‘আম-আদমি’ – যুক্তি তর্কের প্রারম্ভ বিন্দু

Posted by স্বাভিমান

‘আম-আদমি’ – যুক্তি তর্কের প্রারম্ভ বিন্দু
অরূপ বৈশ্য
(একটি সংক্ষিপ্ত নোট)
লেখাটি দৈনিক যুগশঙ্খ, ২৮ জানুয়ারী, ২০১৩ সংখ্যায় বেরিয়েছে

আম-আদমির সংজ্ঞা
আম-আদমি – শব্দ দ্বয়ের মধ্যে একটা মাটির টান রয়েছে। অতি-ব্যবহারে ক্লিশে না হওয়া পর্যন্ত একে আম-নাগরিকের দৈনন্দিন পরিভাষায় যুক্ত করার কৃতিত্ব নিশ্চয়ই শিক্ষিত মধ্যশ্রেণির একাংশের। কিন্তু যতক্ষণ পর্যন্ত এটি সংজ্ঞাবিহীন, ততক্ষণ পর্যন্ত এসম্পর্কে ধারণা সংজ্ঞাহীন। চিনদেশে ১৯৪৯-এর গণবিপ্লবে পিপল অর্থে গণ শব্দটির একটা সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল। সেই সংজ্ঞা অনুসারে শ্রমিক – কৃষক ঐক্যকে মূল খুঁটি হিসেবে ধরে যাদের বাণিজ্যিক ও উৎপাদনের মালিকানার অস্তিত্বকে সুনিশ্চিত করার একমাত্র উপায় জাতীয় ও দেশের স্বার্থকে সুরক্ষিত করা তাদেরকে মিত্র শক্তি হিসেবে রাখা হয়েছিল, এর বাইরে বিভিন্ন ভাষাভাষির বৈচিত্র্যকে জনগোষ্ঠীর সাধারণ ধারণার আওতায় আনা হয়েছিল। ভারতবর্ষের মত বৈচিত্র্যময় ও জাতবর্ণে বিভাজিত সমাজে এবং প্রাকৃতিক সম্পদের অবাধ ও একচেটিয়া লুন্ঠনের যুগে প্রাকৃতিক ব্যবহারিক মূল্যকে পুঁজির সামাজিক ব্যবহারিক মূল্যে বলপূর্বক রূপান্তরের মাধ্যমে পরিবেশ-বিপর্যয়ের ফলে আম-আদমির পৃথক পৃথক ধারণাকে একটি সুসমঞ্জস্য সাধারণ ধারণা-কাঠামোয় সংযোজিত করা জরুরি। তা করা যায় যদি শ্রমিক, গরিব-ক্ষুদ্র-মাঝারি কৃষকদের জাতি-বর্ণগত পরিচিতি এবং পরিবেশ-বিপর্যয়ে সরাসরি জানমালে ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীগত পরিচিতির একটা সুসমঞ্জস্য পরিসংখ্যান বয়ান করা যায়। কিন্তু আম-আদমির এই ধারণায় প্রধান ও নেতৃত্বদায়ী ভূমিকায় রাখা হয় শ্রমিক শ্রেণিকে যার স্বার্থ শেষ বিচারে সমস্ত জনগণের স্বার্থের সাথে মিলে যায়। ‘শ্রমিকদেরই নেতৃত্ব’ এই কথার মানে এই নয় যে তার কোন নায়ক ও তাঁর পার্ষদ থাকবে না। নিশ্চয়ই থাকবে, কিন্তু কেমন হবে সে নায়ক? জন লেননের গান “A working class hero is something to beতা বলে দেয়। এজন্যই সম্ভবত লেননের মতো সংবেদনশীল গায়ক নিহত হন ঘাতকের বুলেটের আঘাতে। কিন্তু সংজ্ঞাবিহীন আম-আদমির কোন ফাঁক-ফোঁকর দিয়ে কোটিপতি আরবপতিদের স্বার্থের তল্পিবাহকদের অনুপ্রবেশ ঘটে আম-আদমি সেজে হিরো হয়ে উঠবে তা বলা বেজায় দুষ্কর। তবে দল-সংগঠন ও আম-আদমির মধ্যে সম্পর্ক কী হবে তার একটা অভিনব প্রয়োগ আমরা এবার দিল্লির রামলিলা ময়দান থেকে যাত্রা শুরু করে নির্বাচনের ময়দান পর্যন্ত প্রত্যক্ষ করেছি। তাত্বিক কনসেপ্টের দিক থেকে এই প্রক্রিয়া নতুন নয়, বরঞ্চ ফরাসি বিপ্লব ও গ্রামসি তত্বে বিকশিত ধারণা থেকে এ প্রক্রিয়া এখনো বহু যোজন দূরে। দিল্লির এই প্রয়োগ কী রূপ ধারণ করে এনিয়ে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করা যেতেই পারে। কিন্তু এই গোটা প্রকরণে সিভিল সোসাইটি বা নাগরিক সমাজের যে কথন আমাদের সামনে হাজির করা হচ্ছে, তা পশ্চিমের উন্নত দেশের ইতিহাসে আধুনিক সমাজ গঠনের সময়কার ধারণায় প্রভাবান্বিত। সিভিল সোসাইটির কনসেপ্টকে আমাদের মত পিছিয়ে পড়া পর-নির্ভরশীল দেশের প্রেক্ষাপটে পুনর্নির্মাণ করা জরুরি বলেই মনে হয়।

