের নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে শিক্ষিত ও প্রভাবান্বিত মধ্যশ্রেণির সুপার-পাওয়ার হওয়ার সুপ্ত অলীক বাসনাকে আরেকটু উস্কে দেওয়া যায় – বিশ্ব এলিট ক্লাবের সাথে  গা-ঘেঁষাঘেষি করে তাদের ‘অল্টার-ইগোকে’ ফুলে-ফেঁপে উঠতে দেওয়া যায়। সুপার-পাওয়ার হওয়ার এই বহিরঙ্গের সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে যুক্ত একটা অন্তরঙ্গও রয়েছে যা আমাদের দেশের সাধারণ মানুষের এমনকি মানব সভ্যতার জন্য বিপদজনক। কী সেই বিপদ? বহিরঙ্গে সুপার-পাওয়ার হওয়ার প্রয়াস অন্তরঙ্গে সুপার হওয়ার প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেই করতে হয় অর্থাৎ আমাদের এলিট শ্রেণি ও তাদের পোঁ-ধরারা যখন ইউরোপ-আমেরিকার সমকক্ষ সঙ্গী হওয়ার চেষ্টায় ব্রতী, তখন কোটি কোটি নিরন্ন দরিদ্র মানুষ যারা খাদ্য-বস্ত্র-বাসস্থানের জন্য সরকারী ব্যয় বৃদ্ধি করার ব্যাপারে উদগ্রীব হয়ে এলিট-শ্রেণির উপরে উঠার প্রক্রিয়ায় অন্তরায় হতে চায় – তখন এই নিরন্ন-হাঘরেদের পদদলিত করেই তাদের বাসনাকে কায়েম করা যায় এবং এরজন্যই উন্নত প্রযুক্তির দোহাই দিয়ে সাধারণ মানুষকে ভিটেমাটি ছাড়া করা হচ্ছে – তা সে নিউক্লিয়ার এনার্জির জন্যই হোক বা বিগড্যাম। প্রযুক্তির এই চর্চার সাথে সৃজনশীলতার বিশেষ কোন সম্পর্ক নেই –এটা একধরণের স্কিলের চর্চা। অথচ আমজনতার সমস্যা সমাধানের সাথে যদি প্রযুক্তি চর্চার বিষয়কে জুড়ে দেওয়া যেত তাহলে প্রযুক্তিচর্চার সাথে যুক্ত সবাই সৃজনশীল গবেষণার এক বিশাল কর্মযজ্ঞের সাথে সামিল হয়ে দেশ গঠনে ব্রতী হওয়ার সুযোগ পেত। এই দৃষ্টিভঙ্গীতে যাতে বৌদ্ধিক সমাজ প্রভাবিত না হয় – সেটাই               মঙ্গল-অভিযানকে ফলাও করে প্রচার করার দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ অন্তর্নিহিত কারণ। অথচ আধুনিক ইউরোপ যে এই পথ পরিক্রমা করেই এসেছে সে ব্যাপারে আমাদের এলিটরা অবগত হলেও ন্যস্তস্বার্থে ও ওলিগোপলিস্টদের (একচেটিয়া কর্পোরেটদের গ্রুপ) সেবাদাসত্বের দাসখতে সই করে জ্ঞানচর্চার এক ভ্রান্ত পথের দিকে দেশ-জাতিকে পরিচালিত করছেন।  উন্নত প্রযুক্তির ঢোল বাজিয়ে কর্পোরেট প্রভুদের নির্দেশে ২০০৫ সালে বিদ্যুৎ ক্ষেত্র সংস্কারের আইন পাশ করা হল। দীর্ঘ সাত বছর পর উন্নত প্রযুক্তির দেশজোড়া নমুনা দেখল দেশবাসী। বিদ্যুত ঘাটতিজনিত যন্ত্রণার স্থানিক অনুভূতিকে দীর্ঘ তথাকথিত উন্নত প্রযুক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে বিশাল পরিমাণ মৃত-পুঁজির সৃষ্টি করে এবং সাধারণ মানুষের উপর বিশাল বিদেশি ঋণের বোঝা চাপিয়ে দিয়ে জাতীয় অনুভূতিতে রূপান্তরিত করা হয়েছে। বিশ্বায়িত প্রযুক্তির বাজারে অনুভূতির বিশ্বায়নের দিকে যাত্রা। বিশ্বায়নের এই যাত্রার বিপরীতে একটা স্থানিক যাত্রার হিসাব আমরা এবার করে দেখতে পারি। কারণ যখন প্রযুক্তি শিক্ষার নামে মঙ্গল গ্রহে যান পাঠাচ্ছে আমাদের সরকার, তখন বরাকের মানুষরা নিজের অঞ্চলের বাইরে বেরোতে নিজের প্রাণটাকেই অজানা ভিন-গ্রহে পাঠিয়ে দিচ্ছেন।
