*উচ্ছেদের
অর্থনীতি ও রাজনীতি এবং রাজনীতির উচ্ছেদ*
আসামে যে সময়ে
উচ্ছেদ অভিযান জোর পেয়েছে, সেই
সময় বিশ্বব্যাপী নিওলিবারেল ফিনান্সিয়্যালিজম পরিত্যাগ করার প্রবণতা দেখা দিয়েছে।
পুঁজিবাদের অতি-উৎপাদনের (over-production)
সংকট, কিংবা
বেকারত্ব বৃদ্ধি ও মজুরি পড়ে গিয়ে ঊনভোগের (Under-consumption) সংকট থেকে বেরিয়ে আসার প্রাথমিক স্বপ্ন ও
স্বপ্নের হ্যাংঅভারের পর্যায় পেরিয়ে গেছে বহু আগেই। বিশ্ব ক্ষমতাকেন্দ্রের
অভ্যন্তরিণ দুর্বলতা এমনভবে প্রকট হয়েছে যে সবাই একে অপরকে কনুই-ঠেলে নিজের
মরদেহের সাড়ে তিন হাত জায়গার মালিকানা নিয়ে নিতে চাইছে।
উদারবাদ থেকে
বেরিয়ে আসার মরিয়া চেষ্টা নতুন সংকটের জন্ম দিচ্ছে। ২০১৯ সালে চিন থেকে ৩০০ বিলিয়ন
ডলার আমদানির উপর ট্রাম্প ১০% ইম্পোর্ট টারিফ লাগিয়েছিলেন। চিন তার মূদ্রা
রেনমিনবি ডলারের তূলনায় অনেক নিচে পড়তে দিয়ে ওয়ার্লড স্টক ও সরকারি বণ্ডের বাজারে
পড়তি আয়ের হাহাকার লাগিয়ে দেয়। এবারও ট্রাম্পের টারিফ কার্ড আশানুরূপ ফল দেয়নি।
লেবার আর্বিট্রেজের নিওলিবারেল পুনর্গঠন অর্থাৎ সস্তা শ্রমের দেশে ফ্যাক্টরি নিয়ে
যাওয়ার পরিস্থিতিকে ঘুরিয়ে আমেরিকাতে ম্যানুফেকচারিং বিনিয়োগ বাড়ানো যাবে কিনা
সেটাও অনিশ্চিত।
তবে বাণিজ্য
পথে সামরিক দাপট ও বিশ্ব রপ্তানী বাণিজ্যে আমেরিকান বাজারের টানে ডলার নির্ভরতায়
আমেরিকান বিশ্ব-দাপট এখনও বজায় থাকলেও, অভ্যন্তরিণ
বাজারে ভোগ্যপণ্যের চাহিদার পতন ওয়ালস্ট্রিট ও মেইনস্ট্রিটের সংঘাতকে তীব্র করেছে,
ডলার বহির্ভূত আঞ্চলিক মূদ্রায় বাণিজ্য বৃদ্ধি
পাচ্ছে, এবং চিনের সামরিক শক্তির অগ্রগতির
সাথে তাল মিলিয়ে রেইনমিনবির উপর নির্ভরতা বাড়ছে।
অন্যদিকে চিনের
বিদেশি বিনিয়োগ মূলত পরিকাঠামোয়, বাণিজ্য
পথ নির্মাণে এবং প্রাকৃতিক সম্পদ-নির্ভর উৎপাদনে। উদাহরণস্বরূপ, আফ্রিকায় সোলার সেল উৎপাদন অত্যন্ত
শোষণমূলক। শোষণমূলক বিশ্ব-পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় মূল্যের চলাচলের একটি হিসাবে দেখা
গেছে যে, বিশ্বশক্তি হিসাবে চিনের অবস্থান এখন
উন্নয়নশীল ও উন্নত দেশের মাঝামাঝি থেকে অনেকটা উপরে। সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বশক্তি
হিসাবে চিনের অগ্রগতি অনেকটাই নির্ভরশীল বহির্দেশীয় বিনিয়োগ থেকে অতিরিক্ত মূল্য
আহরণ করে অভ্যন্তরিণ বাজারে ভোগ্যপণ্যের চাহিদা বৃদ্ধির উপর। অর্থাৎ ক্রয়ক্ষমতা
