ফোরাম ফর সোশ্যাল হারমনির বুলেটিন – ৩ (খসড়া)
Posted by Labels: Assam, Assam politics, barak valley, people's initiative, আসাম, ফ্যাসিবাদ, বরাক উপত্যকা, সংখ্যালঘু
মাহমদপুর-জয়কৃষ্ণপুর জিপিতে ফোরাম ফর সোশ্যাল হারমনি’র সমীক্ষক দলের
বৈঠক
একটি অসম্পূর্ণ প্রতিবেদন
একটি অসম্পূর্ণ প্রতিবেদন
“ এর আগে করিমগঞ্জ জেলাতে উমর পুরে ভ্রমণ করে ছিল ফোরামের টীম। সেখানকার প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে বদরপুর আগরতলা নির্মীয়নাম বিজি রেল লাইনে ছটি "রাব' (RUB) তৈরির দাবি জানিয়ে একটি আবেদনে গণ স্বাক্ষর সংগ্রহ করছে ফোরাম। এখানে ক্লিক করে সেই আবেদনে সই করুন। বহু গ্রামের মানুষের বেদনা আর সংগ্রামের শরিক হোন ''
৯ জানুয়ারি, ২০১৬ বেলা ৩ টায় ফোরাম ফর সোশ্যাল হারমনি’র সমীক্ষক দল হাইলাকান্দি জেলার লালা শহর থেকে ৫/৬ কিঃমিঃ দূরে মাহমদপুর-জয়কৃষ্ণপুর জিপি’তে পৌঁছয়, লালা ও কাটলিছড়ার মধ্যবর্তী অঞ্চলে এই জিপি অবস্থিত। দুর্ভাগ্যক্রমে
আবহাওয়া ছিল প্রতিকূল। এই শীতের মরসুমেও মতবিনিময় সভার আগে ও
পরে অঝোরে বৃষ্টি
হয়, এমনকি সেখান থেকে
শিলচরে ফেরার প্রায় ৫০ কিঃমিঃ পথ পাড়ি দিতে শিলাবৃষ্টির তোপে খানিকক্ষণ
নিরাপদ আশ্রয়ে টিমের গাড়ি দাঁড় করিয়ে রাখতে হয়। দু-পাশে চা-বাগান ও
গ্রামগুলিকে রেখে নব্য সেজে ওঠা কুচকুচে কালো পি-ডবলিউ-ডি
রাস্তাকে বৃষ্টির জল ধুয়েমুছে সাফ করে আমাদের মত যাত্রীদেরকে যখন
আবাহন করছিল, আমাদের নাগরিক মনকে যখন করে তুলছিল রোমান্টিক,
ঠিক তখনই হয়ত
রাস্তার পাশে খড়কুটোর ঘরে কোন এক চা-শ্রমিক মা তার কালো শিশুটিকে
ছাদের ফোটা দিয়ে আসা বৃষ্টির জলের ও কিনকিনে ঠাণ্ডার মারণ ছোবল থেকে
বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা করে চলেছে। সে যাই হোক, ভূমিকা বাদ দিয়ে এবার মোদ্দা কথায়
আসা যাক।
তবে সেদিনের আলোচনার বিশদ তথ্য এখানে তুলে না ধরলেও, কিছু সাধারণ তথ্য এখানে তুলে ধরছি। ১৯৭৯-৮০ সালে কাটলিছড়া এলাকায় এক ভয়াবহ দাঙ্গার পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। আব্দুল মালিক লস্কর এই প্রসঙ্গ উত্থাপন করলে কাটলিছড়া এলাকার অধীর নাথ জানান, সে সময় লবণ-কেরোসিনের খুব সংকট দেখা দেয়। সেই লবণ-কেরোসিনের বণ্টনকে কেন্দ্র করে সমবায় সমিতির তৎকালীন চেয়ারম্যান প্রয়াত ইউনিস খান চৌধুরীকে অপমানিত করার মত কোন এক ঘটনা ঘটে। প্রয়াত চৌধুরী ছিলেন সে এলাকার সর্বজনশ্রদ্ধেয় প্রভাবশালী ব্যক্তি। এই ঘটনার প্রতিবাদে ১৯৭৯ সালের সম্ভবত জুন-জুলাই মাসে তাঁর সমর্থনে হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে সাধারণ মানুষের