                 বিজ্ঞান ও কারিগরি বিদ্যার বিভিন্ন শাখায় আমাদের এঅঞ্চলে কৃতবিদ্যদের সংখ্যা নেহাত কম নয়। কিন্তু কৃষি-শিল্প-নাগরিক সুযোগ সুবিধা-পরিবেশ ইত্যাদি সংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যার সমাধানকল্পে কোন গুরুত্বপূর্ণ কাজ ও তার বাস্তবায়ন আমাদের খুব একটা চোখে পড়ে না। ভাষা-সংস্কৃতি-উৎপাদন পদ্ধতি-জলবায়ু ইত্যাদি সবদিক থেকে আমাদের মত বৈচিত্রময় দেশে যে কোন সমস্যার একটা স্থানিক মাত্রা থাকে। কিন্তু বাস্তব পৃষ্ঠভূমি থেকে সমস্যা সমাধানের বাস্তব কোন পদ্ধতি আবিষ্কারের কষ্টসাধ্য ও সৃজনশীল পথ পরিহার করে আমরা অনুকরণের মাধ্যমে দক্ষ বিশেষজ্ঞ তকমা পেতে বেশি আগ্রহী। জ্ঞানার্জনকে বাজারের চাহিদার দ্বারা পরিচালিত দক্ষতার (Skill) স্তরে নামিয়ে আনার পরও আমাদের সমাজ নামী উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের অত্যন্ত সম্ভ্রমের সাথে দেখে, কারণ সমাজ ধরে নেয় যে এই প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের বিদ্যা-বুদ্ধি-জ্ঞান এতো বিশাল যে তার থেকে সমাজ উপকৃত হবে। কিন্তু বাস্তবে এই  দক্ষ লোকদের সংখ্যাবৃদ্ধির সাথে তাল মিলিয়ে আর্থ-সামাজিক সমস্যা ও সামাজিক অবনতির মাত্রা কেন উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে? এর উত্তর আমাদের সার্বিক আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থার সাথে সাথে সম্ভবত শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যেও নিহিত রয়েছে। সম্প্রতি এক টিভি-চ্যানেলের বিতর্ক প্রোগ্রামে একজন অবসরপ্রাপ্ত প্রবীণ চিকিৎসক মন্তব্য করেন যে আমাদের শিক্ষা পদ্ধতি ক্রমাগত অনুভূমিক (Horizontal) থেকে উলম্ব (Vertical) হয়ে যাচ্ছে এবং ফলে সামগ্রিক জ্ঞানের মাধ্যমে সৃজনীক্ষমতা বিকাশের বদলে এটা একধরনের ট্রেনিং-এ রূপান্তরিত হচ্ছে – সবকিছুই এখন উন্নত  থেকে উন্নততর ওয়ার্কশপ যেখানে পুঁজির সেবা করার জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষ লোক তৈরি করা হচ্ছে এবং বিশ্লেষণী ক্ষমতা বিকাশের বদলে শিক্ষার মানে হয়ে যাচ্ছে পুনঃপুনঃ পাঠের মাধ্যমে একধরনের মুখস্ত বিদ্যা (Learning by rote)। এরমধ্যেই ব্যতিক্রমী কাজ যে হচ্ছে না তা নয় –  কিন্তু তা সাধারণত মিডিয়াকে, বাজারের নিয়মকে ও নীতি নির্ধারণকে প্রভাবিত করতে পারে না। এভাবে বেশিদিন চলতে পারে না – কারণ গোটা সমাজ গুটি গুটি পায়ে অতি সত্বর এক ভয়ঙ্কর পরিণতির দিকে পা বাড়াচ্ছে। যদি আমরা মনে করি যে সব বিজ্ঞানই শেষ বিচারে মানব সভ্যতার জন্যই, যে সভ্যতা আজ অস্তিত্ব সংকটের    সামনে দাঁড়িয়ে গেছে – তাহলে আমাদেরকে বিকল্প পথ অনুসন্ধান করতেই হবে।