সুশীল সমাজ ও আম-আদমির আন্তঃসম্পর্ক
ভারতবর্ষে সিভিল সোসাইটি অ্যাক্টিভিজম বা নাগরিক সমাজের তৎপরতা নিয়ে কিছু কিছু বুদ্ধিজীবী আমাদের যা বোঝাতে চান, তার এক বিপরীত বাস্তব নমুনা এখানে তুলে ধরছি। সম্প্রতি মুম্বাইর পস এলাকা ওরলির পেপসি কোলা চত্বরে অবৈধভাবে নির্মিত বহুতল দালানের ফ্ল্যাট বাড়িগুলো ভেঙে গুড়িয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তকে সাময়িকভাবে রদ করে সুপ্রিম কোর্ট এক রায় দেয়। এই দালান ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আইনি ও আইন-বহির্ভুত প্রতিবাদ মিডিয়ার মাধ্যমে গোটা দেশের নজর কাড়ে এবং মুম্বাই মিউনিসিপাল কর্পোরেশন ও প্রশাসন এই ফ্ল্যাট বাড়ির আবাসিক ও তাদের সহমর্মী বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের প্রতি অত্যন্ত মানবিক আচরণ করে। বিভিন্ন মহল থেকে এই আবাসিকরা যে সহমর্মিতা ও সহযোগিতা পাচ্ছেন তাতে এটা আশা করা যায় তারা তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেই ছাড়বেন। এই আবাসিকদের কী পরিচয়? তারা মধ্যবিত্ত বা উচ্চ-মধ্যবিত্ত যাদের মাসিক আয় লাখের হিসেবে করতে হয় এবং ভারতবর্ষের মত দেশে এই শিক্ষিত মধ্যবিত্তরা এখন এতটা শক্তিশালী যে তারা যে কোন সরকারের মতামত ও সিদ্ধান্তকে প্রভাবান্বিত করতে পারেন। এদেরকে রুষ্ট না করে এক নতুন ব্যবস্থা কায়েম করার কথা এখন শাসক শ্রেণিকেও ভাবতে হচ্ছে এবং তাই সবাই দুর্নীতির বিরুদ্ধে মোর্চা খুলতে ব্যস্ত, যদিও কীভাবে নিজেদের কৃতকর্মের দাগ মিটিয়ে এই মোর্চা সামলানো যায় সেব্যাপারে প্রতিষ্ঠিত দুর্নীতিবাজরা পথ খোঁজে পাচ্ছে না। কিন্তু মুম্বাইর এই আবাসিক এবং তাদের ন্যায্য স্বার্থকে প্রচারের আলোয় নিয়ে আসতে সাহায্যকারী মিডিয়ার অর্থবহ মৌনতা আমাদের সামনে তখনই এক বৈপরীত্যকে সামনে নিয়ে আসে, যখন লাখ লাখ বস্তিবাসী উচ্ছেদ হন ও পুনর্বাসনের দাবিতে আন্দোলন করেন। অথচ তাদের রক্ত জল করা শ্রমের বিনিময়েই মুম্বাই নগরি গড়ে উঠে।  