এক ঐক্যবদ্ধ মিছিল বেরোয়। এই সময় জনৈক বিভূতি দেবের বাড়িতে কেউ বা কারা কিছু ইট-পাটকেল ছোড়ে, ইউনুস খান এই ঘটনার প্রতিবাদও করেন। কিন্তু মিছিল যখন কাটলিছড়া বাগান-থানা হয়ে ফিরে গিয়ে কাটাখাল নদী পার হয় তখনই সাম্প্রদায়িক রূপ পরিগ্রহ করে, কেন-কীভাবে তা আরও বিশদভাবে জানা প্রয়োজন। আব্দুল মালিক লস্কর ও অধীর নাথ জানান যে এই দাঙ্গায় ময়না মোক্তারের দুই ছেলে সপু ও তপুকে হত্যা করা হয়। ইউনুস খানের মত ময়না মোক্তারও ছিলেন এই এলাকার মুসলিম জমিদার (আনুমানিক ৭০০/৮০০ বিঘা জমির মালিক) ও প্রভাব প্রতিপত্তিশালী ব্যক্তি এবং সেই সুবাদে তার ছেলেদেরও ছিল এলাকায় দাপট। সপু-তপু দুই ভাইয়ের হত্যা নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে, কারুর মতে তাদেরকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে, আবার পুলিশের গুলিতে তারা নিহত হোন বলে ভিন্ন মতও রয়েছে। তবে সেই ঘটনায় দীননাথপুর চা-বাগানের ৩ জন মুসলিম শ্রমিক পুলিশের গুলিতেই নিহত হয়েছেন বলে জানান অধীর নাথ। এই দাঙ্গার নির্ভরযোগ্য বিশদ তথ্য সংগ্রহ করা এবং দাঙ্গার পেছনে অন্তর্নিহিত আর্থ-সামাজিক কারণসমূহ বিশ্লেষণ করা জরুরি। তবে এই দাঙ্গার পর কাটলিছড়া বাজারে মুসলিম ব্যবসায়ী যারা ব্যবসা করতেন তাদের প্রায় সবাই ধীরে ধীরে সরে আসেন এবং সাহাবাদ ও লালা এলাকায় চলে আসেন। সাহাবাদ বাজার সেই সময়েই গড়ে ওঠে। আব্দুল মালিক লস্কর বলেন যে কাটলিছড়া বাজার মসজিদে আজান দিতে দেওয়া হয় না, হিফজুর রহমান এই তথ্যের সাথে দ্বিমত পোষণ করেন, আবার সালা উদ্দিনের মতে সেখানে মুসলাম না থাকায় সম্ভবত আজান দেওয়া হয় না। যে জিপিতে সভা বসেছিল সেই জিপিতে হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের লোক বাস করলেও সেই দাঙ্গার কোন প্রভাব এই এলাকায় পড়েনি। তার কারণ জানতে চাইলে আব্দুল মালিক লস্কর জানান যে এই এলাকায় সবাই স্থানীয় এবং মুসলিম, এসসি, অবিসি সম্প্রদায়ের লোক। সালা উদ্দিন, রেকিব উদ্দিন, সাজ্জাদ আলি লস্কর বলেন যে এই এলাকায় হিন্দু-মুসলমানে সামাজিক মেলামেশার পরিবেশ ও সম্প্রীতি রয়েছে এবং কোনধরনের সাম্প্রদায়িক ঘটনার নজির নেই, তবে অতীতে টান্টুর মোকামকে কেন্দ্র করেই হোক বা সাধারণভাবে এ অঞ্চলে যৌথ সামাজিক আনন্দ উৎসবের যেসব অনুষ্ঠান ছিল তা এখন আর অবশিষ্ট নেই, দৈনন্দিন মেলামেশা মূলত বাজার ও পারিবারিক অনুষ্ঠানকেন্দ্রীক।
উপরোক্ত তথ্যগুলিকে আরও গভীরে যাচাই করার মাধ্যমে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রস্তুত করার ইচ্ছা নিয়ে ফোরামের সমীক্ষক দল শিলচর ফিরে আসে।
0 comments:
Post a Comment