অসম মজুরি শ্রমিক ইউনিয়নের প্রচারপত্র
Posted byশ্রমিক-কৃষক-দরিদ্র মানুষ ও এনরেগা
শ্রমিকদের অধিকারের দাবিতে গর্জে উঠুন।
২ এপ্রিল রাজ্যব্যাপী পঞ্চায়েত/ব্লক অফিস
ঘেরাও করুন।।
মজুরি শ্রমিক ইনিয়নের আন্দোলনে সামিল
হোন।।
বন্ধুগণ,
গরিব-মেহনতি মানুষের
বহু সংগ্রামের ফসল এনরেগা আইন বা জবকার্ডের ১০০ দিনের কাজ। পরিবারপিছু বছরে ১০০
দিনের কাজ দেওয়ার গ্যারান্টি দেওয়া হয়েছে এই আইনে । যারা কাজ চাইবে তাদেরকে কাজ
দিতে না পারলে বেকার ভাতা দেওয়ারও বিধান রয়েছে এই আইনে। যেহেতু এটা একটা আইন,
গ্রামীণ জনগণ আইনের আশ্রয় নিয়ে তাদের অধিকার দাবি করতে পারে এবং গ্রামসভার মাধ্যমে
হিসাব দাবি করতে পারে। তাই এই প্রকল্পে চুরি করার সুযোগ কম এবং সেজন্যই রাজ্য
সরকারের প্রশাসন যন্ত্র এনরেগার কাজ করতে আগ্রহী নয়। জিলা থেকে পঞ্চায়েত পর্যন্ত বড়-মাঝারি-ছোট
আমলা-নেতা ও দালালরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এই প্রকল্প থেকেও কিছু অর্থ কামিয়ে
নেওয়ার এবং এব্যাপারে সবচাইতে ভাল উপায় হচ্ছে গ্রামীণ ধনীদের জবকার্ডে বিনা কাজে
এন্ট্রি দিয়ে অর্থ আত্মসাৎ করা এবং ভূয়ো গ্রামসভা দেখিয়ে হিসাব পাশ করা।
রাজ্য সরকারের মন্ত্রী-আমলাদের এই অকর্মণ্যতা ও
অপদার্থতার অজুহাতে কেন্দ্রীয় সরকার ২০১২-১৩ অর্থবছরে এনরেগার খাতে বাজেট বরাদ্দ গতবছরের
৪০ হাজার কোটি থেকেও ৭ হাজার কোটি কমিয়ে দিয়েছে। কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী
অজুহাত দেখিয়েছেন যে গত বছরের ৬ হাজার কোটি টাকা রাজ্য সরকারগুলির হাতে রয়েছে। মন্ত্রী এই সত্য চেপে গেছেন যে কাজ পেতে
আগ্রহী জবকার্ড-হোল্ডারদের গতবছর নিয়মিত কাজ দেওয়া হয়নি এবং তাদের সবাইকে যদি কাজ
দেওয়া হতো তাহলে গতবারের বরাদ্দকৃত অর্থই কম পড়ত। মনে রাখা উচিত যে গতবছরই রাজ্য
সরকারগুলির লেবার বাজেট ছিল ৬০,০০০ কোটি টাকা। এনরেগা খাতে বরাদ্দ অর্থের পরিমাণ
বৃদ্ধি করার বিপরীতে কমিয়ে দেওয়ার কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী ও গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রীর
সিদ্ধান্ত আসলে কেন্দ্রীয় সরকারের গরিব ও শ্রমজীবী বিরোধী চক্রান্তেরই অংগ।
কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের শ্রমিক বিরোধী চক্রান্তের বিরুদ্ধে আমাদের গর্জে উঠতে
হবে।
বিদেশি বহুজাতিক
কোম্পানী, আইএমএফ-ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্ক প্রভৃতি প্রতিষ্ঠান, বড় বড় পুঁজির মালিকদের চাপের
কাছে সরকার যে মাথা ঠুকছে তার প্রমাণ দারিদ্রসীমা (বিপিএল) নিয়ে পরিকল্পনা কমিশনের
ভূমিকা। কেন্দ্র সরকার ‘কৃষি সহায়তা ও খাদ্য নিরাপত্তা’ নিয়ে আমেরিকার সাথে চুক্তি
সই করেছে এবং ফলে কার্গিল-মোসান্ন্টোর মতো আমেরিকার বৃহৎ কোম্পানী আমাদের দেশের
খাদ্য নীতির পরামর্শদাতা হয়ে বসে আছে। শহরে ও গ্রামে যথাক্রমে দৈনিক মাথাপিছু
৩২টাকা ও ২৬ টাকা মূল্যের সামগ্রীর কম ভোক্তাদের দরিদ্র দেখিয়ে পরিকল্পনা কমিশনের
গতবছরের দারিদ্রসীমার সংজ্ঞা নিয়ে যখন সুপ্রিম কোর্ট আপত্তি তুলেছে, তখন এবছর এই
সীমাকে আরও কমিয়ে দিয়ে দরিদ্রের সংখ্যা কমে যাওয়ার দাবি করছে কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা
কমিশন। আসলে দরিদ্রের সংখ্যা কম দেখালে দরিদ্রদের জন্য কম অর্থ ব্যয় করতে হয় এবং