থাকা এক বিশাল মধ্যবিত্তের চাহিদার বাজার সৃষ্টি, আর তার পরিণতিতে দেখা দেওয়া তীব্র অসাম্যের ভার পরনির্ভরশীল দেশের
শ্রমজীবীদের উপর চাপিয়ে দেওয়া। চিনের একদলীয় শাসনের জন্য একাজটি করা সহজ। আর
প্রতিযোগিতা ও অরগ্যানিক কম্পোজিশন অব ক্যাপিটেলের নিয়ম অনুযায়ী পুঁজির ভৌগোলিক
সম্প্রসারণের মৌলিক বৈশিষ্ট্যকে মেনে নিলে পুঁজিবাদী অর্থনীতির সাম্রাজ্যবাদী
অগ্রগতিই ভবিতব্য। কিন্তু নয়া-উপনিবেশগুলিতে বিদ্রোহ এবং বিশাল মধ্যবিত্তের
চাহিদার বাজার তৈরির প্রচেষ্টায় ভয়ানক পরিবেশ বিপর্যয় -- বিশ্ব পুঁজিবাদী সংকটকে
আরও গভীর করবে।
দেশে দেশে
সস্তাশ্রমের ভিত্তিতে নয়াউদারবাদী উৎপাদনী পুনর্গঠনের মাধ্যমে উন্নয়শীল দেশে যে
বিনিয়োগ ও ঋণের সুযোগ তৈরি হয়েছিল তার প্রধান অনুসঙ্গ ছিল "বিস্থাপনের
মাধ্যমে সঞ্চয়ন"। অর্থাৎ একইসাথে সস্তা প্রাকৃতিক সম্পদ ও সস্তাশ্রমের যোগান
সুনিশ্চিত করা -- উচ্ছেদ জমি
থেকে, উচ্ছেদ সম্পত্তি থেকে, উচ্ছেদ স্থায়ী কর্মসংস্থান থেকে এবং তার অনুসঙ্গ
হিসাবে উচ্ছেদ লোকায়ত ধর্ম, সংস্কৃতি,
বিশ্বাস থেকে। সেটা ইউরোপে পুঁজিবাদের বিকাশে
এনসার্কেলম্যান্ট মুভমেন্ট থেকে এই কারণে গুণগতভাবে আলাদা যে, সেসময় অতিরিক্ত শ্রমের উৎপাদনী পুনর্বাসন ও
আমেরিকায় সম্প্রসারণের সুযোগ ছিল। কিন্তু
পুঁজিবাদী ব্যবস্থার সংকটের দীর্ঘকালীন টিঁকে থাকা ও গভীর হওয়ার ফলে বিনিয়োগকারী
উন্নত দেশ এবার নিজ দেশে ম্যানুফেকচারিং বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে গুরুত্ত্ব দিচ্ছে। বিশ্ব
ফিনান্সিয়েলাইজেশনে চিনের গভীর সংযুক্তি সত্ত্বেও, চিনের একদলীয় শাসন ও রাষ্ট্রীয় পুঁজিবাদের ফলে দ্রুত অভ্যন্তরিণ
ম্যানুফেকচারিং বিনিয়োগের উপর নিয়ন্ত্রণ কায়েম করার সুবিধা রয়েছে। ফলে চিন
বিনিয়োগের বাজারে দাপট দেখাচ্ছে। সে যা'ই হোক,
অসমের উচ্ছেদ নিয়ে আলোচনায় প্রাসঙ্গিক প্রেক্ষিত
হিসাবে বিশ্ব-ব্যবস্থার সামান্য উল্লেখ প্রয়োজন ছিল।
কিন্তু যদি
বিশ্ব-পুঁজিবাদী সংকট থেকে বেরিয়ে আসা না যায়, তাহলে দমনমূলক নীতি দিয়ে তো আর একটি ব্যবস্থা টিঁকিয়ে রাখা যায় না --
সার্বিক ধ্বংস বা সমাজবাদী উত্থান নিশ্চিত। বিশ্ব-পুঁজিবাদ যখন নতুন পথের সন্ধানে
বিভিন্ন ধরনের প্রেসক্রিপশন নিয়ে তাত্ত্বিক ও প্রায়োগিক বিতর্ক করছে, তখনই মধ্যভারতে মাওয়িস্ট দমনের এবং আসামে
বাংলাদেশি তাড়ানোর অছিলায় এমন বিভৎস উচ্ছেদ অভিযান কেন?