শুধুমাত্র ২০০৪ সালেই মুম্বাই নগরির ৭০ হাজার ঝুপরির উপর দিয়ে বুলডোজার চলেছে, প্রায় ৩ লাখ লোক গৃহহীন হয়েছেন, শীত ও রোগের প্রকোপে বহু শিশু মৃত্যুবরণ করেছে। এধরনের অভিযান প্রায়শই চলতে থাকে। কিন্তু ফ্ল্যাট বাড়ির আবাসিকদের মত নাগরিক সমাজ ও বিভিন্ন নাগরিক সংগঠন নীরব থাকায় এদের দুর্দশা মিডিয়ার ফোকাসেরও বাইরে থাকে। তাদের চোখ এদৃশ্য দেখতে অস্বীকার করে, কারণ মুম্বাইকে সাংঘাই বানানোর স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে তাদের কাছে এ এক প্রয়োজনীয় অন্যায় হিসেবে বিবেচিত হয়। এই বিবেচনা এমনই নিষ্ঠুর যে মুম্বাই নগরিকে সাংঘাই বানানোর দায়িত্বে থাকা আমেরিকান সাব-প্রাইম সংকটের খলনায়ক আমেরিকান বহুজাতিক কোম্পানী ‘গোল্ডম্যান সাচ’ আমাদের সস্তা শ্রম ও সম্পদ শোষণ করে অতি-মুনাফা কামিয়ে নিলেও তাদের তথাকথিত দেশাত্ববোধে আঁচড় লাগে না। একটি হিসাবে দেখা গেছে, ভারতবর্ষে সস্তা শ্রম ও প্রাকৃতিক সম্পদের জন্য নির্মাণ-ব্যয় লণ্ডনের চেয়ে ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশ কম। গোল্ডম্যান সাচ, যে কোম্পানী মুম্বাই ও ব্যাঙালুরের হাউসিং-কনস্ট্রাকশনের সাথে যুক্ত, ১.৯ বিলিয়ন ডলার নির্মাণ-ব্যয় কমানোর ব্যবস্থা নিয়ে ২০১২-এর শুধুমাত্র তৃতীয় কোয়ার্টারেই ১.৫ বিলিয়ন ডলার মুনাফা করেছে। এই ব্যয় কমানোর প্রক্রিয়ায় নিশ্চিতভাবে শ্রম ও প্রাকৃতিক সম্পদের লুণ্ঠনের মাধ্যমে স্টিমরোলার চলেছে শ্রমজীবী মানুষের উপর। সুতরাং মধবিত্ত মনোজগতের এই ফ্রেমওয়ার্ক থেকে না বেরিয়ে নাগরিক সমাজের সক্রিয়তার মাধ্যমে আমাদের ইপ্সিত সুশীল সমাজের কল্পনা অলীক থেকে যায়। তাই সিভিল সোসাইটির সংজ্ঞায় আমাদের মত দেশে এক ভিন্নতর মাত্রা সংযোজিত করা জরুরি যাতে সুশীল সমাজের সক্রিয়তার প্রগতিশীল ভূমিকা নির্ধারণ করা যায় এবং এই সুশীল সমাজের সাথে আম-আদমির আন্তঃসম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করা যায়।
            