রাজ্য সরকারগুলির বরাদ্দ কমে যায়। এজন্যই কেন্দ্র সরকারের এই চক্রান্ত।
আসাম সরকারের
মন্ত্রী-আমলারা বিদেশি প্রভুদের থেকে নেওয়া ধারের অর্থ লুটেপুটে খেতেই ব্যস্ত।
দরিদ্রদের জন্য অর্থবরাদ্দ নিয়ে তাদের বিশেষ মাথাব্যথা নেই, বরঞ্চ এই অর্থ
দিসপুর-জিলা সদর ও ব্লক অফিসে বসে কীভাবে আত্মসাৎ করা যায় তার ফন্দি-ফিকির করতেই
তাদের বেশি আগ্রহ। তাই রাজ্য সরকার ২৯টি বিভাগ এখনও পঞ্চায়েতের হাতে হস্তান্তর করেনি। রাজ্য ও
কেন্দ্র সরকার বিদেশি বহুজাতিক কোম্পানীর
চাপে গ্রামীণ মানুষ, আমজনতা তথা শ্রমজীবী দরিদ্র মানুষের বিরুদ্ধে চক্রান্তে লিপ্ত
হয়েছে। ইতিমধ্যে শিক্ষা-চিকিৎসা সহ আমজনতার প্রয়োজনীয় সবকিছু কেন্দ্রীয় সরকারের
হাতে কেন্দ্রীভূত করে বড় বড় ব্যাক্তি-মালিকদের মুনাফার জন্য ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে।
এবারের বাজেট বড় বড় ধনী ব্যবসায়ীদের জন্য ৪৫০০ কোটি টাকার কর ছাড় দিয়েছে, অন্যদিকে
৪৫,০০০ কোটি টাকার অতিরিক্ত অপ্রত্যক্ষ করের মাধ্যমে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের
দাম বাড়িয়ে সমস্ত বোঝা দরিদ্র মানুষের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়েছে।
এমতাবস্থায় এনরেগার বছরে ২০০ দিনের কাজ, ন্যূনতম ২০০ টাকা
মজুরি, এনরেগার কাজে ব্যয়বরাদ্দ বৃদ্ধি, নিয়মিত গ্রামসভা, কাজ দিতে না পারলে বেকার
ভাতা, সর্বজনীন রেশন ব্যবস্থা, ও
পঞ্চায়েতের হাতে অধিক ক্ষমতার দাবিতে জোরদার আন্দোলন গড়ে তুলুন, গ্রামে গ্রামে
শ্রমজীবী মানুষের স্বার্থ বিরোধী চক্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ – প্রতিরোধ গড়ে তুলুন
এবং আগামী ২ এপ্রিল এই দাবিতে পঞ্চায়েত অফিস/ব্লক অফিসে ঘেরাও/বিক্ষোভ কর্মসূচীর
মাধ্যমে এই আন্দোলনের সূচনা করুন।
মজুরি শ্রমিক ইউনিয়নের পক্ষে পারভেজ খশ্রু
লস্কর, আলতাফ খান, দক্ষিণা মোহন দাস, শিশির দে, আসাদুর রহমান, ধরিত্রী শর্মা, অরুণ
কর্মকার, মৃণাল সোম ও নির্মল কুমার দাস কর্তৃক প্রচারিত ও শিলচর সানগ্রাফিকস থেকে
মুদ্রিত।
অসম মজুরি শ্রমিক ইউনিয়নের আহ্বান
অসম মজুরি শ্রমিক ইউনিয়নের আহ্বান
বন্ধুগণ,
নতূন চুক্তি মতে, ১ জানুয়ারী,২০১২ থেকে,
বরাক উপত্যকার চা-শ্রমিকদের মজুরি = ৬৮ টাকা, ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার (আসাম)
মজুরি = ৯৪ টাকা। একই রাজ্যের একই শ্রমিকদের মজুরির ক্ষেত্রে এত বৈষম্য কেন? কারণ মালিকপক্ষ
ও আইএনটিইসি অনুমোদিত বরাক চা শ্রমিক ইউনিয়নের বিস্বাসঘাতকতা। ত্রিপাক্ষিক
আলোচনাকে পাশ কাটিয়ে মালিকদের সাথে বরাক চা শ্রমিক ইউনিয়নের শ্রমিক-বিরোধী মজুরি চুক্তি বাতিল করতে হবে।
বাগানে বাগানে শ্রমিক বিরোধী এই চুক্তি জ্বালিয়ে দিন, ‘‘সমান কাজে সমান মজুরি,
বরাক-ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার চা-শ্রমিকদের সমহারে মজুরির” দাবি তুলুন ও ঐক্যবদ্ধ
গণ-আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত হোন।
আমাদের দাবি – (১) বরাক-ব্রহ্মপুত্রে সম কাজে সম মজুরি (২) ভাল
ও পূর্ণ রেশন (৩) চিকিৎসার সুব্যবস্থা (৪) পঞ্চায়েতের কাজে ‘মালিকের
এনওসি প্রথার’ বিলোপ (৫) চা-বাগানে জবকার্ড ও এনরেগার কাজ
সুষ্ঠুভাবে প্রয়োগ করা।
ইনক্লাব জিন্দাবাদ – শ্রমিক ঐক্য জিন্দাবাদ
অসম মজুরি শ্রমিক ইউনিয়ন, বরাক জোনাল কমিটির পক্ষে অরূণ কর্মকার।
0 comments:
Post a Comment