ভারত কী
অর্থনীতিতে নয়াউদারবাদ ও রাজনীতিতে বর্তমান চিনা পথ অনুসরণের জাতীয় বিকাশের
রণনীতির এক ককটেল তৈরি করছে? সমগ্র
দেশজুড়ে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ম্যানুফেকচারিং নেটওয়ার্ক, মাও আমলের ভূমি সংস্কার ও সমবায়িক উৎপাদন, বিশ্বশক্তি হিসাবে চিনের উত্থানের ফলে বাইরে থেকে চিনের অভ্যন্তরে
মূল্যের ট্রান্সফার, একদলীয় শাসন,
রাষ্ট্রীয় আমলাতান্ত্রিক পুঁজিবাদের শক্তিশালী
উপস্থিতি ইত্যাদির যে সুবিধা চিনের রয়েছে, তার কোনটাই ভারতের নেই। উন্নয়শীল
দেশগুলির মধ্যে ভারত খানিকটা এগিয়ে এই কারণেই যে "কারেন্সি একচ্যাঞ্জ
রেট" রিজিম ভেঙে বাজার-নির্ভর করার ক্ষেত্রে ভারত দীর্ঘ সময় নিয়েছে এবং সেটা
সম্ভব হয়েছে ইউপিএ জমানায় সরকারের উপর ভারতীয় বৈচিত্র্য ও গণতন্ত্রের চাপ থাকার
ফলে। এনডিএ জমানায় সেই চাপ ভেঙে ফেলার আয়োজন করা হচ্ছে এবং এক দমনমূলক রাষ্ট্রবাদ
চালুর প্রচেষ্টা চলছে।
সেই রাষ্ট্রবাদ
টিঁকে থাকবে কীসের উপর ভিত্তি করে? সেই
ভিত তৈরির আয়োজন করতে মরিয়া হয়ে লেগেছে বিজেপি সরকার, এক বিকৃত পুঁজিবাদী বিনিয়োগ ও বিকাশকে ত্বরান্বিত করতে চাইছে। দেশীয়
পুঁজিপতিদের বিনিয়োগ সম্ভব অনুন্নত-প্রযুক্তির উৎপাদন-প্রক্রিয়ায়, যেমন মাইনিং, বিদ্যুৎ উৎপাদন, পরিকাঠামো
ইত্যাদি। হাই-টেকনোলজিতে যেতে হলে চিনের ও প্রধানত আমেরিকার উপর নির্ভর করতে হবে।
কিন্তু ৯০ শতাংশের অধিক মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমিয়ে দিয়ে এক ক্ষুদ্র উচ্চ ও
মধ্যবিত্ত উপভোক্তার চাহিদার বাজার দিয়ে এই দেশীয় বিনিয়োগকে লাভজনক বিনিয়োগ হিসাবে
কীভাবে টিঁকিয়ে রাখা সম্ভব, যখন
বিশ্ব রপ্তানী বাণিজ্যে ভাঁটার টান চলছে, যখন
উৎপাদনে কাঁচামালের চাহিদা কমছে, যখন
ভোগ্যপণ্য উৎপাদনে চাহিদার সংকট উৎপাদনী হাতিয়ার উৎপাদনের সেক্টরকেও গ্রাস করে
নিচ্ছে? পুঁজিবাদের নিজস্ব বিকাশের গতিকে
আঁটকে দিয়ে ভারত সরকার তার সমাধানে মিলিটারি উৎপাদনী বিনিয়োগে গুরুত্ত্ব দিচ্ছে,
কিন্তু সেখানেও একই সমস্যা। কর্মসংস্থান তৈরির
বদলে কর্মসংকোচনের মাধ্যমে সস্তা শ্রম ও সম্পদের যোগান নিশ্চিত করে
"রাষ্ট্রবাদ" টিঁকে থাকতে পারে না, বড়জোর সাময়িক কিছু রাজনৈতিক সাফল্য অর্জন করা যেতে পারে, কিন্তু ভারতীয় নির্বাচনী গণতন্ত্রও তাতে পথ আগলে
দাঁড়িয়ে যেতে পারে। অথবা এক অত্যাচারী স্বল্পম্যাদী শাসনব্যবস্থা সার্বিক
বিশৃঙ্খলা কিংবা নতুন সমাজবাদী রাজনীতির জন্ম দিতে পারে।
আসামের মিনারেল