আম-আদমির চাহিদা ও পরষ্পর বিপরীত মডেল
আম-আদমি চায় রুটি-রুজি-উন্নয়ন। কিন্তু এরজন্য অর্থ কোত্থেকে আসবে? এনিয়ে দুটি মত রয়েছে। একদলের মতে আয় বৃদ্ধি হলে স্বাভাবিকভাবেই ব্যয় বৃদ্ধি করা যাবে এবং তার সুফল চুইয়ে চুইয়ে নিচের তলায় আম আদমির কাছে যাবে। এই মতের প্রবক্তাদের কাছে আয়-ব্যয়ের পন্থা-পদ্ধতি নিয়ে রাষ্ট্র বা জনগণের মাথা না ঘামালেও চলবে – বাজার তার নিজস্ব নিয়মে এই কাজটি করে দেবে। বাজারের মাথা হয়ে যে দেশি-বিদেশি কর্পোরেট দুনিয়া বসে আছে তাদের আয় বৃদ্ধি হলেই আম-আদমির জন্য প্রয়োজনীয় বাকী কাজ স্বাভাবিক নিয়মেই হয়ে যাবে, রাষ্ট্র কেন এব্যাপারে মাথা ঘামাবে? সুতরাং রাষ্ট্রের দায়িত্ত্ব আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করা ও দুর্নীতি দমন করা। কিন্তু বাস্তব অন্য কথা বলতে শুরু করে দিয়েছে। কর্পোরেট দুনিয়ার বড় বড় মালিক ও তাদের রাজনৈতিক-সামাজিক ও বৌদ্ধিক সাগরেদদের আয় বৃদ্ধির সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে অসাম্য ও বৈষম্য। দারিদ্র্য, বুভুক্ষা, অনাহার, অশিক্ষা, বেকারত্ব বৃদ্ধি তাদের আয় বৃদ্ধির সাথে যেন প্রতিযোগিতায় নেমেছে। এই বাস্তব বাজারের নিয়মের প্রবক্তাদের বাধ্য করেছে আরেকটি দাওয়াই আবিষ্কারে। সেই দাওয়াইটির গালভরা নাম হলো ‘কর্পোরেট সামাজিক দায়িত্ব’ (Corporate Social Responsibility)। ব্যক্তিমালিকানাধীন কোম্পানী তো মুনাফা করার জন্যই নেমেছে, আর শ্রমিকদের স্বার্থ দেখে তো আর মুনাফা হয় না। কিন্তু বাজারে তো চাহিদাও তৈরি করতে হয়। তাই এই প্রবক্তারা জনগণের কথা, আম-আমদির কথা ভাবেন – তাই তাঁরা কোম্পানীগুলোর দায়িত্বের কথাও স্মরণ করিয়ে দেন। অর্থাৎ একচেটিয়া কোম্পানীগুলো শ্রম-শোষণ করে যত খুশি মুনাফা করুক – কিন্তু সামাজিক কাজে কিছু দান-দক্ষিণাও করুক। সরাসরি সামাজিক কাজ করে ভূপালের গণ-হত্যাকারী আমেরিকান ডাও-ক্যামিকেলের মত কোম্পানীদের ভাবমূর্তিতেও কিছু হোয়াইট-ওয়াশের কাজ করা যায়, তাদের দান-দক্ষিণার মধুভাণ্ডের অর্থপ্রাপক এনজিও ও বুদ্ধিজীবীরা তাদের হয়ে মিডিয়া দুনিয়াকে আকৃষ্ট করার মত স্মার্ট ও তুখোর ভাষণ দিয়ে বেড়াতে পারেন। লোক ঠকিয়ে ব্যবসা করে দেবালয়ের ভিখারিদের থালায় পয়সা ছিটিয়ে রাগ ভৈরবির সুর সৃষ্টির প্রয়াস করার মতই ব্যাপার – প্রতিটি থালায় ট্যুং-টাং আওয়াজ উঠলেই পাশের দর্শকরা বলে উঠে – আহা দেখছ না কি উদার দিল!
অন্যদিকে দ্বিতীয় প্রবক্তারা বলছেন – অর্থের সংকুলান করতে হলে রাষ্ট্রের উদ্যোগে একটি জাতীয় শিল্পনীতি থাকতে হবে, সরকারি উদ্যোগে কর্মসংস্থান করতে হবে যাতে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা ও চাহিদা বাড়ে। ভ্যানেজুয়েলার সাভেজ যেমনটি করেছিলেন ঠিক তেমনি আয়ের সমস্ত উৎসকে সরকারিকরণ করে তার থেকে আয়কে জনগণের জীবনধারণের মানন্নোয়নে লাগাতে হবে। একথা শুনে প্রথম ধারণার প্রবক্তারা অপত্তি তোলেন এই বলে যে সরকারি খণ্ড মানেই তো দুর্নীতি, অদক্ষ পরিচালনা ও বকলমে বৃহৎ প্রভাবশালী ব্যবসায়িক চক্রকে মদত দেওয়া। এই অভিযোগগুলি ফেলনা নয়। কিন্তু তারা রোগের এই লক্ষণগুলি দূর করতে আগ্রহী নন, বরঞ্চ এই অজুহাতে গামলার স্নানের জলের সাথে বাচ্চাকেও ছুড়ে ফেলে দিতে চান।