               অত্যন্ত ছোট মাপের কাজের কথা এখানে উল্লেখ করা যায়। সারা পৃথিবী জল সংকটে ভুগছে – জল নিয়ে প্রায় যুদ্ধ বাধার উপক্রম। দক্ষিন ভারতের কোন এক শহরের পুরসভা ছাদের জল সংগ্রহ করা বাধ্যতামূলক করে দিয়ে উপকৃত হয়েছে। চেরাপুঞ্জিতে যখন জল সংকট, তখন থর মরুভূমির এক বসতি অঞ্চল কোন ব্যয়বহুল পদ্ধতি অবলম্বন না করেই জল সমস্যার সমাধান করে নিয়েছে। আমাদের শিলচরের কোন বিশেষজ্ঞ ছাদের জল নিয়ে একটা হিসাব করতেই পারেন এবং তাতে যদি দেখা যায় আমাদের উপকৃত হওয়ার সম্ভাবনা আছে তাহলে পুরসভা ও উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ তা বাধ্যতামূলক করে দিতে পারে। জল নিষ্কাশনী সমস্যার  সমাধানেও কোন উদ্ভাবনী প্রয়াস নজরে পড়ে না – জল নিষ্কাশন ও জল সংরক্ষণকে সম্পৃক্ত করে ভাবলে কোন সমাধানসূত্র বেরতেও পারে। বরাকের কৃষির অবস্থা খুবই শোচনীয় এবং তারজন্য বিভিন্ন ফ্যাক্টর দায়ি। কিন্তু বরাকের কৃষকদের বাস্তব অভিজ্ঞতাকে সার-সংকলিত করে কোন বিকল্প পন্থা-পদ্ধতি আবিষ্কারের চেষ্টা কেউ করছেন বলে শোনা যায়নি। মাত্র ১০০/১১০ মেগাওয়াট চাহিদা থাকা একটা অঞ্চলে বিদ্যুৎ সমস্যা সমাধানের জন্য কোন এক বৃহৎ কর্মকাণ্ডের প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। সামাজিকভাবে উপযোগী-স্থায়ী ও সস্তায় এই নগণ্য পরিমাণ  বিদ্যুৎ উৎপাদন ও যোগানের বন্দোবস্ত এখানেই করা যায় বলে আমাদের বিশ্বাস। এই বিশ্বাসকে বিজ্ঞানসম্মতভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে আমাদের এঅঞ্চলের কারিগরি প্রতিষ্ঠানগুলো কোন কাজ করছে কি? মনে হয় – না। অথচ প্রতিবারই সমস্যা সমাধানের নতুন নতুন মন্ত্র আমাদের শোনানো হয় – এবারের নতুন মন্ত্র হচ্ছে পালাটনা, ভাবখানা এরকম যে এই বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র বরাকের চাহিদা মেটানোর জন্যই তৈরি হচ্ছে, আর বরাক ড্যাম – সে তো আরেক মিথ্যার বেসাতি।  সব পরিকল্পনা তৈরি করা হয় বিদেশি ঋণ ও প্রযুক্তির উপর নির্ভর করে, তাতে সম্পদের বহির্গমণ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি ঘটে প্রকৃত অর্থনীতি পঙ্গু হলেও নীতি নির্ধারকদের কোন মাথাব্যথা নেই। 
              এখন আমাদেরকে প্রতিনিয়ত ভূমিকম্পের বিপদ সম্পর্কে সতর্ক করা হচ্ছে। ব্যয়বহুল সব পদ্ধতির কথা আমাদেরকে শোনানো হচ্ছে যা আমাদের মত দেশে বাস্তবে গণহারে কার্যকরী হওয়া সম্ভব নয়। ভূমিকম্প রোধ ও ভূমিকম্প থেকে বাঁচানোর কার্যকরী কোন পদ্ধতি যদি বাস্তবায়িত না হয়, তাহলে এই ব্যয়বহুল মচ্ছবের কী অর্থ? সব বিষয়ের উপর আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রচুর অর্থ ব্যয়ে ওয়ার্কশপ হয়। ভিন্ন সামাজিক-রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক ইতিহাসের প্রেক্ষিতে অত্যন্ত কার্যকরী ও সৃজনশীল আবিষ্কারের ট্যাকনিক্যাল তথ্য এই ওয়ার্কশপগুলোতে দেওয়া হয়। প্রথমত এই বিষয়গুলি ট্রেনিরা ট্রেনিং-লিটার্যা চার থেকে নিজেরাই আয়ত্ব করে নিতে পারে, দ্বিতীয়ত আমাদের বাস্তব পরিস্থিতিতে এগুলোর বিশেষ কোন বাস্তব কার্যকারিতা নেই। সুতরাং এই ওয়ার্কশপগুলো থেকে প্রাপ্ত তথ্যের বোঝাগুলো মাথায় বয়ে নিয়ে বেড়ানো কি অর্থহীন হয়ে পড়ে না?

স্বাভিমান:SWABHIMAN Headline Animator

^ Back to Top-উপরে ফিরে আসুন