রিসোর্স লুট করা নিয়ে সম্প্রতি সামাজিক পরিসরে আলোচনা চলছে। আসামে তেল, গ্যাস, কয়লার
উপস্থিতির কথা আগে যেটুকু জানা ছিল, সেখানেও
বিনিয়োগ ও উৎপাদন কমেছে বৈ বাড়েনি। মেঘালয়ের কয়লা আধুনিক টার্বাইনের জন্য উপযোগী
কী না এনিয়ে মতান্তর আছে। শালেকাঠি তাপ-বিদ্যুৎ প্রকল্প ব্যক্তিগতকরণেও লাভজনক
হয়নি। সুতরাং মাটির নিচের সম্পদ থাকলেই যে তার উত্তোলনে লাভজনক বিনিয়োগ হবে তার
কোন নিশ্চয়তা নেই, আর ব্যক্তি
পুঁজি অনিশ্চয়তার বাজারে এতো বৃহৎ বিনিয়োগে আসবে না, রাষ্ট্রের লোন নেওয়ার সুযোগও সীমিত। অভ্যন্তরিণ বাজার থেকে লোন নেওয়ার
সুযোগ কম, বিদেশী লোন নিলে পরনির্ভরতা ও লুটপাট
এবং দেশের জনগণকে আরও সংকটের মধ্যে ঠেলে দেবে। তাতে রাষ্ট্রবাদ কী করে টিঁকে থাকবে?
তথাপি বিনিয়োগের জন্য রাষ্ট্রবাদী বিজেপির মরিয়া
প্রয়াসে উচ্ছেদের রাজনীতি ছাড়া বিকল্প নেই। তাদের জন্য ক্যাচ-২২ সিচ্যুয়েশন।
কিন্তু আসামের
উচ্ছেদের অর্থনীতি ও রাজনীতিতে বিজেপি সরকার যে সাময়িক সাফল্য আশা করছে, তার ভিত্তি কী? এর বিরুদ্ধে কী কোন রণনীতি রচিত হতে দেখা যাচ্ছে? স্মরণে রাখবেন, বিজেপির রাষ্ট্রবাদের বিপরীতে কংগ্রেসের বৈচিত্র্যবাদ অর্থনীতির
ক্ষেত্রে বিশেষ কোন পার্থক্য রচনা করছে না। এক অদ্ভূত বিরোধ, যেখানে ঘোষিত রাজনৈতিক মতাদর্শ আলাদা হলেও
অর্থনীতিতে মিল -- এই অন্তর্নিহিত বিরোধের মীমাংসা কীভাবে হবে সেটা এখনই বলা
মুস্কিল। কর্ণাটকে কংগ্রেস সরকার শ্রেণিসংগ্রামের চাপে পিছু হঠছে, বিজেপির মত আগ্রাসী মনোভাব দেখাচ্ছে না, কিন্তু শ্রেণিসংগ্রামের চাপ যেখানে নেই সেখানে
অর্থনীতিতে বিজেপির মত আচরণ করছে।
আসামের সমাজের
গভীরে চূড়ান্ত হতাশার পরিবেশ।মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারের শিক্ষিত সন্তানদের
কোন "কোয়ালিটি জব" কিংবা সামাজিক মর্যাদাসম্পন্ন চাকুরির নিশ্চয়তা নেই,
সার্বিক বেকারত্ব সমাধানের কোন আশার আলো দেখা
যাচ্ছে না। এমতাবস্থায় সমাজের এই অংশটি, এমনকি
গ্রামাঞ্চলেও, যে কোন
প্রলোভনে বিশাল কায়িক শ্রমজীবীদের সুরক্ষার বিষয়কে পদদলিত করতেও দ্বিধাবোধ করছে না,
তাদের কাছে এক ডেসপারেট পরিস্থিতি যেখানে নতুন
সমাজ-গঠনের বিকল্প রাজনীতির স্বপ্নও অনুপস্থিত।
আসাম সরকার যখন
সার্বিকভাবে আম-জনতার উপর উচ্ছেদের আক্রমণ নামিয়ে এনেছে, তখন যে জনগোষ্ঠীর উপর আক্রমণ নামিয়েছে তদের মধ্যেও প্রত্যক্ষ বা
অপ্রত্যক্ষ সামাজিক ভিত বজায় রাখতে সক্ষম হচ্ছে, এমনকি বিজেপির রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের মধ্যেও। কীভাবে?