দুর্নীতির প্রতিষেধক ও আম-আদমির রাজনীতি

রোগের এই লক্ষণগুলিকে দূর করার একমাত্র মহৌষধ হলো রাষ্ট্রের সবকটিকে অঙ্গকে জনগণের নিয়ন্ত্রণে আনার কাঠামোগত ব্যবস্থা করা। এই নিয়ন্ত্রণে আনার অনেকগুলি পন্থার মধ্যে একটি নিশ্চিতভাবে লোকপাল আইন, তবে এটি সর্বরোগের প্রতিষেধক নয় - তার সাথে আরও অনেক কাঠামোগত ব্যবস্থা কায়েম করতে হবে। কিন্তু আমাদের উত্থাপন করতে হবে তার চাইতেও মৌলিক প্রশ্ন। এশিয়ান ডেভেলাপমেন্ট ব্যাঙ্কের লোনের সর্ত হিসেবে জারি হয়েছে বিদ্যুৎ আইন ২০০৫। এখন ব্যক্তিগত খণ্ডকে অডিটের অধীনে এনে দুর্নীতিমুক্ত করে বিদ্যুৎ দর নির্ধারণের ক্ষেত্রে হয়ত খানিকটা প্রভাব ফেলা যায়। কিন্তু প্রশ্ন তো তোলাই উচিত যে এভাবে বিদ্যুৎ দরের ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ কী করে কায়েম করা সম্ভব? আম আদমির মুখে দুবেলা খাওয়ার তুলে দেওয়ার জন্য সর্বজনীন রেশনিং ব্যবস্থা জরুরি। এই লক্ষ্যে সামান্য অগ্রসর হয়ে জারি করা হয়েছে খাদ্য সুরক্ষা আইন। কিন্তু আমাদের সরকার আমাদের দেশের জনগণের জন্য কতটুকু ভর্তুকি দিতে পারবে তা ঠিক হয় বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় (WTO) যার তেত্রিশটি সদস্য-রাষ্ট্রের মধ্যে ভারতবর্ষও একটি। এক্ষেত্রে এই সংস্থার নিয়ম ও আইন মেনে চলতে ভারত সরকার বাধ্য। এই নিয়ম ও আইনগুলি পশ্চিমী দেশের অনুকূলে ও নিয়ন্ত্রণে এবং পশ্চিমের দেশগুলি চায় না ভারতবর্ষের মত দেশগুলি কৃষিক্ষেত্রে কোনধরনের ভর্তুকি দিক, যদিও তারা নিজেদের দেশে কৃষিক্ষেত্রে বিশাল অঙ্কের ভর্তুকি বজায় রেখে তাদের অনুকূলে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নিয়ম ও আইনকে তৈরি করে। তাই আমাদের দেশের মানুষের মুখে অন্ন তুলে দেওয়ার জন্য এই প্রশ্নটি উত্থাপন করা জরুরি যে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নিয়ম ও আইন ভারতবর্ষের মত দেশের অনুকূলে পরিবর্তন না করে এদেশের মানুষের খাদ্য সুরক্ষা সুনিশ্চিত করা কি সম্ভব? এধরনের প্রশ্ন এদেশের সাধারণ মানুষ আজ না হোক কাল উত্থাপন করবে এবং এই প্রশ্নগুলি যখন উত্থাপন হবে তখনই রাজনীতি হয়ে উঠবে আম-আদমির রাজনীতি। 

0 comments:

স্বাভিমান:SWABHIMAN Headline Animator

^ Back to Top-উপরে ফিরে আসুন