তার উত্তরে সবাই বলবে, জনগোষ্ঠীগত বিভাজন তৈরির রাজনীতি।
কিন্তু আক্রমণ
যখন সর্বগ্রাসী, তখন জনগোষ্ঠীগত
ঐক্য গড়ে ওঠার বাস্তবতা দেখা দেয় এবং সেই ঐক্য গড়ে ওঠার লক্ষণও দেখা যাচ্ছে,
সেজন্যই বিজেপি সরকার চিন্তিত। কিন্তু তাদের একটা
পরিস্থিতিগত সুবিধাও রয়েছে। গ্রামাঞ্চলে মধ্যশ্রেণির অংশ এই উন্নয়ন মডেলের
বলপ্রয়োগে উচ্ছেদ মানসিকভাবে মানতে না পারলেও, নিজের জনগোষ্ঠীর শ্রমজীবীদের স্বার্থ বলিদান দিয়ে উন্নয়নের কাজের ঠিকা,
সাপ্লাই এবং কর্মসংস্থানের সুযোগের আশায় শাসকের
পক্ষ নিয়ে নিতে পারে, এমনকি আজকের এই
হতাশাজনক ও বিকল্পহীন আর্থিক-রাজনীতির পরিবেশে এরা অর্থ রোজগারের আশায় নিজ
জনগোষ্ঠীর সস্তা-লেবার সাপ্লায়ার হতেও পিছপা না হতে পারে। অর্থাৎ শাসকের কাছে
অত্যন্ত ভঙুর হলেও মধ্যস্তত্ত্বভোগীর এক স্তরতন্ত্রের কাঠমো তৈরির সুযোগ রয়েছে, বিশেষ
করে সেই পরিস্থিতিতে যখন বিকল্প সমাজ-গঠনের রাজনীতির কোন স্বপ্নও অনুপস্থিত। আর
জনগোষ্ঠীগতভাবে বিভাজিত শ্রমজীবীরা যখন তাদের সমাজের একাংশ শ্রেণিকে শাসকের পক্ষ
নিতে দেখে, তখন তারা
আত্মসমর্পণে ও ভাগ্যকে মেনে নিতে বাধ্য হয়।
সুতরাং
উচ্ছেদের অর্থনীতি ও রাজনীতিকে উচ্ছেদ করতে হলে দ্রুত শ্রমজীবীদের ঐক্য গড়ার,
শ্রমজীবীদের সংগঠন গড়ার প্রতি মনোনিবেশ ও ফোকাস
রাখতে হবে, একাজটি দ্রুত
করতে হবে গণসংগ্রাম ও নির্বাচনী সংগ্রামের অভ্যন্তরেই। শ্রমজীবীদের সংগঠন ও
সংগ্রামের বিকাশ বিকল্প রাজনীতির ন্যারেটিভকেও মূলস্রোতে নিয়ে আসবে। পঞ্চায়েতের ও
গ্রামসভার হাতে অধিক ক্ষমতা, আমূল
ভূমি সংস্কার, ক্ষুদ্র ও
মাঝারি উদ্যোগে স্থানীয় বিনিয়োগের সরকারি সুবিধা ও সুরক্ষা এবং সর্বোপরি সমবায়িক
উৎপাদনের বিষয় সংগ্রামী এজেণ্ডায় প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ সংগ্রামের গর্ভে ধীরে ধীরে
স্থান করে দিতে হবে।